শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তারুণ্যের বিজয়

            মো. রুহুল আমিন\ আমি বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। আমি দেখেছি চব্বিশের ছাত্র আন্দোলন। আমি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউরকে দেখিনি। আমি দেখেছি আবু সাঈদ ও মুগ্ধসহ শতশত শহীদ ভাইদের। একাত্তর সালের আগে পাকিস্তানের জুলুম দেখিনি, আমি দেখিছি স্বৈরাচারী শাসকের একনায়কতন্ত্র, মানুষের উপর জুলুম-অত্যাচার, গুম ও খুন। অবৈধভাবে নেতা এবং সরকারি আমলাদের টাকার পাহাড়। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার। কানাডায় বেগম পাড়ায় সরকারি কর্মকর্তা, এমপি, মন্ত্রীদের ঘরবাড়ি। বেনজিরের দুর্নীতি, রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউরের ছাগলকান্ডসহ কত কিছু। আমি পাকিস্তানের পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ করা দেখিনি, দেখিছি শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালানো।

            আন্দোলন মূলত শুরু হয়েছিলো কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে। সরকারি চাকরিতে বিদ্যামন ৫৬ শতাংশ কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছিলো ছাত্ররা। এর সূত্রপাত ঘটেছিলো ২০১৮ সালে, তখন তিনি যৌক্তিক সংস্কার না করে কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছিলেন। যেটি ছাত্রদের চাওয়া ছিলো না। ৫ই জুন হাইকোর্ট সরকারের জারিকৃত ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করেন। ৬ই জুন ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্ররা। তারা ৩০শে জুন পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দেয়। ছাত্রদের দাবি না মানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্ররা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে দাবি আদায়ে রাজপথে নেমে আসে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা বললেন, কোটা বাদ দেওয়ায় অনেক জেলাতে অনেক বেশি ক্যাডার হয়েছে আবার অন্য অনেক জেলায় কোনও ক্যাডারই নেই, নারী ক্যাডারের সংখ্যা কমে গেছে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সংখ্যা কমে গেছে। হয়তো একথা ঠিক। কিন্তু এই সিদ্ধান্ততো এককভাবে তিনিই নিয়েছিলেন, এটা তো কারো দাবি ছিল না। যাহোক, ৬ই জুলাই থেকে শুরু হয় বাংলা বøকেড কর্মসূচি। সারদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা সড়ক, মহাসড়ক, রেলপথ অবরোধ করে বাংলা বøকেড কর্মসূচি পালন করে।

            বাংলা বøকেডের দ্বিতীয় দিনে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা রেখে সংসদে আইন পাশের একদফা দাবি করেন। হাইকোর্টে রায় চার সপ্তাহ স্থগিত রেখে আপিল বিভাগ রায় দেন। ছাত্ররা এটিকে সরকারের কৌশল মনে করে। এরপর আন্দোলন থামাতে না পেরে ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা এবং আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়।

            গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার বক্তব্য ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?’ এর প্রতিবাদে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরে ‘রাজাকার’ ¯েøাগান। এর জবাব হিসাবে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়া হয় সাধারণ ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠে রণক্ষেত্র। প্রতিটি হল হয়ে উঠে রণক্ষেত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় থেকে টোকাই ভাড়া করে এনে ছাত্রদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগ। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সরাসরি গুলিতে আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়। এর মাধ্যমে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়া হয়। ঢাকার রাজপথে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সূমহ আন্দোলনে নেমে পড়ে। যার পরিণতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালাতে বাধ্য হন। শত শত ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে ৫ই আগস্ট আসে সেই চূড়ান্ত বিজয়। এ বিজয় ছাত্র-জনতার। এ বিজয় তারুণ্যের।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

Share This

COMMENTS