অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় সেবা থেকে বঞ্চিত দৌলতগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের যাত্রীরা


নাসির উদ্দিন চৌধুরী\ দৌলতগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন। কোলাহল নেই যাত্রীদের। ট্রেন আসার আগে-পরে স্টেশন মাস্টারের সেই ঘন্টাও বাজে না। কুলিদের ট্রেনের বগিতে মালামাল উঠানো-নামানো নিয়েও নেই কোন ব্যস্ততা। রেলওয়ের নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় সরকার যেমনি হারাচ্ছে রাজস্ব তেমনি এ অঞ্চলের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে রেলওয়ের সেবা থেকে।
দৌলতগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা লাকসাম রেলওয়ে জংশনের কেবিন মাস্টার ইকবাল হোসেন জানান, এ স্টেশনটির টিকেট বিক্রিসহ সকল কার্যক্রম দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে। শুধু নোয়াখালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি আসা যাওয়ার পথে যাত্রা বিরতি করে। এতে যাত্রীরা উঠানামা করে, তাও কোন রকম সিগনাল ছাড়া। ট্রেনের চালক ও পরিচালক আইডিয়া (আন্দাজ) করে এ বিরতি দেন।
দেশের পূর্বাঞ্চলীয় বৃহত্তর লাকসাম রেলওয়ে জংশনের অদূরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণ কেন্দ্রে ব্রিটিশ সরকার এ স্টেশনটি স্থাপন করেন। এটি লাকসাম-নোয়াখালী রেললাইনের প্রথম স্টেশন। বর্তমানে এ স্টেশনে একদিন পর পর একটি ট্রেন যাত্রা বিরতি করে।
স্টেশন মাস্টারসহ কোন কর্মচারী না থাকায় এ স্টেশনটি একেবারে বন্ধ হওয়ার পথে। রেলওয়ের রাজস্ব আয় নেই এ স্টেশন থেকে। এদিকে শুধু স্টেশন বিল্ডিং ছাড়া এ স্টেশনের সকল জায়গা বেদখল হয়ে পড়েছে।
রেলওয়ে পরিবহন বিভাগ জানান, ঢাকা থেকে নোয়াখালীগামী আন্তঃনগর উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করলেও এ স্টেশনে যাত্রা বিরতি নেই। আর ঢাকা থেকে নোয়াখালীগামী নোয়াখালী এক্সপ্রেস ট্রেন একদিন পরপর এ রেল রুটে চলাচল করে। ওই ট্রেনটিই এখানে যাত্রা বিরতি করে। সামান্য কয়েকজন যাত্রী উঠানামা করলেও অধিকাংশই বিনাটিকেটি। কারন লোকবল সংকটের কারনে টিকেট বিক্রি হয় না।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা বানিজ্যের প্রানকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এ এলাকায় ব্রিটিশ সরকার গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৮৯৩ সালে ষ্টেশনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ স্টেশনের মাধ্যমে ট্রেনযোগে লাকসামের উৎপাদিত সরিষার তেল, আটা ময়দা, ধান, চাল, বিড়িসহ বিভিন্ন মালামাল দেশের নানা প্রান্তে নিয়ে যেত ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও লাকসাম খাদ্য গুদামের ধান, চাল, গম ট্রেনের মাধমে আনা নেয়া হতো।
লাকসাম রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী মজুমদার জানান, এ স্টেশনে একটি মেইল ও ২টি লুফ লাইন ছিল। লুফ লাইনগুলো দিয়ে ট্রেন ক্রসিং করা হতো। পাশাপাশি ট্রেনে আসা মালামাল লোড আনলোড করা হতো। কিন্তু ৯০ এর দশকে একটি লাইন উঠিয়ে পৌরসভা একটি সড়ক নির্মান করে ফেলে। বিগত সরকারের আমলে একইভাবে আরেকটি রেললাইনের উপর বাজার স্থাপন করেছে পৌরসভা। বর্তমানে শুধু মেইল লাইনটি চালু রয়েছে।