চৌদ্দগ্রামে গুঁড়িয়ে দেয়া মা ব্রিকস (ইটভাটা) আবারো চালু


নিজস্ব প্রতিনিধি\ চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাশিনগরের বসন্তপুর গ্রামে মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয়ার পর সেটি আবার চালু করা হয়েছে। এতে এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ হয়ে অবৈধ ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, আগে একবার গুঁড়িয়ে দেয়ার পরেও আবার কার্যক্রম শুরু করা ইটভাটা মালিক মো. খোরশেদ আলম কাশিনগর ইউনিয়নের নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকা, ৩ ফসলি জমি নষ্ট এবং পাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির দায়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ভ্রাম্যমাণ আদালত মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ নামের ইটভাটাটি গুঁড়িয়ে দেয়। সে সময় এর মালিক মো. খোরশেদ আলমকে ১ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর অবৈধ ইটভাটাটি সরকারের কোনো ধরনের অনুমোদন না নিয়ে আবার চালু ও নতুন বয়লার নির্মাণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। ইটভাটাটি আবার বন্ধের দাবিতে ওই এলাকার কৃষক ও শিক্ষার্থীরা পরিবেশ অধিদপ্তর, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বসন্তপুর গ্রামে মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী খোরশেদ আলম। তিনি ইটভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অমান্য করে দীর্ঘদিন পরিবেশ দূষণ করে ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য ক্লিনিক, আবাসিক এলাকা, ফসলি জমি, ফলদ ও বনজবাগান থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ এই ইটভাটার কাছেই মনিকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও এতিমখানা, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বসন্তপুর বাজার, সরকারি স্বাস্থ্য ক্লিনিক, ভাটা-লাগোয়া আবাসিক ঘরবাড়ি ও ফসলি মাঠ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
বসন্তপুর গ্রামের কৃষক এনামুল, ফজলু মিয়া ও হুমায়ুন কবির নামে কয়েকজন জানান, ‘ইটভাটা মালিক আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় এই এলাকার কৃষকদের ৩ ফসলি জমি দখল করে ভাটার কার্যক্রম শুরু করেন। এটি চালু করার পর বিষাক্ত ধোঁয়ায় আশপাশের কৃষিজমির ফলন ভালো হচ্ছিল না। পরে সরকার পরিবর্তন হলে এলাকার কৃষকেরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিলে প্রশাসন তদন্ত করে সত্যতা পায়। পরে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ইটভাটাটি গুঁড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে সেখানে ফসলের ফলন ভালো হচ্ছিল। কিন্তু সেটি অবৈধভাবে আবারও চালু করায় আমাদের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।’
বসন্তপুর বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. হানু মিয়া বলেন, ‘৩ ফসলি জমি ছাড়াও স্কুল, বাজার ও মাদ্রাসার পাশে অবৈধ ইটভাটাটি প্রশাসন ভেঙে দেয়ার পরও কীভাবে চালু করেছে, আমরা জানি না। ক্ষতিকর ইটভাটাটি যেন প্রশাসন বন্ধ করে দেয়, সে জন্য অনুরোধ জানাই।’
মিজানুর রহমান নামে ওই এলাকার এক শিক্ষক বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন সরেজমিনে এসে তদন্ত করেছিল। মা ব্রিকস ইটভাটাটি আবারও চালু করায় স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। তাই যত দ্রæত সম্ভব অবৈধ এই ইটভাটা বন্ধ করতে হবে।
অভিযোগের বিষয়ে ইটভাটার মালিক মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ইটভাটাটি চালু করেছি।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজিব বলেন, ‘চৌদ্দগ্রামের কাশিনগর ইউনিয়নে গুঁড়িয়ে দেয়া মা ইটভাটাটি আবার চালু করার কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি। সেটি অবৈধভাবে চালু করলে আবারও আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
