রবিবার, ৪ঠা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লায় পুকুর, দিঘি, জলাশয় ভরাটের কারনে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা

কুমিল্লায় পুকুর, দিঘি, জলাশয় ভরাটের  কারনে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা
৭২ Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ কুমিল্লায় পুকুর, দিঘি, জলাশয় ভরাট, দ্রæত নগরায়ণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের অভাব, অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের ফলে দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। ফলে বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে সুপেয় পানির উৎসও ক্রমাগত কমছে। ভূগর্ভস্থ পানির বিকল্প হিসেবে তথা ভূগর্ভস্থ পানির রিজার্ভ রক্ষা করতে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের (সারফেস ওয়াটার) পানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

            কুমিল্লায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এতটাই নিচে নেমেছে যে, অগভীর নলকূপে আর পানি মিলছে না। কুমিল্লা নগরীতে ভূগর্ভস্থ পানির স্থিতিতল গড়ে ২০ থেকে ২৫ ফুট নিচে চলে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পূর্বের বসানো প্রায় ২০ হাজার নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে। বর্তমানে সাবমারসিবলের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে।

            কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের পানি বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ জানান, কুমিল্লা নগরীতে সুপেয় পানির চাহিদা দেড় কোটি লিটারের বেশি। সিটি কর্পোরেশনের ২০টি পাম্প হাউজের মাধ্যমে পানি পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৭৫ লাখ লিটার। পানির বাকি চাহিদা পূরণ হচ্ছে ব্যক্তিগতভাবে গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে। নগরীতে পানির এই পুরো চাহিদা পূরণ হচ্ছে ভূগর্ভস্থ থেকে। কেবল নগরই নয়; বিভিন্ন উপজেলাগুলোয় কৃৃষিকাজের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে।

            জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ বলেন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের প্রায় সব আয়োজনই দিনকে দিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলেও কৃষি জমির ওপর গড়ে উঠছে অবকাঠামো। নগরীতে ইটপাথরের অবকাঠামোতে এবং খোলা মাটির জায়গাও কংক্রিটে ঢাকা পড়ে যাওয়ায় বৃষ্টি ও মানুষের ব্যবহারের পানি মাটির নিচে যাওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে। এসব কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানিতে দূষণের ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে। মাটির নিচের পানি আহরণ কমে গাছপালা পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আবার পানিরস্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাওয়ার ফলে পানি তোলার ব্যয় বেড়ে যায় এবং পানির প্রাপ্যতা অনেক কমে যায়।

            জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিভিন্ন কারণে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর মানুষের নির্ভরতা বেড়েছে। চাষাবাদ এবং কলকারখানায় উৎপাদনে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে চাপ বাড়ছে। এ ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলন করতে গিয়ে স্তর নেমে যাচ্ছে। এর ফলে একটা সময় ভূমিধস, খরা, পরিবেশ বিপর্যয় থেকে শুরু করে যে কঠিন বাস্তবতা ধেয়ে আসছে এটা আমরাই তৈরি করছি। তাই নদী. পুকুর, দিঘি, খাল-বিল-জলাশয় দূষণ ও দখলের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে ভূগর্ভস্থ পানির রিজার্ভ রক্ষা করতে হবে। প্রচুর পরিমানে বনায়ন করা গেলে পরিবেশ শীতল থাকবে এবং বৃষ্টিপাতের পরিমানও বাড়বে।

            নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ বলেন, নগরীতে পানির চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তাই বিগত সময়ে মেঘনা নদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি এনে তা শোধন করে সরবরাহের পরিকল্পনা নেয়া হয়। সারফেস ওয়াটারের এই প্রকল্পটি সমীক্ষা করছে সারফেস ওয়াটার। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে পানির চাহিদা যেমনি পূরণ হবে, তেমনি ভূর্ভস্থ পানি উত্তোলনে চাপ কমে আসবে। গোমতী নদী কাছাকাছি হওয়া সত্তে¡ও প্রকল্পটি মেঘনা নদী কেন্দ্রিক এজন্য যে, গোমতীতে সারাবছর নাব্যতা থাকে না। কিন্তু মেঘনায় নাব্যতা থাকে।

            তিনি বলেন, আমরা নানা অকারণে পানির অপচয় করে থাকি। পানির অপচয় রোধে সবাইকে ভাবতে হবে, দায়িত্বশীল হতে হবে, পানি ব্যবহারেও হতে হবে মিতব্যয়ি। সর্বোপরি সবার সচেতনতাই পারে পানির অপচয় রোধ করতে এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্থিতিশীল রাখতে।

Share This