শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১শ’ ৫১টি বিদ্যালয়ের ৮৯টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ  নাঙ্গলকোটে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভবন সংকটে পাঠদান ব্যাহত

১শ’ ৫১টি বিদ্যালয়ের ৮৯টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ নাঙ্গলকোটে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভবন সংকটে পাঠদান ব্যাহত

            সাইফুল ইসলাম॥ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন সংকটে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার ১শ’ ৫১টি বিদ্যালয়ের ৮৯টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।  বিদ্যালয়গুলোতে ভবন সংকটের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করতে হচ্ছে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ হওয়ায় পাঠদানের উপযোগী পর্যাপ্ত কক্ষ না থাকায় শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করতে শিক্ষকদের হিমশীম খেতে হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ের ভবনগুলো থেকে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ বিদ্যালয়গুলোর ২/৩টি ভবনের মধ্যে মাত্র একটি ভবন ব্যবহারের উপযোগী রয়েছে। ওই ভবনের একটি কক্ষে শিক্ষকদের অফিস কক্ষ এবং অন্য দু’টি কক্ষে শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। অন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনগুলোতে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষকদের শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে।

            প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বরাদ্ধকৃত ক্ষুদ্র মেরামত থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের ভবনগুলো সংস্কার করে কোনভাবে পাঠদান অব্যাহত রাখা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে ভবন সংকটের কারণে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রম চালু রাখতে স্থানীয় উদ্যোগে চাঁদা করে নতুন টিনশেড ভবন নির্মাণ করছে। উপজেলার কাদবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল জান্নাত শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে স্থানীয়ভাবে চাঁদা করে একটি টিনশেড ভবন নির্মাণ করেন।

            সম্প্রতি উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে উপজেলার ৪৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনের বিপরীতে নতুন ভবন নির্মাণ এবং শ্রেণিকক্ষ সম্প্র্রসারণ সংক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে প্র্রেরিত তথ্য থেকে জানা যায়, উপজেলার ১শ’ ৫১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৬টি বিদ্যালয়ের ১শ’ ৩টি  ভবনের মধ্যে ৮৯টি ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ও অন্য ৪৫টি ভবন ঝরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে ৪৬টি বিদ্যালয়ের মাত্র ১৩টি ভবন ব্যবহার উপযোগী রয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের তুলনায় ২শ’ ৩৫টি কক্ষের চাহিদার বিপরীতে ব্যবহার উপযোগী/ভালো শ্রেণী কক্ষের সংখ্যা রয়েছে মাত্র ১শ’ ৩৮টি।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- কাদবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, করপাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুজকরা পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শুভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মঘুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদ্রা উষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোহারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীহাস্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ময়ুরা  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাহিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কান্দাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উল্লাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মদনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছুপুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টি নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝাটিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড় ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুয়া সুহৃদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মান্দ্রা  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আটিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাটিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদ্রা উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘোড়াময়দান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পদুয়া শহীদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেরকট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ মেরকট লুধুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,  ধুড়িয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নারায়নকোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাকৈরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টি সাহেব বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হেসাখাল  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেশতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বান্নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

            ছুপুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ রহিমা খাতুন বলেন, বিদ্যালয়ের ৩টি ভবনের মধ্যে একটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। অন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মেরামত করে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করলেও ভবনটির ছাদের পলেস্তারা নিয়মিত খসে পড়ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান নিতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও ভবন সংকটের কারণে এক শিফট চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর থাকলেও জারাজীর্ণ ভবনের ভাংগা জানালা দিয়ে এলাকার বখাটেরা ঢুকে পতাকা স্ট্যান্ডসহ শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সামগ্রী এবং দরজা-জানালা নষ্ট করছে।

            ঝাটিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের পূর্বাংশের ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী ভবনটিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিতে হচ্ছে। এছাড়া অন্য একটি ভবনের মাত্র ২টি কক্ষে কোনভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিতে হচ্ছে।

            টুয়া সুহৃদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবনটির দরজা-জানালা নেই। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। যার ফলে বৃষ্টির মধ্যে টিনশেড ভবনে শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে সীমাহীন কষ্ট ভোগ করতে হয়। এসময় অন্য একটি ভবনের মাত্র ২টি কক্ষে কোনভাবে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।

            নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন মজুমদার বলেন, অনেক বিদ্যালয়ে একাধিক ভবন নেই। আবার অনেক বিদ্যালয়ে মাত্র একটি ভবন শিক্ষার্থীদের পাঠদানের উপযোগী রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবন নিলামে বিক্রি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভবনগুলোতে প্রবেশ করার কারণে ভবনগুলো ধ্বসে পড়ে যে কোন মূহুর্তে বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনগুলোর কারণে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্যহানি ঘটছে। আমরা শিক্ষকরা নিয়মিত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনের তালিকা প্রেরণ করছি।

            উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ভবন সংকটে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনগুলোর তালিকা তৈরী করে সেগুলো নির্মাণের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।

Share This