
অনতিবিলম্বে নির্বাচন দিন লাকসামে বিশাল জনসভায় মির্জা ফখরুল

ষ্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ফ্যাসিবাদ সরকার দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে পালিয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সেই ফ্যাসিবাদকে বিদায় দিয়ে একটি অন্তবর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সরকারকে সহযোগিতা না করলে তারা কাজ করতে পারবেনা। বিএনপি এ সরকারকে সমর্থন করে সহযোগিতা করছে। কিন্তু সরকার সংস্কারের কথা বলে সময় ক্ষেপন করছে। সাধারন মানুষ সংস্কার বুঝেনা। তারা দু’বেলা ভাত, মাথা গোজার ঠাঁই, চিকিৎসা, শিক্ষা, শান্তি চায়। তাই সংস্কারের নামে অযথা কালক্ষেপন না করে যৌক্তিক সংস্কার করে অনতিবিলম্বে নির্বাচন দিন। দেশের উন্নয়ন ও শৃংখলার জন্য একটি স্থিতিশীল সরকার জরুরি।’
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। নিজেরা নিজেরা ভোট করে তারা সরকার গঠন করেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে লাকসামের মানুষ সবচেয়ে বেশী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। লাকসামের সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুন কবির পারভেজসহ দেশের অন্তত সাড়ে ৭শ’ নেতৃবৃন্দকে গুম করা হয়েছে। হিরু-হুমায়ুনের সন্তানরা এখনো চোখের পানি ফেলছে। তিনি বলেন, এখানকার এমপি তাজুল ইসলাম দীর্ঘ ১৮ বছর কাউকে কথা বলতে দেয়নি। তার একক নের্তৃত্বে লাকসাম-মনোহরগঞ্জে শাসন কায়েম করেছে। এখন সে কোন দেশে পালিয়েছে তা কেউ বলতে পারবেনা।
২০শে ফেব্রæয়ারি বৃহস্পতিবার বিকালে কুমিল্লা জেলার লাকসাম স্টেডিয়ামে রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে জনগণের পক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, দেশকে আবার অস্থির করার পাঁয়তারা চলছে। আমরা চাই এই অন্তর্র্বতী সরকার সফল হোক। কেননা ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়েই গঠিত হয়েছে দেশের আজকের দিনের এমন সফলতা। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা ভোটের কথা কেনো বলছি; আসলে নির্বাচিত সরকারের সাথে জনগণ থাকে। অনির্বাচিত সরকারের সাথে জনগণ থাকে না। তাই যতদ্রæত সম্ভব সংস্কার শুরু করে নির্বাচন দেয়া আমরা আবশ্যক মনে করছি। তিনি বলেন, ৭১-এ দেশ স্বাধীন করেছিলাম, কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ভালো কিছু উপহার দিতে পারে নি। ফখরুল বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে কোনো বিভেদ সৃষ্টি করতে চাই না। আপনারা কেউ কোনো বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। অযথা দেশকে আর বিভ্রান্ত করবেন না। ২৪ যেমন আমাদের স্মরণীয়, ৭১-ও স্মরণীয়। ৭১ নিয়ে কটাক্ষ করে কেউ কথা বলবেন না। তিনি বলেন, অনেক বয়স হয়েছে। আর হানাহানি চাই না। দেশ নিয়ে শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। আগেও বলেছি- ভারত আমাদের বড় প্রতিবেশী। তারা শেখ হাসিনা আশ্রয়-প্রশ্র্রয় দিলে জনগণ তাদের পক্ষে থাকবে না। এরা দেশের মানুষকে হত্যা করেছে অকাতরে।
কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও লাকসাম উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল কালামের সভাপতিত্বে ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সরোয়ার জাহান দোলন, লাকসাম উপজেলা যুগ্ম আহবায়ক মোশাররফ হোসেন মশু ও শাহ আলমের সঞ্চালনায় জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্ল্যা বুলু। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, কুমিল্লা-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল অব. এম আনোয়ারুল আজিম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকারিয়া তাহের সমুন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, জেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে সাবেক ভিপি আশিকুর রহমান ওয়াসিম, কুমিল্লা উত্তর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক কপিল উদ্দিন কপিল, দক্ষিণ জেলা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক আমির হোসেন আমির, লাকসাম উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুর রহমান বাদল, মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহ সুলতানা খোকন, উপজেলা বিএনপির সদস্য ও দৌলতগঞ্জ বাজার বনিক সমিতির আহবায়ক আলহাজ্ব মজির আহমদ, বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ডা: নুরুল্লাহ রায়হান, গোলাম ফারুক, আবুল হোসেন মিলন, গুম হওয়া হিরু-হুমায়নের সন্তান রাফসান ইসলাম, শাহরিয়ার কবির রাতুল। ২ উপজেলার হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে জনসভাটি জনসমুদ্রে পরিনত হয়।
জনসভার শুরুতে ৩১টি কবুতর উড়িয়ে বিএনপি’র ৩১ দফাকে স্বাগত জানানো হয়েছে।