রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জিলহজ্ব মাসের ফজিলত ও আমল

Views

            অধ্যক্ষ ইয়াছিন মজুমদার\ আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন- ফজরের শপথ, (জিলহজ্বের প্রথম) দশ রাতের শপথ, জোড় ও বিজোড়ের শপথ, (সুরা ফজর, আয়াত ১-৩)। আরো বলেছেন- এ নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ কর (সুরা হজ্ব, আয়াত ২৮)। সুরা তাওবার ৩৬নং আয়াতে আল্লাহ সম্মানিত মাস চারটি উল্লেখ করেছেন। হাদিসের ভাষ্যে সে চার মাসের অন্যতম হলো জিলহজ্ব মাস। হাদিসে বর্ণিত- রাসুল (সঃ) বলেছেন এ দশ দিনের নেক আমলের তুলনায় আল্লাহর কাছে প্রিয় আর কিছু নেই। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও কি এর চেয়ে প্রিয় নয়? নবী (সঃ) বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়, তবে কোন লোক যদি তার জীবন ও সব সম্পদ নিয়ে জিহাদে বের হয় এবং তার সম্পদ ও জীবন আল্লাহর রাস্তায় বিলীন করে দেয়, (বোখারী ৯৬৯)। নবী সঃ বলছেন, জিলহজ্বের দশ দিনের ইবাদতের মতো প্রিয় আল্লাহর কাছে আর কিছু নেই। এর একদিনের রোজা এক বছরের রোজার সমান এবং প্রত্যেক রাতের ইবাদত কদরের রাতের মতো, (তিরমিজি ১৫৮)। উম্মুল মোমেনিন হাফসা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী সঃ চারটি আমল ছাড়তেন না। আশুরার রোজা, জিলহজ্বের প্রথম দশকের রোজা, প্রতি চন্দ্র মাসের (১৩, ১৪, ১৫ তারিখের) রোজা এবং ফজরের দু’রাকাত সুন্নাত, (আবু দাউদ ২১০৬)। নবী সঃ বলছেন, উত্তম দোয়া আরাফার দিবসের দোয়া, আর উত্তম হলো আমি ও আমার পূর্বের নবীগণ যা বলেছেন তা হলো- লা-ইলাহা ইল্লালাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুলি শাইয়্যেন কাদির, (তিরমিজি ২৮৩৭)। নবী (সঃ) বলছেন- সবচেয়ে মহান যে দশ দিবসের আমল আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। এ দিবস সমূহে তোমরা বেশি তাকবির তাহলিল ও তাহমিদ কর। অর্থাৎ লা ইলাহা ইলাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আলহামদুলিল্লাহ পড়, (মুসনাদে আহমাদ ৭/২২৪)। নবী (সঃ) বলছেন, আরাফার দিবসের রোজা পূর্বের এক বছরের এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হবে এবং আশুরার রোজা পূর্বের এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হবে। নবী (সঃ) বলছেন- জিলহজ্বের চাঁদ দেখা গেলে তোমরা কোরবানির আগ পর্যন্ত শরীরের চুল নখ ইত্যাদি কেটো না, (মুসলিম- ৫০১১,৫০১৩)। নবী (সঃ) বলছেন, যে আল্লাহর জন্য দু’ঈদের রজনীতে ইবাদতে জাগ্রত থাকে যে দিন অন্তর সমূহ মৃতুবরণ করবে (কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা দেখে মৃতের মত ভীত সন্ত্রস্ত হবে) সে দিন তার অন্তর জাগ্রত থাকবে, (ইবনু মাজাহ-১৭৮২)। বিভিন্ন হাদিস পর্যালোচনায় জিলহজ্ব মাসে যে সকল আমলের কথা পাওয়া যায় তা সংক্ষেপে নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-

১) বেশি বেশি তাকবির তাহলিল ও তাহমিদ করা, ২) বেশি বেশি তাওবা ইস্তেগফার করা, ৩) চাঁদ দেখা গেলে নখ, চুল ও শরীরের পশম না কাটা, (আগেই এগুলো কেটে পরিচ্ছন্ন হওয়া)। কোরবানি করে এরপর এগুলো কাটা। ৪) বেশি বেশি রোজা রাখা (বিশেষ করে আরাফার রোজা রাখা)। ৫) ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক বলা। ৬) ঈদের রাতে বেশি নফল ইবাদত করা। ৭) যথাসম্ভব পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া, এক পথে যাওয়া অন্য পথে আসা। ঈদগাহে নামাজ আদায় করা। ৮) পরস্পর দেখা হলে তাকাব্বাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা বলা। ৯) নিজের কোরবানি নিজে করা মেস্তাহাব। ১০) কোরবানির দিন ভোর থেকে না খেয়ে কোরবানির গোস্ত দ্বারা প্রথম আহার করা। আল্লাহ আমাদেরকে জিলহজ্বে বেশি বেশি আমল করে পরকালীন পাথেয় বৃদ্ধির তৌফিক দিন।

            লেখক: অধ্যক্ষ ফুলগাঁও ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, লাকসাম, কুমিল্লা।

Share This

COMMENTS