শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ডাকাতিয়ার বিষাক্ত পানিতে  রোগাক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ

ডাকাতিয়ার বিষাক্ত পানিতে রোগাক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ ডাকাতিয়া নদীর বিষাক্ত ও দূষিত পানিতে রোগাক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। এক সময় এ ডাকাতিয়া নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন বহু মানুষ। পাড়ের মানুষ তৃষ্ণা নিবারণ করতো নদীর পানি খেয়ে। সকাল-সন্ধ্যা নৌকা চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এখন কোনটিই আর দেখা যায় না। হারিয়ে যাচ্ছে ডাকাতিয়ার সেই রূপ।

            নদীপাড়ের মানুষের জীবনে ডাকাতিয়া হয়ে উঠেছে এখন বিষের কাঁটা। নদীর বিষাক্ত কালো পানিতে এখন আর মাছের দেখা মেলে না। পানিতে পচা দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে।

            ২০৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ডাকাতিয়া নদীটি বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমানা নদী। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের চাঁদপুর ও কুমিল্লার ওপর দিয়ে প্রবাহিত। কুমিল্লায় ডাকাতিয়ার দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার। ডাকাতিয়া নদীকে মেঘনার উপনদীও বলা হয়।

            ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যর পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা জেলার বাগমারা দিয়ে এটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে যা লক্ষীপুর জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ ডাকাতিয়া লাকসাম-মনোহরগঞ্জ হয়ে চাঁদপুরের মোহনায় মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে।

            অতীতে এই নদী দিয়ে মগ-ফিরিঙ্গি জলদস্যুরা নোয়াখালী ও কুমিল্লায় প্রবেশ করত। এই নদীতেই তারা ডাকাতি করত। ডাকাতদের উপদ্রবের কারণেই নদীটির নাম করা হয় ডাকাতিয়া।

            স্থানীয়রা জানান, এক সময় ডাকাতিয়া নদীর পানিতে তৃষ্ণা মেটাত নদীপাড়ের মানুষ। আর এখন দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কুমিল্লা জেলা শহরের যাবতীয় বর্জ্য সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ডাকাতিয়া নদীতে। তাছাড়া, ডাকাতিয়া যেখান দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে সেখানকার স্থানীয় বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। এ নদীর কুল ঘেসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বহু হাট-বাজার। রয়েছে শত শত কল কারখানা। বাজারের ময়লা আবর্জনা আর কল কারখানার বিষাক্ত পানি ডাকাতিয়াকে করেছে দূষিত। প্রতিনিয়ত তা অব্যাহত থাকায় এখন আর ডাকাতিয়া নদীর পানি পান করছেনা। উপরন্তু এ ডাকাতিয়া নদীতে এখন আর দেশী প্রজাতীর কোন মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা। অথচ পরিবেশ দূষণ রোধে স্থানীয় প্রসাসনের কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে।

            এখানে উল্লেখ্য যে, ‘কুমিল্লা ইপিজেডের সমস্ত ময়লা-আবর্জনা রোহিতা খাল ও সোনাইছড়ি খাল দিয়ে নতুন ডাকাতিয়া, গুইঙ্গাজুড়ি, পুরান ডাকাতিয়াসহ অন্যান্য নদীতে পড়ে। কুমিল্লা ইপিজেডে ইটিপি থাকলেও যথাযথ ব্যবহার না হওয়ায় ময়লা-আবর্জনার পরিমাণ বেশি হচ্ছে।’

            তবে কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব দাবি করেছেন, ডাকাতিয়া নদীতে পড়া ময়লা-আবর্জনা ইপিজেডের নয়। বরং এগুলো কুমিল্লা শহরের বর্জ্য।

তিনি বলেন, ‘ইপিজেডের ভেতরে ময়লা ইটিপি নিষ্কাশন করে ফেলে। বাইর থেকে ইপিজিডিরে ময়লা মনে হলেও এগুলো কুমিল্লা শহরের বর্জ্য।’

            কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় নদী দূষণ নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয়। পরিবেশ দূষণ রোধের দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন ভূমিকা রাখতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তর যদি কোনো ব্যবস্থা নেয়, সেক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা লাগলে আমরা করব।’

            কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম ভূঁইয়া বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে মিলে কুমিল্লা নগরীর বর্জ্য নিষ্কাশন নিয়ে কাজ করছি। খুব সহসাই এই সমস্যার সমাধান হবে।’

Share This