রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য

মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য

Views

            মুহাঃ জাকির হোসাইনঃ রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। মহিমান্বিত এ মাসে শেষ ভাগে সর্বস্তরের তৌহিদী জনতাকে জানাই ঈদুল ফিতরের অগ্রিম শুভেচ্ছা; ঈদ মোবারক। কুরআন-হাদিস, দর্শন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রমাণিত হয়েছে, রোজা তথা সিয়াম সাধনা মানব জাতির জন্য ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্টীয় জীবনে প্রভূত কল্যাণ বয়ে আনে। এমনিভাবে রমজানের শেষে মুসলিম জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব ঈদুল ফিতর মুসলিম সমাজে প্রতিষ্ঠা করে সাম্য-সৌহার্দ। তাই নিঃসংশয়ে বলা যায় যে, মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতর মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ এবং এর তাৎপর্য অপরিসীম। কুরআন-হাদিসের আলোকে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা রাখছি।

            রমজান আরবি ‘রমাদান’ এর বহুল প্রচলিত রূপ। রমাদান শব্দটি রমদ হতে উৎপত্তি যার অর্থ জ¦াািলয়ে দেয়া, ছাই করে ফেলা। অর্থাৎ রমজানের একনিষ্ঠ ইবাদতের মহিমায় পূর্বের পাপ রাশি ভষ্ম করা তথা মাফ করে নেয়া। রমজানের রোজাকে কুরআনের ভাষায় সিয়াম ও সাওম বলা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, সাওম শব্দের বহুবচন সিয়াম।

            সাওম আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ উপবাস, বিরত থাকা। ইংরেজিতে বলা হয় ঋধংঃরহম; ঐড়ষু ভধংঃরহম।

পরিভাষায়, সুবহি সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে খাদ্য-পানীয় ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি হতে বিরত থাকাকে সাওম বা রোজা বলে। মজানের রোজা ইসলামের অন্যতম ভিত্তি: ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি। রোজা এর অন্যতম একটি ভিত্তি। যেমন: হাদিসে এসেছে,  ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সা. ইরশাদ করেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। ১. আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসুল- এ কথার স্বাক্ষ্য প্রদান করা। ২. সালাত কায়েম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হজ্জ  সম্পাদন করা এবং ৫. রমজানের সিয়াম (রোজা) পালন করা। মুসলিম; ৪৫১৪

            মহান আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার।” (২:১৮৩)। রমজান মাসে অপর মাসের তুলনায় মুমিন-মুসলিম বেশি ইবাদত করে অভ্যস্ত হয়ে যায় যা পরবর্তী সময়ে ইবাদতে উদ্বুদ্ধ হয়। যেমন: হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল কাজ করবে, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল।

            হাদিস শরীফে এসেছে, রাসুল সা. ইরশাদ করেন,  যে ব্যক্তি রমজান মাসে ইমানসহ সাওয়াব পাওয়ার আশায় একনিষ্ঠভাবে রোযা রাখবে এবং রাতে জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুণাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। বুখারি: ৩৭        হাদিসে এসেছে, রাসুল সা. ইরশাদ করেন, এটা এক মাস যার প্রথম অংশে রহমত, মধ্য অংশে মাগফিরাত এবং শেষাংশে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত। মিশকাতুল মাসাবীহ: ১৯৬৫।

            সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ধৈর্য্য অর্জিত হয়। যেমন: রাসুল সা. ইরশাদ করেন, এ মাস সবরের (ধৈর্য্যের) মাস; সবরের প্রতিদান জান্নাত। মিশকাতুল মাসাবীহ: ১৯৬৫

            রমজানে মুমিন মুসলিমগণ পরস্পরের মধ্যে আপ্যায়ন ও দান অনুদানের মাধ্যমে সম্প্রীতি-সৌহার্দের সেতু বন্ধন স্থাপিত হয়। যেমন: হাদিসে এসেছে, রাসুল সা. ইরশাদ করেন, এ মাস সহমর্মিতার মাস।

            রাসুল সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্ধন করেনি, তাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। বুখারী: ১৯০৩

রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজেই দিবেন: রোজা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাখা হয়। যার মধ্যে কোনো লৌকিকতা নেই। তাই রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজেই দিবেন। যেমন: রাসুল সা. ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, রোযা আমার জন্য, আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। বুখারি: ১৯০৪

            মহান আল্লাহ বলেন: রমজান মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াত স্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী হিসেবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম তথা রোজা পালন করে। আল কুরআন (২:১৮৫)

            কুরআন সর্বকালে মানব জাতির দিক নির্দেশিকা তথা সংবিধান। মহান আল্লাহ বলেন, তিনি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন সত্যতার সাথে; যা সত্যায়ন করে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের। নাযিল করেছেন তাওরাত ও ইঞ্জিল, এ কিতাবের পূর্বে, মানুষের হেদায়াতের জন্যে এবং অবতীর্ণ করেছেন মীমাংসা হিসেবে। নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহর আয়াত সমূহ অস্বীকার করে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী, প্রতিশোধগ্রহণকারী। আল কুরআন (৪:৩-৪)

            হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূল স. রমজান মাসে ই‘তিকাফ করেছেন। ই’তিকাফের বিধান হচ্ছে পার্থিব কাজ ত্যাগ করে রোজাসহ মসজিদে আবদ্ধ থাকা যার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দাহর সুনিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ই’তিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মুসলিম সমাজের প্রত্যেক প্রাপ্ত, সুস্থ ব্যক্তি এ ইবাদত করা প্রয়োজন। সমাজের কেউ যদি তাদের মসজিদে ই’তিকাফ না করে তাহলে সকলেই এর দায়ভার নিতে হবে। কেননা, ইহা রাসুল (সাঃ) এর অন্যতম সুন্নাত। তবে সমাজের কতিপয় সালাতুল জানাযার ন্যায় সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে এ ইবাদতটি করলে অন্যরা দায়ভার মুক্তির আশা করা যায়। রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা লাইলাতুল ক্বদরের ফযিলত লাভের কারণে এর গুরুত্ব বেড়ে যায়। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সাঃ) রমজান মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন। তিনি তাঁর উফাত পর্যন্ত এভাবে ইতিকাফ করতেন। অতপর তাঁর স্ত্রীগন তাঁর পরে ইতিকাফ করেন। (বুখারী)

            কেউ ইতিকাফের মানত করলে তা তারজন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। অন্যথায় তা পালন করা সুন্নাত। পুরুষগণ মসজিদে ইতিকাফ করবেন। আর মহিলারা তাদের হুজরায় ইতিকাফ করবেন। পবিত্র কুরআন মাজিদে এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক বলেন: আর যতক্ষন তোমরা ই’তিকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষন পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশোনা। (সূরা আল বাক্বারা-১৮৭)। ইতিকাফ দশদিন করাই সুন্নাত। তবে নফল হিসেবে দু’একদিনের জন্যও ইতিকাফ করা যায়।

            রাসূল স. ইরশাদ করেন: এতে (রমজানে) রয়েছে এমন একটি রাত যা হাজার বছর চাইতে উত্তম। লাইলাতুল ক্বদরের মর্যাদা এ শব্দ দ্বয়ের মধ্যে অনুমেয়। “লাইলাতুন ও ক্বদর” শব্দ দু’টি আরবি। লাইলাতুন শব্দের বাংলা প্রতি শব্দ হচ্ছে রাত্রি আর “ক্বদর” অর্থ সম্মানিত, নির্ধারণ, মহিমান্বিত ইত্যাদি। সুতরাং লাইলাতুল ক্বদর অর্থ মহিমান্বিত রাত্রি।

            ইসলামী দৃষ্টি কোনে মহাগ্রন্থ আল কুরআন যে রাত্রে অবতীর্ণ হয়েছে তাকে লাইলাতুল ক্বদর বলা হয়। লাইলাতুল ক্বদরের মর্যাদা স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনুল কারীমের সূরা আল ক্বদরেই উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন: “লাইলাতুল ক্বাদরে খাইরুম মিন আলফে শাহরিন।” অর্থাৎ- ক্বদরের রাত্রি হাজার মাসের চাইতেও উত্তম। কুরআনুল কারীম নাযিল হওয়ার কারণেই এই রাতের মর্যাদা বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ পাক বলেন: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন) এক বরকতময় রজনিতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। (সূরা- দোখান-৩-৫)

            হযরত আনাস বিন মালিক (রা:) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, রমজান মাস শুরু হলে রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন: তোমাদের নিকট এমন একটি মাস উপস্থিত হয়েছে, এতে রয়েছে এমন এক রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ থেকে যে ব্যক্তি বঞ্চিত হলো সে সমস্ত কল্যাণ হতে বঞ্চিত হলো। কেবল বঞ্চিতরাই তা হতে বঞ্চিত হয়। (সুনানে ইবনে মাযা-১৬৪৪)

            লাইলাতুল ক্বদরের সুনির্দিষ্ট তারিখ বলা মুসকিল। তবে তা রমজান মাসের শেষ দশকে রয়েছে এ ব্যাপারে অসংখ্য হাদীস বিবৃত হয়েছে। তম্মধ্যে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো। হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেছেন: তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান কর। (বুখারী-২০১৭)। হযরত ইবনু আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন: তোমরা তা (লাইলাতুল ক্বদর) রমজানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর। লাইলাতুল ক্বদর শেষ দিক হতে গণনায়) নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাতে অবশিষ্ট থাকে। (বুখারী-২০২১)। হযরত মুযাবিয়া ইবনু আবু সুফিয়ান (রা:) হতে বর্ণিত: তিনি নবী কারীম (সা:) হতে বর্ণনা করেন, তিনি লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে বলেছেন: লাইলাতুল ক্বদর সাতাইশের রাতে। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূল (সা:) বলেন, আমাকে লাইলাতুল ক্বদর দেখানো হয়েছিল পরে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাত সমূহে তা অনুসন্ধান কর। (ইবনে মাজাহ-১৭৬৬)

            যেহেতু এ রাতের মর্যাদা হাজার মাসের চাইতে উত্তম সেহেতু এ রাতে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকা মুমিনের কর্তব্য। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ঐকান্তিকতায় সমগ্ররাত জাগ্রত থেকে সালাত, যিকির ও দোয়ার মাধ্যমে কাটানোই বুদ্ধিমান মুসলিমের কাজ।

            হাদীসে উল্লেখ রয়েছে- হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেন: যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকির আশায় ক্বদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত্রি জাগবে তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারী-৩৫)। হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা:) আমি যদি ক্বদরের রাত পেয়ে যাই তবে কি দু’য়া পড়ব? তিনি বললেন; “আল্লাহুমা ইন্নাকা আফউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নী।” অর্থ- হে আল্লাহ ! তুমি ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতেই পছন্দ কর। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও।” (ইবনে মাজাহ-৩৮৫০)

            এই মহিমান্বিত রাতে কতিপয় দিকভ্রান্ত লোক আতশ বাজি, আলোক সজ্জা, মাজারে-মাজারে ঘোরা তথা ইসলামী শরীয়া ও সাংষ্কৃতি বিরোধী কর্মকান্ড হয়, যা মুসলমানদের পরিহার করা ঈমানী দায়িত্ব। মহান আল্লাহর মহা নিয়ামত মাহে রমজান। মাহে রমজানে মুমিনের জন্য শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শণ এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত লাইলাতুল ক্বদর। এ মাসে বিশেষ করে লাইলাতুল ক্বদর পাওয়ার প্রত্যাশায় রমজানের শেষ দশকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে আমল করে মহান রবের নিকট মুসলিম জাতি শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে হবে।

            মুমিন ও রোজাদার মুসলিম উম্মাহর ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে ঈদুল ফিতর তথা ঈদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অবর্ণনীয়। মুসলিম উম্মাহর প্রাপ্ত-অপ্রাপ্ত প্রায় সকলেই জানে ঈদ মানে খুশী। মাহে রমজানের পরবর্তী শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ। আর জিলহাজ্জ মাসের দশম তারিখ হচ্ছে ঈদুল আযহা। এ দুই ঈদে আনন্দ উপভোগ করার জন্য কুরআন-সুন্নাহর দিক নির্দেশনা রয়েছে। যেমন: কুরআন মাজিদের সূরা আরাফের ৩১নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে আদম সন্তানগণ, তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজ-সজ্জা (পোষাক) পরিধান করে নাও, খাও এবং পান কর অপচয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করে না।”

অপর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, বিগত দিনে তোমরা যা প্রেরন করেছিলে, তার প্রতিদানে তোমরা খাও এবং পান কর তৃপ্তি সহকারে। (সূরা আল হাক্কাহ-২৪)। হযরত বুরাইদা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) ঈদুল ফিতরের দিনে খাদ্য গ্রহণ না করে বের হতেন না। আর ঈদুল আযহার দিনে ঈদের নমাাজের আগে কিছু খেতেন না। ঈদের নামায হতে ফিরে এসে তাঁর কুরবানীর পশুর গোশত থেকে ভক্ষন করতেন। (তিরমিযি)

            মুসলমানদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত দু’টি আনন্দের দিন হলো- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। ঈদুল ফিতর রমজানের শেষে আসে। মুসলিম জাতি দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর এ ঈদ উদ্যাপন করে। ঈদুল ফিতর সম্পর্কে বলা হয়েছে- ঊরফঁষ ঋরঃৎ রং ঃযব মৎবধঃবংঃ ৎবষরমরড়ঁং ভবংঃরনধষ ড়ভ গঁংষরসং. ঞযবু ড়নংবৎাবফ রঃ ধভঃবৎ জধসধফধহ. অর্থ্যাৎ ঈদুল ফিতর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। যা তারা রমজান মাসের পরে উদযাপন করে। রমজানের পরে ঈদ হওয়ার কারণে এর গুরুত্ব অপরিসীম। রমজানের রোজা মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধি, আত্ববিবেচনা এবং আত্ব উপলব্ধির অপূর্ব সুযোগ। তাই বলা যায় যে, ধনী-গরিবের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের সেতু-বন্ধনই হচ্ছে রমজান এবং তৎপরবর্তী ঈদুল ফিতর।

            ঈদে হালাল উপাদেয় খাবার ও পানীয় গ্রহণ করার জন্য ইসলাম অনুপ্রেরণা দেয়া হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন হাদিসে ঈদের দিন শরীরচর্চা ও বিনোদনের জন্য খেলাধূলা ও আনন্দ উপভোগের জন্য রাসুল (সাঃ) উৎসাহ দিয়েছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বিনোদনের নামে বেহায়াপনা সমাজকে গ্রাস করেছে। ঈদ উপলক্ষে বেড়ানোর নামে আমাদের মেয়েরা অর্ধউলঙ্গ হয়ে দেহ, পোষাক ও অলংকার প্রদর্শন করে যা শরীয়ত সম্মত নয়। তারা বেড়াতে কিংবা বাইরে গেলে তাদের দেহ আবৃত তথা মাথা, চুল, গলা, ঘাড় ঢেকে যেতে হবে। অন্যথায় তা কবীরা গুণাহে লিপ্ত হওয়ার মধ্যে গণ্য হবে। অধ্যাধুনিকতার নামে অপসংস্কৃতিতে লিপ্ত হওয়া যাবে না। ফলশ্রæতিতে আমাদের উপর মহামারীর ন্যায় গজব আসতে পারে।

            পরিশেষে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট আরজ করছি, তিনি যেন আমাদের সিয়াম-কিয়ামসহ রমজানের যাবতীয় ইবাদত বন্দেগী কবুল করেন। ঈদ বয়ে আনুক অনাবিল সুখ-শান্তি। আসুন আমরা মাহে রমজানের মহিমায় উজ্জিবিত হই। কুরআন- সুন্নাহর আলোকে ইনসাফ ও মমতা সমৃদ্ধ পরিবার ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে দৃপ্ত শপথ করি। ঈদের ন্যায় হোক আমাদের প্রতিদিন। মহান রাব্বে কারিমের নিকট কামনা করছি আমাদের দেশের সমৃদ্ধি এবং নিপীড়িত মুসলিম উম্মার মুক্তি।

লেখক: উপাধ্যক্ষ: বাঙ্গড্ডা ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা, নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা।

Share This