বৃহস্পতিবার, ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মিথ্যাচারঃ একটি জগন্যতম অপরাধ

মিথ্যাচারঃ একটি জগন্যতম অপরাধ
৪২১ Views

            শাহ মোঃ মহিউদ্দিন \ মিথ্যা হচ্ছে গুজব, প্রকৃত অবস্থা ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করা বা সত্য ঘটনাকে বিকৃত করা। যে এমন কাজ করে সে মিথ্যাবাদী, মিথ্যাচারী। এটা মুনাফিকের অন্যতম লক্ষন। মিথ্যাচার মানুষকে অন্যায় ও অসৎ পথে পরিচালিত করে এবং তার জীবন কষ্টদায়ক করে দেয়। মিথ্যাচার মানুষকে অপকর্মে আকৃষ্ট করে। মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, মিথ্যা অপবাদ দেয়া, মিথ্যা দোষারোপ করা মিথ্যাচার। ফেইসবুক, মেসেঞ্জার ও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় চরিত্রহীনদের মিথ্যাচারের নমুনা। বিবেকের সুদৃষ্টিতে বিচার করতে গেলে দেখা যাবে মিথ্যাচার একটি রুগ্ন চরিত্র, যার দ্বারা অন্য লোক সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মিথ্যা কেবল ইসলামেই জঘন্য পাপ নয় বরং পৃথিবীর সকল ধর্মে ও নীতিতে মিথ্যা ভয়াবহ ও জঘন্যতম অপরাধ হিসেবে ঘৃনিত।

মিথ্যাচার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ফরমান–

فَمَنۡ حَآجَّکَ فِیۡهِ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَکَ مِنَ الۡعِلۡمِ فَقُلۡ تَعَالَوۡا نَدۡعُ اَبۡنَآءَنَا وَ اَبۡنَآءَکُمۡ وَ نِسَآءَنَا وَ نِسَآءَکُمۡ وَ اَنۡفُسَنَا وَ اَنۡفُسَکُمۡ ۟ ثُمَّ نَبۡتَهِلۡ فَنَجۡعَلۡ لَّعۡنَتَ اللّٰهِ عَلَی الۡکٰذِبِیۡنَ

অতঃপর তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর যে তোমার সাথে এ বিষয়ে ঝগড়া করে, তবে তুমি তাকে বল, ‘এস আমরা ডেকে নেই আমাদের সন্তানদেরকে ও তোমাদের সন্তানদেরকে। আর আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নিজদেরকে ও তোমাদের নিজদেরকে, অতপর আমরা প্রার্থনা করি যে, ‘অসত্যবাদীদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হোক।’ সুরা ইমরান আয়াত ৬১

من یکسب خطیىـٔۃ او* اثما ثم یرم بهٖ بریــٔا فقد احتمل بهتانا و اثما مبینا ﴿ ১১২

আর যে ব্যক্তি কোন অপরাধ বা পাপ অর্জন করে, অতঃপর কোন নির্দোষ ব্যক্তির উপর তা আরোপ করে, তাহলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য গুনাহের বোঝা বহন করল। সুরা নিসা আয়াত ১১২।

وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰهِ الۡکَذِبَ وَ

সেই ব্যক্তির চেয়ে অধিক যালিম আর কে? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে। সুরা ছফ  আয়াত ০৭ ।

ذٰلِکَ ٭ وَ مَنۡ یُّعَظِّمۡ حُرُمٰتِ اللّٰهِ فَهُوَ خَیۡرٌ لَّهٗ عِنۡدَ رَبِّهٖ ؕ وَ اُحِلَّتۡ لَکُمُ الۡاَنۡعَامُ اِلَّا مَا یُتۡلٰی عَلَیۡکُمۡ فَاجۡتَنِبُوا الرِّجۡسَ مِنَ الۡاَوۡثَانِ وَ اجۡتَنِبُوۡا قَوۡلَ الزُّوۡرِ ﴿ۙ ৩০

এটিই বিধান আর কেউ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র বিষয় সমূহকে সম্মান করলে তার রবের নিকট তা-ই তার জন্য উত্তম। আর তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে চতুষ্পদ জন্তু; তবে যা তোমাদের কাছে পাঠ করা হয় সেগুলি ছাড়া। সুতরাং মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে বিরত থাক এবং মিথ্যা কথা পরিহার কর। সুরা হজ আয়াত ৩০।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যাচার সম্পর্কে বলেন –

*-রাসুলুল্লাহ (সা.) সাবধানবাণী ঘোষণা করেছেন, ‘অবশ্যই তোমরা মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকবে, কেননা নিশ্চয়ই মিথ্যা কথা অপকর্মের দিকে পরিচালিত করে এবং অপকর্ম দোজখের দিকে পরিচালিত করে। আর যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলতে থাকে ও মিথ্যার অনুসন্ধান করতে থাকে, সে অবশ্যই আল্লাহর কাছে পরম মিথ্যাবাদী বলে লিখিত হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

* হযরত বাহার বিন হাকিম থেকে বর্নিত নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ধ্বংস ও বিফলতা সে ব্যক্তির জন্য যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে। আর তার জন্য  রয়েছে ধ্বধ্বংস ও অমংগল। তিরমীজী।

* হযরত সুফিয়ান বিন উসাঈদ লিঃ থেকে বর্নিত তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা ও খিয়ানত হলো তুমি তোমার ভাইয়ের কাছে এমন কথা বলবে তা সে সত্য বলে গ্রহণ করবে অথচ তা মিথ্যা। আবু দাউদ।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন কৌতুক ছলে বা গৌরব প্রদর্শন কোন অবস্থাতেই মিথ্যা সমীচীন নয়। আদাবুল মুফরাদ।

নবী করিম সাঃ ফরমান মিথ্যা সকল পাপের মূল। বর্তমান সমাজে কথায় কথায় মিথ্যাচারিতা, মিথ্যা অপবাদ, কলঙ্ক রটানো, অসাক্ষাতে নিন্দা ও প্রতারণামূলক অন্যায় কার্যকলাপ কম বেশি ঘটছে। সদাচার ও মিথ্যাচার উভয়টিই মানুষের ভেতর তথা মনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এগুলো মানুষের কথাবার্তা, কাজকর্ম, ব্যবহার ও আচার-আচরণে প্রকাশ পায়। তাই ইসলামে প্রকাশ্যে ও গোপনে, কথা ও কাজে সামঞ্জস্য থাকা অপরিহার্য ব্যাপার। ভেতর ও বাইরে সামঞ্জস্যহীন কাজই হচ্ছে মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা ও কপটতা বা মুনাফেকি, যার অনিষ্টকর প্রভাবে মানুষের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও জাতীয় জীবন প্রভাবিত হয়।

সত্যবাদীতা মানুষের জীবনের এক মহৎ গুণ। সত্যের মাধ্যমে প্রকৃত অবস্থা ও ঘটনা প্রকাশ পায়, জীবনের মহৎ লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ সুগম হয়। তাই মিথ্যাচার পরিহার করে সত্যকে আঁকড়িয়ে ধরলে জীবনে প্রকৃত সাফল্য  আসবে। তাই মিথ্যাচার বর্জনে প্রাত্যহিক অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তা হলে সমাজ থেকে সকল অনাচার, পাপাচার বিলুপ্ত  হয়ে সমাজ শান্তির আবাসস্থলে পরিনত হতে বাধ্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে মিথ্যাচার থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দিন। লেখকঃ অধ্যক্ষ, ধামতী কামিল মাদরাসা, দেবীদ্বার, কুমিল্লা

Share This