শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অপারেশন থিয়েটারে অতিরিক্ত অ্যানেসথেসিয়ায় রোগীর মৃত্যু

অপারেশন থিয়েটারে অতিরিক্ত অ্যানেসথেসিয়ায় রোগীর মৃত্যু

            ষ্টাফ রিপের্টার\ কুমিল্লা নগরীতে ভুল চিকিৎসায় মীম আক্তার (১৫) নামে এক কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে চিকিৎসকসহ হাসপাতালের কর্মকর্তারা গা ঢাকা দিয়েছেন।

            গত রোববার (২৩শে জুন) রাতে নগরীর ঝাউতলা এলাকায় হেলথ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। মীম আক্তার জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অলুয়া কৃষ্ণপুর এলাকার মো. বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। সে পাশের কংশনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

            অভিযুক্ত চিকিৎসক পাশের ফেইথ মেডিক্যাল সার্ভিসেসে রোগী দেখেন এবং হেলথ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করতেন বলে জানা গেছে।

            মীমের পরিবারের দাবি, অপারেশন থিয়েটারে অতিরিক্ত অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার কারণে হার্ট বøক হয়ে মারা গেছে মীম।

            পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ আগে গলায় টনসিলের ব্যথা নিয়ে মীম তার মায়ের সঙ্গে কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকার ফেইথ মেডিক্যাল সার্ভিসেস নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন চিকিৎসক মো. জহিরুল হকের কাছে যায়। তারপর চিকিৎসক জহিরুল হকের পরামর্শে গলার কিছু পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেখালে তিনি অপারেশনের কথা বলেন। সেই অনুযায়ী গত রোববার বিকেলে মীম তার মা লিপি আক্তারের সঙ্গে টনসিল অপারেশনের জন্য কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকার ফেইথ মেডিক্যাল সার্ভিসেস অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন চিকিৎসক মো. জহিরুল হকের কাছে আসেন। তারপর অপারেশনের খরচ বাবদ ১৪ হাজার টাকা লাগবে বলে জানান ওই চিকিৎসক। সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টায় চিকিৎসক জহিরুল অপারেশনের জন্য মীমকে একই এলাকার ফেইথ মেডিক্যাল সার্ভিসেসের পাশেই অবস্থিত হেলথ্ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার পর পরই মীমের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায়। ১০ মিনিট পর চিকিৎসক জহিরুল বের হয়ে স্বজনদের বলেন, মীমের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তাকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিতে হবে। হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় মীম।

            মীমের চাচাত ভাই শ্রাবণ ইসলাম বলেন, ‘ওটিতে নেয়ার কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলেন, আপনাদের মেয়ের অবস্থা ভালো না, তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। পরে তারা নিজ খরচে আমাদেরকে মেডিক্যালে পাঠাইছে। সেখানে গিয়ে আমাদেরকে ডা. জহির ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বলেন, বাড়িতে চলে যান আপনারা। প্রয়োজনে আরো টাকা দিবে বলেও জানান ডা. জহির। ইনজেকশন ভুল দেয়ার কারণেই আমার বোন মারা গেছে।’

            মীমের মা লিপি আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ে সুস্থ-স্বাভাবিক ছিল। গলায় ছোট একটা টনসিল হয়েছিল। অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে জহির ডাক্তার বের হয়ে বলেন, আমার মেয়ে হার্ট অ্যাটাক করেছে। তারপর তারাই আমার মেয়েকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এর আগে পথে আমার মেয়ে মারা গেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। সরকারের কাছে, প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।’

            মীমের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর জহির ডাক্তার আমারে অপারেশনের টাকা ফেরত দিতে চান। আমাকে বলছে আমরা যত টাকা চাই উনি আমাদের টাকা দেবেন। টাকা দিয়ে আমার মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছেন। আমরা রাজি না হওয়ায় জহির ডাক্তার আমার মেয়ের পরীক্ষার রিপোর্টসহ যাবতীয় কাগজ নিয়ে হাসপাতাল তালা মেরে পালিয়ে গেছেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা থানায় অভিযোগ করব। সিভিল সার্জন অফিসে অভিযোগ করব।’ এদিকে, ঘটনার কিছু সময় পরই ফেইথ মেডিক্যাল সার্ভিসেস অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টার এবং হেলথ্ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালের কর্মকর্তারা হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান। এই বিষয়ে চিকিৎসক জহিরুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’

Share This

COMMENTS