সরকারের সঙ্গে মিলে দেশ পরিচালনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জিএম কাদের
সরকারের সঙ্গে মিলে দেশ পরিচালনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেছেন, সবাই মিলে দেশ পরিচালনা করব, কিছুদিনের জন্য তো অনেক দেশে হয়ে থাকে কোনো ক্রাইসিস হলে। তবে এরকম কোনো অফার আমরা পাইনি। যদি সেরকম কোনো অফার আসে তখন সবকিছু বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
শনিবার বিকালে রংপুর জেলা ও মহানগর দলের কর্মিসভায় যোগদানের পূর্বে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। এরপর তিনি নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির কর্মিসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
সরকারের মন্ত্রিসভায় যাওয়ার বিষয়ে কোনো প্রস্তাব আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, সংসদে বিরোধী দল সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। আর সরকার মানে হলো সম্পূর্ণ মন্ত্রিসভা একত্রিতভাবে সরকার। যদি আমরা অ্যাকাউন্টেবল করতে চাই, তার (সরকার) দোষ-ত্রুটি তুলে ধরতে চাই, তাহলে তো আমি মন্ত্রিসভার সদস্য এটা সম্ভব না।
জিএম কাদের বলেন, সংসদ মোটামুটি গতানুগতিকভাবেই চলছে। যেহেতু সংসদে বিরোধী দলের সংখ্যায় আমরা কম। তাই সরকারের পক্ষেই একতরফাভাবে বেশিরভাগ কথাবার্তা হচ্ছে। সংসদ আরও সুন্দর কার্যকর হয় যদি উত্তপ্ত হয়। যদি উভয়পক্ষই সমান সমানভাবে কথাবার্তা বলে, তাহলেই সংসদটা সত্যিকার অর্থে কার্যকর এবং প্রাণবন্ত হয়। সেটা এখন পর্যন্ত হয়নি।
তিনি বলেন, মিয়ানমার আর্মির সঙ্গে আরাকান আর্মির চলমান যুদ্ধে বাংলাদেশে নতুন সমস্যার সূচনা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তবে দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে এবং বাংলাদেশ বিপদমুক্ত হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
জিএম কাদের বলেন, মিয়ানমারের সৈন্যরা যেহেতু ফিজিক্যালি আমাদের দেশে প্রবেশ করছে, এটা নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন আছে। এ নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা এ বিষয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। যেটাই হোক না কেন, এ বিষয়ে দেশবাসীর কাছে সুস্পষ্টভাবে বিষয়টি তুলে ধরা দরকার।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, এখন যারা দেশে ঢুকছেন, সংখ্যায় খুব বেশি নয়। তবে বিগত সময়ে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা দেশে প্রবেশ করেছে। আরও যদি প্রবেশ করে কিংবা আসা শুরু হয় তাহলে আমাদের সমস্যা তৈরি করবে।
জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ও সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে জিএম কাদের বলেন, রাজনীতি ও দল করার অধিকার সবার রয়েছে। যারা এসব করছে, তারা কেউ জাতীয় পার্টির নয়। তাছাড়া এসব কাউন্সিল আইনগত কোনো ভিত্তি রাখে না। এজন্য এ বিষয়ে আমাদের কোনো মতামত নেই।
এর আগে সকালে তিনি রংপুর নগরীর সেনপাড়াস্থ স্কাইভিউ বাসভবনে দলীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এরপর দুপুরে রংপুর নগরীর সাহেবগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষ্যে দোয়া ও আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি।
এ সময় আগামীতে শিক্ষারমান বাড়ানোসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধে সরকারের প্রতি দাবি তোলা হবে বলে জানান বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় সরকারদলীয় ছাত্রনেতারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন।’
অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের শিক্ষা খাতে আবকাঠামোগত যথেষ্ট উন্নয়ন হলেও শিক্ষারমান বাড়ছে না। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক পিছিয়ে আছে।’
এ সময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাফিউর রহমান শাফি, কেন্দ্রীয় সদস্য ও রংপুর মহানগরের সিনিয়র সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।