শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক  ৫৯ কিলোমিটারের গলার কাঁটা লাকসাম-বাগমারার ৭ কিলোমিটার

কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক ৫৯ কিলোমিটারের গলার কাঁটা লাকসাম-বাগমারার ৭ কিলোমিটার

            সাদিক মামুন\ কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের ৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার কাজ বাকি রেখে ফোরলেন প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণা করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। যার ফলে ৫৯ কিলোমিটারের পুরো সড়ক চালু হলেও কাজ অসম্পূর্ণ থাকা কুমিল্লা অংশের সদর দক্ষিণের বাগমারা বাজার, লালমাইয়ের শানিচোঁ বাজার ও লাকসামের দৌলতগঞ্জ বাজার এলাকায় প্রতিনিয়ত যানজট ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না এ সড়কে চলাচলকারী গাড়ির চালক ও যাত্রীদের। পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা মনে করছেন নির্বিঘেœ ও নিরাপদ যাত্রার ৫৯ কিলোমিটারের গলারকাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কিলোমিটারের অসমাপ্ত কাজ।

            ঢাকার সঙ্গে কুমিল্লা হয়ে নোয়াখালী, ল²ীপুর ও চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য এলাকাগুলোতে যাত্রী পরিবহণ সহজ, যানজটের ভোগান্তি, যাতায়াতে সময় কমিয়ে আনা এবং পরিবহণ খরচ কমানোর জন্য ২০১৮ সালে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক ফোরলেন প্রকল্প করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সেই মোতাবেক ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। দু’দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন মাসে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সেপ্টেম্বরে এসে আইনি জটিলতার কারণে মাত্র ৭ কিলোমিটার সড়কের কাজ বাকি রেখে প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

   সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষের দাবি, জমি অধিগ্রহণ এবং ক্ষতিপূরণ মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রকল্পের শুরু থেকে ৫৯ কিলোমিটারের মধ্যে কুমিল্লা অংশের লাকসামের দৌলতগঞ্জ বাজার বাইপাস এলাকার ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার, সদর দক্ষিণ উপজেলার শানিচোঁ এলাকার ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার এবং বাগমারা বাজার এলাকার ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার স্থানে প্রকল্পের কাজ আটকে যায়। ফলে কাজ অসমাপ্ত রেখেই সরকারি নির্দেশনায় ফোরলেন প্রকল্প ‘সমাপ্ত’ ঘোষণা করা হয়েছে।

            কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, ফোরলেন প্রকল্পের আওতায় কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া ৩টি এলাকার সমস্যার মধ্যে সদর দক্ষিণ উপজেলার বাগমারা বাজার এলাকায় ফোরলেনের নির্মাণ কাজের এলাইনমেন্ট নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়তে হয় সড়ক বিভাগকে। জনসাধারণের আপত্তি থাকায় ভূমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এলাকায় দুই লেন নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়।

            অপরদিকে লালমাই উপজেলার শানিচোঁ-কাকসার মৌজায় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত আদালতে মামলা চলমান থাকায় এবং লাকসামের দৌলতগঞ্জ বাজার এলাকাতেও ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় ফোরলেন প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি।

            উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া আরো বলেন, প্রকল্পের শুরু থেকেই এই স্থানগুলোতে জটিলতা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৫৩ কিলোমিটার সড়কের সম্পূর্ণ কাজ শেষ করে সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটি ‘সমাপ্ত’ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাগমারা অংশের জটিলতা নিরসনের পথে। কিন্তু প্রকল্পটি যেহেতু সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে তাই আগের প্রকল্পের আওতায় কাজ করা যাবে না। লাকসামের দৌলতগঞ্জ ও লালমাইয়ের শানিচোঁ এলাকার জটিলতাও শেষ হওয়ার পর একসঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া ৩টি স্থানের জন্য নতুন করে আবার একটি প্রকল্প দিতে হবে। এরপর এসব স্থানগুলোতে ফোরলেনের কাজ শুরু করা যাবে। এটি সত্য যে, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের যেটুকু ফোরলেনে উন্নীত হয়েছে তা সবধরণের যানবাহন চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপদ ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। আর যেটুক বাকি আছে সেখানে মানুষ চার লেনের পুরো সুবিধা পাচ্ছেন না। দেখা গেছে, যানবাহন চার লেনে দ্রæত এসে দুই লেনের জায়গাগুলোতে জট লেগে থাকে।

            কুমিল্লা মোটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জামিল আহমেদ খন্দকার বলেন, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ যে ৩টি এলাকার মাত্র ৭ কিলোমিটার রাস্তা আলোর মুখ দেখেনি, সেই এলাকার ২ জন এমপি মন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। তারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে পুরো প্রকল্পটি সমাপ্ত হতে পারতো।

            কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রæপের সভাপতি অধ্যাপক কবির আহমেদ জানান, মাত্র ৭ কিলোমিটারে সরকারের একটি বড় প্রকল্প হোঁচট খেয়ে আছে, এতে প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন না গাড়ির চালক ও যাত্রীরা। কাজ অসমাপ্ত থাকা ৩টি স্থানে প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পড়ছে যানবাহনগুলো। এ সমস্যা সমাধানে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছা ও সরকারের দ্রæত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি। সৌজন্যে: ইনকিলাব

Share This