শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে  ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন নিয়ে আতঙ্ক

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন নিয়ে আতঙ্ক

            জান্নাতুল ফেরদাউস পুষ্প\ আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের মাধ্যমে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসে ফিরে এলে তা খুব ভয়ংকর হবে বলে মন্তব্য করেছেন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি নেটওয়ার্কের দ্য ভিউ টক শোতে তিনি এ কথা বলেন। ট্রাম্পের ফিরে আসা ঠেকাতে তিনি ডেমোক্র্যাটদের পাল্টা লড়াই চালানোর জন্য আহ্বান জানান।

            উল্লেখ্য, আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে জো বাইডেনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ে আইওয়া অঙ্গরাজ্যের দলীয় ককাসে ইতিমধ্যে বড় জয় পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার আইওয়া ককাসের মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে। এতে ট্র্যাম্প এগিয়েও গেছেন কিছুদূর।

            চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশন। এ নির্বাচনে জো বাইডেনের সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগ থেকেই।

            এ বিষয় নিয়েই মুখ খুলেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নভেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে আবার হোয়াইট হাউসে ফিরে এলে তা খুব ভয়ংকর হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি নেটওয়ার্কের দ্য ভিউ টক শোতে কমলা হ্যারিস এ কথা বলেন। ট্রাম্পের ফিরে আসা ঠেকাতে তিনি ডেমোক্র্যাটদের পাল্টা লড়াই চালানোর আহ্বান জানান।

            কমলা হ্যারিস বলেন, আমি ভয় পাচ্ছি বলেই সমস্ত দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছি। তবে তিনি বলেন, আমরা ভয় পাচ্ছি বলে পালিয়ে যাবো না। মুখোমুখি লড়ব। কিছুদিন আগেও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একই ধরনের কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ট্রাম্পের ফিরে আসা নিয়ে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন। তার স্ত্রী মিশেল ওবামার গলার সুরও শোনা গেছে অনেকটা একই রকমের।

            তবে এসবের মাঝেও যেন থেমে নেই ডেমোক্রেট পার্টির প্রচেষ্টা। ওবামা বেশ খোলামেলা আক্রমণ করে চলেছেন ট্রাম্পকে। এএফপি সুত্র বলেছেন, সম্প্রতি এক বক্তব্যে ওবামা বলেছেন, ট্রাম্প এমন একজন ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে ৯১টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপই বটে!

            এছাড়া, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন নিয়ে আতঙ্কিত রয়েছেন ইউরোপও। ইউরোপের রাজনীতিতে আবারো আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজার বিষয়ক প্রধান থিয়েরি ব্রেটন জানিয়েছেন, ট্রাম্প ২০২০ সালে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনকে সরাসরি বলে দিয়েছিলেন যে, ইউরোপ যদি কখনো আক্রমণের মুখে পড়ে, তবে যুক্তরাষ্ট্র কখনই আপনাদের সাহায্য করতে কিংবা সমর্থন দিতে আসব না। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি ইভেন্ট চলাকালীন ওই ঘটনাটি জানান ব্রেটন।

            এর মধ্যে শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারির ভোট। এতে জয়ী হওয়ার পথে আছেন ট্রাম্প। এমন অবস্থায় নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অস্ত্র উৎপাদন করতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আহ্বান জানান ব্রিটেন।

            একাধিক ইইউ কর্মকর্তা এবং কূটনীতিক সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইউরোপ মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের বাইরেও নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইউক্রেনকে সহায়তা পাঠাতে গিয়ে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর গোলাবারুদের মজুদ শেষ হয়ে গেছে।

            উল্লেখ্য যে, ইউরোপের নিরাপত্তায় আর ভূমিকা রাখতে চান না ট্রাম্প। তিনি যখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি নিয়মিত ন্যাটোর পেছনে অর্থ ব্যয়ের বিরোধিতা করেছেন। আবার একই সাথে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্রøাদিমির পুতিনসহ অন্য পশ্চিমা বিরোধী নেতাদেরও প্রশংসা করেছেন।

            এর মধ্যে ট্রাম্পের আবারো ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলো গত কয়েক দশক ধরে তাদের সামরিক বাহিনীর পেছেন ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। অপর দিকে ব্যয় ক্রমে বাড়িয়েই চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়েও ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ট্রাম্প।

            তাছাড়া, ইউরোপ বিশ্বাস করে, যদি কোনো যুদ্ধ হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই তাদের রক্ষা করবে। তবে ট্রাম্প সেই সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়েছিলেন। তিনি ও তার দল ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়নের বিরুদ্ধেও ছিলেন বলে জানা যায়। তাছাড়া দিন দিন ইউক্রেনের প্রতি মার্কিনিদের সমর্থন কমছে। এমনকি রিপাবলিকানদের বাঁধার কারণে ইউক্রেনের জন্য প্রয়োজনীয় মার্কিন তহবিলও পাস করা যাচ্ছে না। ইইউর একজন সিনিয়র কূটনীতিক সিএনএনকে বলেন, যখন ট্রাম্প এসেছিলেন তখন আমরা হঠাৎ করে আবিষ্কার করি যে, যুক্তরাষ্ট্র আসলে সবসময় ইউরোপকে বাঁচাতে আসবে না। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে তারা কিছু করবে না।

            ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন এই নতুন বাস্তবতা ইউরোপকে নিজের নীতি পর্যালোচনা করতে বাধ্য করেছিল। দেশগুলো এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে- ইউরোপকে এমন একটি ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই তারা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে।

            ইউরোপীয় কিছু কূটনীতিক জানিয়েছেন, ট্রাম্প চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে আপাতত শান্ত থাকা এবং ইউরোপকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রমে দূরে সরিয়ে নেয়া। এক ইইউ কর্মকর্তা সিএনএনকে আরো বলেন, ব্রাসেলস ট্রাম্পের কারণে বিভ্রান্ত হতে পারে না। ট্রাম্প যদি ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সমর্থন বন্ধ করতে চান তাহলে আমাদের উচিত সে দিকে বেশি মনোযোগ না দেয়া। আমাদের পরিপক্ব হতে হবে এবং যথারীতি কাজ চালিয়ে যেতে হবে। কারণ এই যুদ্ধ শেষ হলেও এর পরিণতি ইউরোপই বহন করবে, যুক্তরাষ্ট্রের নয়।

            ওদিকে, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্ড বলেন, এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, ইউরোপীয় কর্মকর্তারা চান না ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরুক। কারণ ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ইউরোপের জন্য হুমকি হবে। তার প্রথম মেয়াদে যেসব নীতি দেখা গেছে, তা অব্যাহত থাকলে আটলান্টিকের দুই পাড়ের মধ্যকার সম্পর্ক হয়তো আর কখনো একই রকম হবে না। ইউরোপের জন্য সব থেকে বড় সমস্যা হলো যে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা শেষ করতে তাদের আরো অনেক বছর, এমনকি সময় লেগে যেতে পারে  কয়েক দশক পর্যন্তও। সূত্রঃ সিএনএন

            তবে, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইতিমধ্যেই সমর্থন দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে চায় বিশ্ব। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

            যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ডেইলি মেইলে সাপ্তাহিক কলামে সাবেক এই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, ট্রাম্প যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে জয় এনে দিতে পারে তাহলে তার নতুন নেতৃত্ব বিশ্বের জন্য কল্যাণকর হবে।

            জনসন লিখেছেন, ট্রাম্প ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে প্রতারণা করবেন না, তিনি পুতিনের সঙ্গেও কোনো চুক্তি করবেন না। ট্রাম্পের অধীনে পশ্চিমা দেশগুলো আরও শক্তিশালী হবে এবং বিশ্ব আরও স্থিতিশীল হবে। অবশ্য, ন্যাটোর প্রকাশ্য সমালোচক ট্রাম্প এর আগে দাবি করেছিলেন, তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবেন।

            এদিকে, সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্রøাদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পকে কিয়েভ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। চ্যানেল ফোর নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আমন্ত্রণ জানান।

            জেলেনস্কি বলেন, আপনি (ট্রাম্প) যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে যুদ্ধ থামাতে পারেন তাহলে কিয়েভে চলে আসুন। আমি এখানেই আছি।

            এখানে প্রকাশ থাকে যে, সাবেক এই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ডেইলি মেইলে বছরে ১০ লাখ পাউন্ড বেতনে চাকরিতে নিয়োজিত রয়েছেন।

Share This