শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা

৭ই জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত
ষ্টাফ রিপোর্টারঃ অবশেষে আগামী ৭ই জানুয়ারি রোজ রবিবার বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। ১৫ই নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যা সাতটার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।
এর আগে বিকাল ৫টার দিকে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কমিশনের সভায় নির্বাচনের দিন-ক্ষণসহ তফসিল ঘোষণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসির ভাষণ একযোগে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এবারই প্রথম তফসিল ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করা হলো। আগে সব সময় রেকর্ড করা ভাষণ প্রচারিত হতো।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০শে জানুয়ারি। সে হিসেবে এই সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯শে জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, এর আগে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। সে হিসাবে গত ১লা নভেম্বর নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে। তাই ২৯শে জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে। এর আগে কমিশনের পক্ষ থেকে একাধিকবার ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে ভোট আয়োজনের প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছিল।
তবে,তফসিল ঘোষণা হলেও সব রাজনৈতিক দল এতে অংশ নেবে কি না তা নিয়ে এখনো সংশয় রয়ে গেছে। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন চলছে। এর মধ্যে সংঘাত-সহিংসতা-নাশকতার ঘটনাও ঘটছে। তবে সংবিধান মেনে এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনের বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যেই ঘোষণা করা হলো এই তফসিল।
এর মধ্যে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির ডাকে বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে পঞ্চম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ। সরকার পদত্যাগ না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে দলটি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন আগ থেকেই।
এ ব্যাপারে সরকারের উদ্দেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এরা (সরকার) জনগণের দাবি উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচন করার জন্য উন্মাদ, উদ্ভ্রান্ত হয়ে গেছে।’
এর আগে একই দাবিতে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলো। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে অনুষ্ঠিত সেবারের ভোটে জিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
আর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ‘নির্বাচনের আগের রাতে তারা ভোট জালিয়াতির’ অভিযোগ তোলে। দলটির নির্বাচিত এমপিরা সংসদে যোগ দিলেও মেয়াদ শেষের আগে তাঁরা পদত্যাগ করেছেন।
বিএনপিসহ বিরোধীদের আন্দোলন ও ক্ষমতাসীন দলের বিরোধপূর্ণ অবস্থানের মধ্যে ফিরে এসেছে সংঘাত। যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র নিঃশর্ত সংলাপের আহ্বান জানালেও বিবাদমান পক্ষগুলো তাতে সাড়া দেয়নি।
তাছাড়া, বেশ কয়েকটি দল রাজনৈতিক বিরোধের মীমাংসা না করে তফসিল ঘোষণা না করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তবে নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করে বলেছে, কোনো দল না চাইলে ভোটে নাও আসতে পারে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে এই নির্বাচন আয়োজনের কোনো বিকল্প ইসির কাছে নেই বলে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
তফসিলের পূর্ণাঙ্গ তথ্যাবলি

ছবি: সংগৃহীত
তফসিল হলো- নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখের একটি আইনি ঘোষণা। নির্বাচন আয়োজন করার জন্য যেসব কাজকর্ম জড়িত রয়েছে, তার সবকিছুর জন্যও একটি সময় বেঁধে দেওয়া হয়। যেমন প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতার মনোনয়নের কাগজ কত তারিখ জমা দেওয়া শুরু করতে পারবেন, সেটি ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০শে নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ঠা ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ই ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ই ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ই ডিসেম্বর, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ই ডিসেম্বর থেকে ৫ই জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৭ই জানুয়ারি।
এছাড়া, তফসিল ঘোষণাকালে সিইসি আরও জানান, এবারের সংসদ নির্বাচনে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

Share This