শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায়   ১০ জনের ফাঁসি ও ৬ জনের যাবজ্জীবন আদেশ

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায়  ১০ জনের ফাঁসি ও ৬ জনের যাবজ্জীবন আদেশ

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ১০ জনের ফাঁসি ও ৬ জনের যাবজ্জীবন আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

            যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের অর্থ জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। গত সোমবার (৫ই ফেব্রæয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস এ রায় ঘোষণা করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন স্থানীয় সাংবাদিকদের নিকট বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

            মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলো- সুবর্ণচরের মধ্যম বাগ্যা গ্রামের রুহুল আমিন, পিতা-খুরশিদ আলম, মো. হাসান আলী, পিতামৃত-আবুল হাশেম, মো. সোহেল, পিতা মৃত-ইসমাইল, মো.স্বপন, পিতা মৃত-আবদুল মন্নান, মো. ইব্রাহিম খলিল, পিতা-আবুল কাশেম, মো. আবুল হোসেন, পিতা মৃত-ছিড়ু মিয়া, মো. সালাউদ্দিন, পিতা-ফকির আহাম্মদ, মো. জসিম উদ্দিন, পিতা-মোতাহের হোসেন, মো. মুরাদ, পিতা-মো: রফিক, মো. জামাল, পিতামৃত- চাঁদ মিয়া।

            অপরদিকে, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলো- মো. হানিফ, পিতা-ইসমাইল, মো. চৌধুরী, পিতা-আবদুল হামিদ, মো. বাদশা আলম, পিতামৃত- আহাম্মদ উল্লাহ, মোশারফ, পিতা- তোফায়েল আহাম্মদ, মো. মিন্টু, পিতামৃত- আরব আলী, (পলাতক), মো. সোহেল, পিতা-আবুল কালাম। ইব্রাহীম খলিল বেচু (২৫), মো. বাদশা আলম বসু (৪০), আবুল হোসেন আবু (৪০), মোশারফ (৩৫), মো. সালাউদ্দিন (৩২), মো. জসিম উদ্দিন (৩২), মো. হাসান আলী বুলু (৪৫), মো. মুরাদ (২৮), মো. জামাল ওরফে হেঞ্জু মাঝি (২৮) ও মো. সোহেল (২৮)। আসামি মো. মিন্টু ওরফে হেলাল (২৮) ঘটনার পর থেকে পলাতক।

            আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. শামছুদ্দিন বলেন, ‘আলোচিত এ মামলার রায় উপলক্ষে আদালত প্রাঙ্গণে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আগেই সংশ্লিষ্ট সবাইকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের কারাগার থেকে কোর্টে আনা হয়েছে। এর আগে গত ২৯শে নভেম্বর অধিকতর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য ১৬ই জানুয়ারি দিন ধার্য করেন বিচারক। তবে রায় লেখা শেষ না হওয়ায় রায় ঘোষণার জন্য ৫ই ফেব্রæয়ারি তারিখ পুনর্র্নিধারণ করেন আদালত।

            মামলার নথি থেকে জানা যায়, বিগত ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে স্থানীয় রুহুল আমিনের নেতৃত্বে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়।

            ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর ভোটের দিন সুবর্ণচর উপজেলায় নিজের ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে ১০-১৫ জন লোক তাকে ঘিরে ধরে তাদের পছন্দের প্রতীকে সিল মারতে বলেছিল। এ নিয়ে ওই লোকদের সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় তারা। ওই দিন রাত ১২টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত তাদের বাড়িতে গিয়ে তাকে, তার স্বামী ও চার সন্তানকে বেঁধে ফেলে। এরপর দুর্বৃত্তরা বেধড়ক পেটায় এবং টেনেহিঁচড়ে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। ওই নারীর অভিযোগ, কয়েকজনকে চিনে ফেলায় তারা গলা কেটে হত্যা করতে চেয়েছিল। তিনি হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করে জীবন ভিক্ষা চাইলে দুর্বৃত্তরা হত্যা না করে ভোর ৫টার দিকে তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। সকালে প্রতিবেশীদের সহায়তায় ওই নারীকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

            ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে চরজব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭শে মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক জাকির হোসেন।

            ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, ঘটনার পর থেকে তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে কতিপয় ব্যক্তি তাদের বাড়ির সামনে মহড়া দিচ্ছে প্রতিদিন। বিষয়টি তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। কিন্তু কার্যকর কোনো প্রতিকার পাননি।

            এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আমাকে জানায়নি কেউ। জানালে অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা দেয়া হবে। সুত্র: কুমিল্লার কাগজ

Share This

COMMENTS