বৃহস্পতিবার, ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যুগ যুগ যাবত কর্তৃপক্ষের কোনো নজর পড়ছেনা:  লাকসামে ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত প্রায় বিধ্বস্ত পুরাতন  দৈনিক বাজারের মারাত্মক জীর্ণ-শীর্ণ হাল-অবস্থা!!

যুগ যুগ যাবত কর্তৃপক্ষের কোনো নজর পড়ছেনা: লাকসামে ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত প্রায় বিধ্বস্ত পুরাতন দৈনিক বাজারের মারাত্মক জীর্ণ-শীর্ণ হাল-অবস্থা!!

৬৯ Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ লাকসামের উপকন্ঠে পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় অবস্থিত দৌলতগঞ্জের ব্যাংক রোড সংলগ্নে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত পুরাতন দৈনিক বাজারটি বছরের পর বছর থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ আর জরাজীর্ণ হাল-অবস্থায় নিপতিত হয়েছে। বিরাজ করছে চরম দুর্গন্ধে ঠাঁসা নাকে হাত রাখার দশা। অথচ, বাংলার বিদূষী নারী নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীসহ আরও অনেক জ্ঞানী-গুণী এবং কৃতিত্ববান মনীষীর জন্মস্থান আর ডাকাতিয়া নদী বিধৌত লাকসামের এক কালের গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী কত লাকসাম কত বাতির আলোকিত জনপদের একমাত্র প্রসিদ্ধ খোলা বাজার হিসেবে জমজমাট অবস্থায় ছিল এই দৈনিক বাজারটি। নোয়াখালী রেল লাইন সংলগ্ন থেকে ব্যাংক রোড পর্যন্ত লাকসামের উপকণ্ঠের এই বিখ্যাত বাজারটি ব্রিটিশ আমল থেকেই “দৌলতগঞ্জ মাছ বাজার” নামেও মানুষের মুখে মুখে এর পরিচিত ছিলো।

            কিন্ত দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এই জীর্ণ শীর্ণ দৈনিক বাজারটি ব্যবহারের প্রায় অনুপযোগী হয়ে উঠে। শত বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই ঐতিহ্যবাহী দৈনিক বাজারটিতে। টিন সেডের এই দৈনিক বাজারটির প্রতি চোখ পড়েনি লাকসাম উপজেলা প্রশাসন কিংবা পৌরসভা কর্তৃপক্ষেরও। এটিকে খোলা বাজার হিসেবেও বলা হয়ে থাকে।

উল্লেখ থাকে যে, তৎকালীন জমিদার এবং ঐতিহ্যবাহী লাকসাম সরকারি পাইলট হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা (১৯২৩) অতুল কৃষ্ণ রায় চৌধুরী (পিতা: অমর কৃষ্ণ রায় চৌধুরী) ১৯২ নং লাকসাম মৌজার ৭৯ নং সিএস খতিয়ান মূলে ৩ দাগে উক্ত দৈনিক বাজারস্থ .২৩ শতাংশ সম্পত্তির মালিক ছিলেন। তা থেকেই (২৪৯ নং দাগের) ‘০৬ ডিং ভিটি জমি সরকার একোয়ার বা অধিগ্রহণ করে নেন। তারপর থেকে এই ২৪৯ দাগের ‘০৬ শতাংশ সম্পত্তির উপরই উক্ত জরাজীর্ণ বিধ্বস্ত প্রায় ব্রিটিশ আমলের পুরাতন দৈনিক বাজারটি কোনো মতে দাঁড়িয়ে আছে। বাজারের ভিতরে ৩টা গলি থাকলেও এগুলো প্রায় পার্শ্ববর্তী দোকানীদের দখলেই। এতে করে ইদানীংকালে এই বাজারের ভিতরে মানুষের প্রবেশ করা প্রায় দু:সাধ্যই বটে! কিন্ত এই বাজারের নাম খোলা বাজার হলেও কোনো নিয়ম-নীতির বা আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে লাকসাম উপজেলার সরকারী ইউএনও ও এসি ল্যান্ডের অর্থাৎ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই খোলা বাজারে কতেক ব্যক্তি বা কোনো কোনো দোকান্দার দোকান ঘর নির্মান করে তাতে আবার চতুর্দিকে বেড়া দিয়ে আন্ডার লক এন্ড কী সিষ্টেমের দোকান ঘর তৈরী করে ফেলেছেন। কিন্ত বছরের পর বছরেও এ ধরণের বে-আইনী অপতৎপরতার কারণে লাকসাম উপজেলা প্রশাসনের কোনো রকম টনক নড়েনি। এতে করে বুঝা যায় যে, এখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা চলছে সম্পূর্ণ নীরব দর্শকের।

এছাড়া, উপরোল্লিখিত ১৯২ নং লাকসাম মৌজার ৭৯ নং সিএস খতিয়ানের অপর ২৪৮ দাগের ‘০৬ শতক এবং ২৫০ দাগের ‘১১ শতক একুনে ২ দাগে মোট ‘১৭ শতক জায়গা সংক্রান্ত মামলায় সরকারের রিট পিটিশন (CIVIL PETITION FOR LEAVE TO APPEAL NO. 1067 OF 2014) Dismissed হয়েছে ০১/০২/২০১৬ ইং তারিখে আরো ৭ বছর আগে। যা কিনা শুনানীর জন্য ধার্য্য ছিল (From the Judgement and order dated 04.06.2012 passed by the High Court Division in Writ Petition No. 917 of 2005). Date of hearing: 1st February, 2016.) ১লা ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ইং তারিখে। সে রায়ে বলা হয়েছিল যে, “ORDER”- The leave petition is out of time by 700 days but the explanation offered seeking condonation of delay is not at all satisfactory. Accordingly, the Civil Petition for leave to appeal is dismissed as barred by limitation.)

            কিন্ত হাইকোর্ট ডিভিশনের উল্লেখিত রায়ের পরেও উপরে বর্ণিত ১৯২ নং লাকসাম মৌজার ৭৯ নং সিএস খতিয়ানের পুরাতন দৈনিক বাজারের দক্ষিণ পাশের সাবেক ২৪৮ দাগের ‘০৬ শতক এবং উত্তর পাশের ২৫০ দাগের ‘১১ শতক জায়গার উপরে দীর্ঘদিনের দখলকার দোকানীরা আজও স্থানীয় দৌলতগঞ্জ ভূমি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে নিদারুন হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে ভূমির মাঠ জরিপ কাল থেকেই।

  ফলে এসব নানা সমস্যা আর সংকটের কারণে এবং দুর্গন্ধে ঠাঁসা উক্ত দৈনিক বাজারে বর্তমানে মানুষ বিপদে না পড়লে সহজভাবে কেউ আর প্রবেশ করছেন না। কতেক দোকানীরা এসব ময়লা-আবর্জনা আর এহেন বিশ্রী পরিবেশেরও কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের দোকন্দারী চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে নিদারুন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এ বাজারে প্রবেশকারী ব্যক্তিবর্গরা। আরেকদিকে, লাকসাম পৌর শহরের কোনো কোনো স্থানে বর্তমানে ব্যাপক উন্নয়নকর্ম ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও সমান তালেই অব্যাহত রয়েছে। তবে শহরের পাইকারী বাজার, দৈনিক বাজার, মুদিখানা, গুদাম বা ওয়েল মিলগুলোর বর্জ্য যেন কোনভাবেই যেখানে-সেখানে ফেলা না হয়- সেই বিষয়ে পৌরসভার সেনিটারীদের বিশেষ নজর দেয়া আবশ্যক রয়েছে।

            কারণ শহর যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকে তবে সকল উন্নয়ন কার্য সম্পন্ন হবে ঠিকই- কিন্ত জগন্নাথ দিঘীর পাড়ে নতুন করে শান-বাঁধানো ঘাটে বসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবেন না ময়লা-আবর্জনা আর মানুষের প্রশ্রাবের গন্ধে। কিংবা ডাকাতিয়া নদীর উপর হাতিরঝিলের আদলে ব্রীজ হবে ঠিকই; কিন্তু অবশেষে নদীটা মরে গিয়ে হাজা-মজা নালায় পরিণত হবে অদূর ভবিষ্যতেই। এতে করে সব সৌন্দর্য আর উন্নয়নই আবার বৃথায় পর্যবসিত হয়ে যাবে!

Share This