এনজিও ঋণের চেক জালিয়াতির মামলায় গৃহবধূর ৮ মাসের জেল
নিজস্ব প্রতিনিধি\ কুমিল্লার হোমনায় এনজিও’র দায়ের করা চেক জালিয়াতির মামলায় খোশনেয়ারা বেগম নামের এক গৃহবধুর ৮ মাসের জেল হয়েছে। ওই গৃহবধু স্বামী সন্তান ফেলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সে উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের মঙ্গলকান্দি গ্রামের জসিম উদ্দিনের স্ত্রী।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে গাভী পালন প্রকল্পের জন্য গৃহবধু খোশনেয়ারা বেগমকে এনজিও নিয়মনীতি উপেক্ষা করে যাচাই বাছাই ছাড়া উদ্দিপন মানবিক উন্নয়ন সংস্থা ২ লাখ, ঠেঙ্গামারা মহিলা সমবায় সমিতি (টিএমএসএস) ১ লাখ ৫০ হাজার, সাজেদা ফাউন্ডেশন ২ লাখ, ব্যুরো বাংলাদেশ ১ লাখ ৫০ হাজার ও আশা এনজিও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করেন। সেই সময় গৃহবধুর নিকট থেকে ব্যাংকের ফাকা চেক রাখা হয়। নিয়মিত মাসিক কিস্তি পরিশোধ করলেও করোনা মহামারী দেখা দিলে কিস্তি পরিশোধে অনিয়ম হলে ব্যাংকের ফাকা চেক ডিজওনার দেখিয়ে ২০২১ সালে ঋণগৃহীতা গৃহবধুর বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা করেন। মামলা নম্বর সিআর ১৫১০/২১ ও ১৫৪৯/২২। সেই মামলায় গৃহবধুর ৮ মাসের জেল হয়েছে। এদিকে পুলিশের ভয়ে গৃহবধু বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। যাবার সময় সে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে গেছে। তার স্বামী ৪ সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
গত শনিবার সকাল ১১টায় হোমনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে গৃহবধুর স্বামী জসিম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমার স্ত্রী আমার ব্যবসা দেখিয়ে ঋণ আনতে গেলে তারা কোন যাচাই বাচাই না করে কয়েকটি এনজিও তাকে ঋণ দেয়। পরবর্তীতে করোনার কারনে ব্যবসা মন্দা হলে কিস্তি দিতে না পারায় তার নামে মামলা হয়। তখন এনজিও কর্মকর্তাদের সাথে কিস্তিতে আসল টাকা পরিশোধ করার শর্তে আদালত থেকে জামিন পায়। তারপর দারদেনা করে কিস্তিতে আসল টাকা পরিশোধ করা হলেও এনজিও কর্মকর্তারা মামলা প্রত্যাহার না করায় আমার স্ত্রীর এক মামলায় ২ মাস ও আরেক মামলায় ৬ মাসের সাজা হয়। এখন এনজিও কর্মকর্তারা আসলের সাথে চক্রবৃদ্ধি সুদ দাবি করছে।
সরেজমিনে ঋণ প্রদানকারি এনজিও’ টিএমএসএস, উদ্দিপন, ব্যুরো বাংলাদেশ অফিসে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। কিন্ত সাজেদা ফাউন্ডেশন অফিসে গিয়ে সহকারি ঋণ প্রদান কর্মকর্তাকে পেয়ে ঋণ বিতরনে নিয়মনীতি মানা হয়েছে কিনা, গঠণতন্ত্র মোতাবেক ঋণ নিতে ফাকা ব্যাংক চেক রাখার কোন বিধান আছে কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে তিনি জানান, ঋণের পুরো টাকা পরিশোধ না করায় সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
মুঠোফোনে ঋণ গ্রহীতা খোশনেয়ারা বেগম জানান, আমি ঋণ নিয়ে করোনার কারণে ঠিকমত কিস্তি দিতে পারিনি। আমার নামে মামলা হলেও সঞ্চয় কিস্তি সমন্বয় করে আসল টাকা কিস্তিতে দিয়ে মিটমাট করেছিলাম। সুদের টাকার জন্য মামলা উঠায় নাই। আমার দ্বারা টাকা পরিশোধ করা সম্ভব না। আমার আত্মহত্যা ছাড়া কোন পথ নেই।
এ বিষয়ে সাবেক এক এনজিও কর্মকর্তা জানান, এনজিও আইনে তথ্য যাচাই বাছাই করা ছাড়া ঋণ বিতরণ করার কোন সুযোগ নেই। এমনকি গ্রাহকের নিকট থেকে ফাকা চেক রাখারও কোন বিধান নাই। ইদানিং আদালত কর্তৃক বিষয়টি নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসন হস্তক্ষেপ করা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
হোমনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি হোমনা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ফেরদৌস আবদুল্লাহ বলেন, দারিদ্রতা থেকে বেরিয়ে স্বাবলম্বী হতে অনেকেই এনজিওগুলো থেকে ঋণ নেন। এনজিওগুলো যাচাই বাছাই না করে ঋণ দেয়ার কারনে দেখা যায় ঋণের কিস্তি শোধ করতে আবার অন্য একটি এনজিও’র ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে। সেই ঋণের জাল থেকে আর বেরিয়ে আসা সম্ভব হয় না। এক সময় তাদের ভিটেমাটিও বিক্রি করেও ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। আবার অনেকে আত্মহত্যা করে। এনজিওগুলো সরকারের এমআরএ নিয়মনীতি মেনে ঋণ দেয়া উচিৎ। এনজিওগুলোর উদ্দেশ্য নারীদের স্বাবলম্বী করা হয়রানি করা নয়। বর্তমানে এনজিওগুলো কাগজে-কলমে ১০ শতাংশ সুদের কথা বললেও কৌশলে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে। এতে দরিদ্র মানুষ স্বাবলম্বী হওয়ার পরিবর্তে আরও দরিদ্র হচ্ছে।