শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রোজার আগেই বাজার তদারকি আবশ্যক

            হুমায়ুন কবীর রুস্তম\ মুমিনদের দ্বারে কড়া নাড়ছে মুসলিম জাহানের অতি পবিত্র মাস ‘মাহে রমজান’। এ মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টি অর্জনে ইবাদত বন্দেগিতে নিজেদের সমর্পণ করে। দিন-রাত নামাজ, রোজাসহ বিভিন্ন ইবাদতে মত্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকা মুমিনদের শরীরের ঘাটতি মেটাতে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্য। পুষ্টির এই চাহিদা মেটাতে মুসলিম বিশ্বের ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে নানারকম মূল্য-ছাড় দিয়ে থাকে। কিন্তু মুসলিম দেশ হওয়া সত্তে¡ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট একদমই আলাদা। পবিত্র এই মাসটি এলেই দেখা দেয় নানা ধরনের খাদ্য সংকট। বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। কৃত্রিম সৃষ্ট এই খাদ্য সংকটের সঙ্গে বাঙালিরা খুব ভালোভাবেই পরিচিত। কারণ প্রতি বছর তারা এই সংকটের সম্মুখীন হয়ে থাকে। তাই মাহে রমজান একদিকে যেমন খুশির বন্যা বয়ে আনে অন্যদিকে নিয়ে আসে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

            অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের প্রেক্ষাপট একটু বেশিই শোচনীয়। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধসহ বিভিন্ন দেশের যুদ্ধাবস্থা বিশ্বের অর্থনীতির চাকা থামিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীজুড়েই সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ অর্থ ও খাদ্য সংকট। যার ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। দু’বছর ধরে ধাপে ধাপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। প্রতিটি পণ্যের দাম রেকর্ড পরিমাণ। লাগামহীন এসব পণ্য এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। যা তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। আসছে রমজানে এই ‘মূল্য-বৃদ্ধি’ যে চরম রূপ ধারণ করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ এ দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর হাত ধরে। যাদের মূল লক্ষ্যই রমজানে অধিক মুনাফা অর্জন। তাই তারা অসৎ উপায় অবলম্বন করে। রমজান এলেই সব ধরনের নিত্যপণ্য ও খাদ্যসামগ্রী মজুত করে ফেলে। দেশে অপ্রতুল খাদ্য উৎপন্ন হলেও এই মজুত কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখে। ফলে দেখা দেয় ভয়াবহ খাদ্য সংকট। মানবসৃষ্ট এই কৃত্রিম খাদ্য সংকটের কারণে বাজারে চাহিদার চেয়ে জোগান নিম্নমুখী হয়। অর্থনীতির ভাষায়, জোগানের চেয়ে চাহিদা বেশি হলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। আর এটাকেই পুঁজি করে খুচরা ব্যবসায়ীরা অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করে। আর খুচরা ব্যবসায়ীদের হাত ধরেই এই অর্থ যায় সিন্ডিকেটদের পকেটে।

            দেশে কয়েক বছর ধরেই সিন্ডিকেটদের প্রকটতা বেড়েই চলেছে। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে চাল, ডাল, ডিম, আলু, তেল, চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়েছে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে। যা দেশের কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কিন্তু সরকার ও প্রশাসনের নজর কাড়লেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং নতুন করে চিনি ও খেঁজুর আর মাংসের বাজার আরো একধাপ এগিয়েছে। আসছে রমজানে এমন ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে সাধারণ মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার হারাবে। বঞ্চিত হবে আমিষসহ পুষ্টিজনিত খাবার থেকে। বিশ্লেষকদের মতে, আসছে রমজানে উচ্চমূল্যের বাজার বিশাল অঙ্কের একটি গোষ্ঠীকে পুষ্টিহীনতায় ফেলবে, ফলে দেখা দেবে নানারকম অপুষ্টিজনিত রোগ। তাই স্বল্প আয়ের এই মানুষগুলোকে বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। রমজানে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিশেষ করে মাছ, মাংস, ডিম, চাল, ডাল, সবজি, তেল, আলু, চিনি, আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সরকার কর্তৃক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে। যেন তা স্বল্প আয়ের মানুষদের হাতের নাগালে থাকে। আর এই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সবার আগে সিন্ডিকেট ভাঙা আবশ্যক। তাই অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন কিছুতেই পণ্য মজুত করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। আর এই পদক্ষেপটি গ্রহণ করতে হবে রমজান আসার আগেই। এখনই বাজার তদারকি শুরু করা আবশ্যক। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা রমজানকে সামনে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে; কিন্তু এটি চোখে পড়ার মতো নয়। যদি সরকার এই সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নেয় এবং বিশেষ কয়েকটি ইউনিট গঠন করে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে তাহলে হয়তো আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি লাভ করা সম্ভব। শুধু তাই নয়; জনগণকেও এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আর ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলতে চাই, ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসা একটি মহৎ পেশা। হাসরের ময়দানে সাধু ব্যবসায়ীদের স্থান হবে শহীদের সঙ্গে আর অসাধুদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। তাই আসুন অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন না করে একটি ক্রেতাবান্ধব বাজার গড়ে তুলি। লেখক: শিক্ষার্থী, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

Share This