বৃহস্পতিবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্বতী সরকারে যুক্ত হতে পারেন

১৭৬ Views

ষ্টাফ রিপোর্টার॥ নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের গতি বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নতুন করে সম্ভবত: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা হিসেবে শীঘ্রই নিয়োগ পেতে পারেন সাবেক এবি পার্টির কর্ণধার লাকসামের কৃতি ব্যক্তিত্ব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী। গত বুধবার (৯ই অক্টোবর) সরকারের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

উপরে সাবেক সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী (বাঁ থেকে ২য়) সম্প্রতি লাকসামবার্তা পত্রিকা অফিস পরিদর্শনকালে তোলা ফাইল ছবি।

এছাড়া, সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন যে, দু’য়েক দিনের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হতে পারে। এই তালিকায় আছেন সদ্য এবি পার্টির আহ্বায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করা সাবেক সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরীর নাম। তিনি গত বুধবার এবি পার্টির আহ্বায়কের পদ ছাড়েন।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দু’দিন পর নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টাসহ ১৭ উপদেষ্টা শপথ নেন ৮ই আগস্ট। এরপর গত ১৫ই আগস্ট পরিধি বাড়ানো হয় উপদেষ্টা পরিষদের। নতুন ৪ জন উপদেষ্টা বাড়িয়ে মোট ২১ উপদেষ্টা নিয়ে পথ চলা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের।
প্রকাশ থাকে যে, এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত সুপিরিয়র পোস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৭৯ সালে সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট পদে ঢাকা জেলায় সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব, পাটকল সংস্থার চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম ওয়াসা চেয়ারম্যান, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রপতির সচিবসহ সুনামের সাথে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।

কুমিল্লা জেলার লাকসাম-মনোহরগন্জের কৃতি সন্তান এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী ২০০১ সালে ফেনীর জেলা প্রশাসক, ২০০৬ সালে পর তিনি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সর্বশেষ রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে অবসরে যান। চাকরি শেষে তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবেও কিছুদিন যাবত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া, সরকারের অংশ না-কি দুদকের গুরুদায়িত্বে? সোলায়মান চৌধুরীকে নিয়ে আরো নানা আলোচনাও চলেছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে যে, এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি) আহ্বায়কের পদ ছাড়ার পর সাবেক এ সচিব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন বলে নানা খবরই ভাসছে। সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান ও সংস্থাপন সচিব সোলায়মান চৌধুরী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান হতে পারেন। সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এমন একটি সূত্র ঢাকা টাইমস এমন আভাসই দিচ্ছেন।

জানা গেল, সাবেক সচিব সোলায়মান চৌধুরীর প্রশাসনিক দক্ষতা, ন্যায়-নিষ্ঠা ও সততাকে কাজে লাগানোর একটি জোর আলোচনা আছে। দুদক চেয়ারম্যানের মতো স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ পদে সোলায়মান চৌধুরীর মতো মেধাবী, সাহসী ও সৎ কর্মকর্তার প্রয়োজন। এমন আলোচনাই নাকি সরকারের ভেতরে আছে। তবে আরেকটি সূত্র ঢাকা টাইমসকে জানাচ্ছে, সাবেক ডাকসাইটে আমলা সোলায়মান চৌধুরীকে সরকারের উপদেষ্টাও করা হতে পারে। বিশেষত ডিসি নিয়োগসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু নিয়োগে চরম বিতর্ক তৈরি হওয়ায় এই মন্ত্রণালয়য়ে শক্ত নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। সোলায়মান চৌধুরীই কেন দুদকের চেয়ারম্যান বা অন্য কোনো গুরু দায়িত্বের আলোচনায়? এ নিয়ে নিশ্চয়ই প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু সংক্ষেপে উত্তরটি হলো- নিকট অতীতে তার মতো সাহসী ও সৎ কর্মকর্তা কমই দেখা গেছে।

২০০১ সালে ফেনীর ডিসি থাকাকালে গডফাদার জয়নাল হাজারীকে উচ্ছেদ বা দমনে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব মোটেও ভুলে যাওয়ার নয়। পরবর্তীকালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিজিএমসির চেয়ারম‍্যান, বিপিসির চেয়ারম্যান এবং পাট ও বস্ত্র সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান হিসেবে তার দৃঢ়চেতা সিদ্ধান্ত সবারই নজর কাড়ে। মূলত: আদৌ সোলায়মান চৌধুরীকে দুদক চেয়ারম্যান কিংবা সরকারের উপদেষ্টা করা হবে কি-না সেটি এখনো পুরো পরিষ্কার নয়। কিন্তু যদি তিনি দায়িত্ব পান তাহলে সেটি হবে একটি যথাযথ সিদ্ধান্ত- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।

তিন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্ব পালন করে আসা সোলায়মান চৌধুরী ব্যক্তিজীবনে সৎ কর্মকর্তা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তিনি এখনো থাকেন ভাড়া বাসায়। তার নিজের কোনো ফ্ল্যাট নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একজন পিয়নও যখন ক্ষেত্রবিশেষে ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়, তখন সোলায়মান চৌধুরীর মতো একজন সাবেক সচিব থাকেন ভাড়া বাসায়। আসলে ঘুণে ধরা এই রাষ্ট্র মেরামত করতে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আজকের দিনে এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরীর মতো একজন দক্ষ, সৎ কর্মকর্তা ও বলিষ্ঠ মানুষেরই বড় প্রয়োজন বলে অনেকেই মনে করে থাকছেন।

Share This