শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আওয়ামীলীগ আবারো  ক্ষমতায় আসতে চায়: মির্জা ফখরুল ইসলাম

প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আওয়ামীলীগ আবারো ক্ষমতায় আসতে চায়: মির্জা ফখরুল ইসলাম

 ষ্টাফ রিপোর্টার ॥ আগের মতোই জোর করে, প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংসের মাধ্যমে পরপর দু’টো নির্বাচন হাস্যকর বানিয়ে এ সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। আবারও ক্ষমতায় যেতে পাঁয়তারা শুরু করেছে। ডিসির (জেলা প্রশাসক) পরিবর্তন, এসপির (পুলিশ সুপার) পরিবর্তন, পোস্টিং (পদায়ন), প্রশাসনে হাজার হাজার লোককে পদোন্নতি দেয়া শুরু করেছে। একটাই উদ্দেশ্য, তারা ভাবছে আগের মতোই আবার প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে নির্বাচনি বৈতরণী পার হবে। এবার আর সেটা হবে না।

            রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পেশাজীবী সমাবেশে তিনি গত শনিবার দুপুরে এসব কথা বলেন। ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে সাজা দেয়ার প্রতিবাদে এবং ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে’ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপিপন্থি সংগঠন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।

            সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তা ‘শেয়ালের কাছে মুরগি জমা দেওয়া’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যে দায়িত্ব আপনাদের সংবিধান অনুযায়ী দেয়া হয়েছে, সেই কাজ করবেন। অন্যায় আদেশের কাছে মাথা নত করবেন না। জনগণের পক্ষে দাঁড়ান, জনগণ এখন জেগে উঠেছে। এবার জনগণ তার সংগ্রামে, আন্দোলনে জয়ী হবে।

            নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, হাইকোর্টে জামিনের জন্য গিয়েছিলেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। কিন্তু বাসায় যেতে পারেননি। রাস্তার মধ্য থেকেই তাকে তুলে নিয়ে গেছে। এসব করে আটকানো (আন্দোলন) যাবে না। এখন বন্যার পানির মতো মানুষ বিএনপির একদফার আন্দোলনে আসতে শুরু করেছে। মিথ্যা মামলা করে, গায়েবি মামলা দিয়ে, বন্ধুক-পিস্তল দিয়ে গুলি করে, জখম করে, নিহত-গুম করে দেশের মানুষের আকাঙ্খাকে স্তব্ধ করা যাবে না।’

            নেতাকর্মীরা এখনো হামলা-মামলার হয়রানির শিকার হচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, রাতে নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারে না, জামিনে থাকলেও গ্রেফতার করছে। কারাগারে এখন ২৪ ঘণ্টা লকআপে রাখা হচ্ছে। এক ছাত্রনেতার শরীরে দেখলাম ৪৮টি গুলির চিহ্ন, তার হাতে-পায়ে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়েছে-এর নাম গণতন্ত্র? কয়েক বছরে অনেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। সাংবাদিকরা ঠিকমতো ভয়ে লিখতে পারে না।

            তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের সাজার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে মানুষ যখন জেগে উঠেছে সেই সময়ে এ রায় দিয়ে তারা একদফা দাবি থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে চায়। তারেক রহমান আজ শুধু একজন নেতাই নন; তিনি আজ দেশের ১৮ কোটি মানুষের মুক্তির সংগ্রামের নেতা। তাই এসব ফরমায়েশি রায় দিয়ে কোনো লাভ নেই। জনগণ নেমে গেছে। এবার অবশ্যই জনগণের ভোটের নির্বাচন হতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

            একদফার দাবিতে এখন জনগণ ও সব দল একাট্টা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভোটের আগে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে, এটা এখন বিরোধী সব রাজনৈতিক দলই চাইছে। জনগণ এখন একত্রিত, সব রাজনৈতিক দল এক হয়ে গেছে। যারা যুগপৎ আন্দোলন করছে, যারা করছে না তারাও।

            পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র সাংবাদিক কামাল উদ্দিন সবুজ, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের শহীদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স-এ্যাবের প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

Share This