শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চাটখিল, সোনাইমুড়ী ও সুবর্ণচর উপজেলার কয়েকটি সড়ক  নির্মাণ ও পুননির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

চাটখিল, সোনাইমুড়ী ও সুবর্ণচর উপজেলার কয়েকটি সড়ক নির্মাণ ও পুননির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

            ফয়জুল ইসলাম জাহান\ নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী, চাটখিল ও সুবর্ণচর উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) আওতায় কয়েকটি নতুন রাস্তা পাকাকরণ ও পুরোনো সড়ক সংস্কার কাজে শিডিউল বহির্ভূতভাবে ব্যাপক অনিয়ম করার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে, চাটখিল উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের এম হোসেন পাটোয়ারী মার্কেট থেকে ধর্মপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়ক। ধর্মপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে চিল্লার দীঘির পাড় সড়ক। এখানে একটি প্যাকেজে পাঁচটি সড়কের এক হাজার ৯৫৪ মিটার নতুন সড়ক পাকাকরণ কাজে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

            বিভিন্নজনের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এক হাজার ৯৫৪ মিটার নতুন সড়ক পাকাকরণের কাজের কার্যাদেশ পান মেসার্স রিয়া অ্যান্ড স্বাদ ব্রাদার্স। এটি ঠিকাদার বাহার কোম্পানির মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ অনুযায়ী জিএনপি-৩ প্রকল্পের কাজটির প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কিন্তু রাস্তা নির্মাণে একেবারে নিম্নমানের ইট, খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সড়কে চারটি কালভার্ট নির্মাণেও একেবারে নিম্নমানের ইট ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্ত ঠিকাদার বাহার কোম্পানি এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছেন যে, তারা ওয়ার্ক ওর্ডার মতই সব কাজ করেছেন।

            অপরদিকে, সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আমকি থেকে থানারহাট পর্যন্ত ২৯৭০ মিটার সড়ক সংস্কার কাজে একেবারে নিম্নমানের এজেন্ট, ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। গ্রেটার নোয়াখালী প্রজেক্ট প্রকল্পের এ কাজটি করছে মেসার্স এম এন ট্রেডার্স। এর প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কাজটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় ঠিকাদার মাহমুদুল হক রনি। ঠিকাদার রনি বলেন, দুই গাড়ির খোয়া খারাপ ছিল। পরে তাদের বলার পরে ভালো সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হয়।             এছাড়া, জেলার সুবর্ণচর উপজেলায় চারটি নতুন সড়ক পাকাকরণে ও দু’টি সড়ক সংস্কারে শিডিউল বহির্ভূতভাবে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংস্কার সড়কগুলো হলো- সুবর্ণচর উপজেলার থানার হাটের স্টিল ব্রিজ থেকে হাজীপুর সড়ক। এ সড়কটির ২ হাজার ৫০০ মিটার সড়ক সংস্কারে একেবারে নিম্নমানের এজেন্ট, ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে। জিওবি ম্যানটেনেজ প্রকল্পের এ কাজটি করছে জেলার কোম্পানীগঞ্জের ঠিকাদার মো. মাওলা। তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স জননী এন্টারপ্রাইজ। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ঠিকাদার মাওলা বলেন, একটি গাড়ির খোয়া ভুলে ইটভাটা থেকে দেয়া হয়। এ ছাড়া পুরো সড়কে ভালো ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়।

আসলে সদর-সুবর্ণচর সীমান্ত থেকে থানার হাট স্টিল ব্রিজ পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৫৬ মিটার সড়ক সংস্কারে একেবারে নিম্নমানের এজেন্ট, ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি পিচ ঢালাইয়ে নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। নিয়ম অনুসারে সড়ক পরিষ্কার করে প্রাইম কোট দিয়ে পিচ ঢালাইয়ের কাজ হওয়ার কথা। তা না করেই শেষ করা হয়েছে কার্পেটিংয়ের কাজ। জিওবি ম্যানটেনেজ প্রকল্পের কাজটি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাহীন ট্রেডার্স।

সড়কে কাজের তদারকিতে থাকা সুবর্ণচর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের ল্যাব টেকনিশিয়ান সাইফুল ইসলাম দুলাল জানান, কাজটি করছে ঠিকাদার শিহাব উদ্দিন শাহীন। তবে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কল করে কাজের মান সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদার শিহাব উদ্দিন শাহীন কাজটি তিনি করছেন না বলে জানান। তবে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্র নিশ্চিত করে কাজটি করছেন ঠিকাদার শিহাব উদ্দিন শাহীন।

            সুবর্ণচর উপজেলায় নিম্নমানের কাজ হওয়া নতুন সড়কগুলো হলো- উপজেলার চরকার্ক ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আনছল হক সড়ক। এ সড়কের এক হাজার মিটার নতুন রাস্তা নির্মাণে একেবারে নিম্নমানের এজেন্ট, ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে। জিএনপি-৩ প্রকল্পের কাজটি ১ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মনির আহমদ ট্রেডার্স। ঠিকাদার মনির চেয়ারম্যান অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, সব অভিযোগ বানোয়াট।

            করকার্ক ইউনিয়নের নোমানিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার সামনের জাফানি সেন্টার থেকে এমপি প্রজেক্ট পর্যন্ত এক হাজার মিটার সড়ক নির্মাণ কাজে নিম্নমানের এজেন্ট, ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে। জিএনপি-৩ প্রকল্পের কাজটি প্রায় ৭৫-৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করছে ফিরোজ আহমদের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রোকেয়া কনস্ট্রাকশন। এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ঠিকাদার ফিরোজের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

            এছাড়া, উপজেলার ১ নম্বর চরজব্বর ইউনিয়নের ফিরিঙ্গি চৌরাস্তা থেকে নুরু পাটোয়ারী হাটের আগ পর্যন্ত এক হাজার মিটার সড়ক নির্মাণে একেবারে নিম্নমানের এজেন্ট, ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে। জিএনপি-৩ প্রকল্পের কাজটি বাস্তবায়ন করছেন ঠিকাদার হুমায়ন। এ বিষয়ে ঠিকাদারের প্রতিনিধি কিরণ দাবি করেন, উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের কর্মকর্তারা দেখেছেন আমরা মানসম্পন্ন সামগ্রী দিয়ে কাজ করছি। তাদের কোনো অভিযোগ নেই।

            সুবর্ণচরের চর আমান উল্যাহ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাটাবুনিয়া গ্রামের আনছার আলীর বাড়ির দরজা থেকে ছিদ্দিক মেম্বারের বাড়ির দরজা পর্যন্ত ৪২৫ নতুন সড়ক পাকাকরণে নিম্নমানের এজেন্ট, ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদার মো. মঞ্জুর রহমান।

            এ ব্যাপারে ঠিকাদার মো. মঞ্জুর বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় থেকে কোনো অভিযোগ নেই। আমি ভালো কাজ করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাটখিল উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাহাত আমিন পাটোয়ারী জানান, নিম্নমানের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।

            সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর নিম্নমানের ইটের খোয়া অপসারণ করে নেয়া হয়েছে।

            সুবর্ণচর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, নিম্নমানের কাজ করে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

Share This