সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচনে যাওয়ার আগে দৃশ্যমান বিচার ও জুলাই সনদ চায় এনসিপি

নির্বাচনে যাওয়ার আগে দৃশ্যমান বিচার ও জুলাই সনদ চায় এনসিপি

২৮ Views

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যেকোনো নির্বাচনে যাওয়ার আগে দৃশ্যমান বিচার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন দেখতে চাই। শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে এনসিপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

নাহিদ বলেন, নির্বাচনের জন্য নাগরিক পার্টির প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা বলেছি, সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি গণপরিষদ নির্বাচন দেখতে চাই। শুধু নির্বাচনই নাগরিক পার্টির এই মুহূর্তে একমাত্র দাবি নয়। তার আগে আমরা দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম দেখতে চাই। আর ঐকমত্যের যে জুলাই সনদ সই হওয়ার কথা, জনগণ দেখতে পাবে কোন রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে আছে, কোন দল বিপক্ষে আছে, এই জুলাই সনদ আমরা নির্বাচনের আগে কার্যকর দেখতে চাই। জুলাই ঘোষণাপত্রের যা দাবি উঠেছিল ছাত্রদের পক্ষ থেকে সেটার বাস্তবায়ন দেখতে চাই আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে।

বক্তব্যের শুরুতে সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি যেন জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার যেন কঠোর অবস্থান নেয়। নারী নিপীড়নকারীদের যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় আনা হয়।

গতকাল রয়টার্স প্রকাশিত সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাক্ষাৎকারে কিছু মিসকোট হয়েছে বা ভুল অনুবাদ (দেশীয় গণমাধ্যমে) হয়েছে। আর্থিক বিষয়ে আমি বলেছিলাম আমাদের সমাজের সচ্ছল মানুষ ও শুভাকাঙ্ক্ষী যারা রয়েছেন তারা মূলত আমাদের সহযোগিতা করেন। আমরা একটা ক্রাউডফান্ডিংয়ের দিকে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের কার্যালয় ও নির্বাচনের ফান্ড গঠন করব। এটার ভুল অনুবাদ এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এটা সংশোধনের অনুরোধ থাকবে।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এ বছর নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আমি ঠিক এভাবে কথা বলিনি। আমি বলেছিলাম, এখন দেশের যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ যেমন নাজুক অবস্থায় আছে, এ রকম নাজুক অবস্থায় নির্বাচন করা অনেক বেশি কঠিন হবে। তাদের সক্ষমতার পরীক্ষা হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। সেখান থেকে আমি বলেছি, অবশ্যই নির্বাচনের আগে পুলিশিং ব্যবস্থা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবশ্যই উন্নত করতে হবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে, সামাজিক শক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে।

নারীদের প্রতি নিপীড়নের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বর্তমানের নাগরিক পার্টির নারী সদস্যদের স্পেসিফিকভাবে চিহ্নিত করে সাইবার জগতে তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার, বুলিং চলছে। এক ধরনের হেনস্তার মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হচ্ছে। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার, তাদের কর্মী তারা অনেক বেশি যুক্ত হচ্ছেন এর সঙ্গে। নারীদের টার্গেট করা হচ্ছে, যেন নারীরা দেশ গঠনের কাজে যুক্ত হতে না পারে। তাদের একটা মেন্টাল ট্রমার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এটার জন্য সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এনসিপির কার্যক্রম বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, আমরা এখন রাজনৈতিক নিবন্ধনের শর্তাবলী নিয়ে মনযোগী হচ্ছি। তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছি। রোজার পর পুরোদমে শুরু করবো। আমরা নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করছি। জোট গঠনের বা নির্বাচনের প্রার্থীর বিষয়ে আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করতে আরও সময় লাগবে।

নাহিদ বলেন, আমরা নির্বাচনের সময়ের চেয়ে প্রেক্ষাপটকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে দাবি জানাচ্ছি। জুলাই সনদ আর জুলাই ঘোষণাপত্র আলাদা জিনিস। ঘোষণাপত্রের দাবি আরও আগে উঠেছিল ছাত্রদের পক্ষ থেকে। আর জুলাই সনদ প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করছিলেন যে, সংস্কারের ঐকমত্যের ওপর একটা চার্টার তৈরি হবে যেখানে বাংলাদেশের রূপরেখা ও সংস্কারের কী কী এখন করব, কী কী ভবিষ্যতে করব, রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের কাছে কমিটমেন্ট দিতে হবে। সেটাকে আমরা বলছি জুলাই সনদ। গণঅভ্যুত্থানে মানুষ পরিবর্তনের ও ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা থেকে এসেছিল। এই দুইটা পূরণ করতে হবে। সেটা আমি বলেছি যে, আমরা যেন ভুলে না যাই বিচার ও সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেন আমরা নির্বাচনের দিকে যাই।

নাগরিক পার্টির আর্থিক বিষয় নিয়ে প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, আর্থিক জায়গা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এ বিষয়টা পরিবর্তন আসুক আমরা চাই। আমাদের জায়গা থেকে এটা দাবি করছি। এককভাবে এই সংস্কৃতি আমরা পরিবর্তন করতে পারব না। আমাদের কারা সহযোগিতা করছে, এটা যদি আমরা প্রকাশ করি, তারা যে ক্ষতির শিকার হবেন না, সেটার নিশ্চয়তা আমাদের দিতে হবে। এই কালচার তো বাংলাদেশে তৈরি করা যায়নি। আমরা চাই এই কালচার তৈরি হোক এবং সব রাজনৈতিক দল তা গ্রহণ করুক।

Share This