শনিবার, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘ইসরাইল নিপাত যাক’  হামাসের সমর্থনে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মিছিল!  হামাসের হাতে জিম্মি অনেক ইসরায়েলি

‘ইসরাইল নিপাত যাক’ হামাসের সমর্থনে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মিছিল! হামাসের হাতে জিম্মি অনেক ইসরায়েলি

৮৯ Views

    বিশেষ সংবাদদাতা\ গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে হামাসের সমর্থনে র‌্যালি করেছে মানুষ। এ সময় তারা ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকায় আগুন দিয়েছে। ইরাক, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনে ফিলিস্তিনি পতাকা দুলিয়ে বিক্ষোভ করেছে তারা। ইসরাইলের আঞ্চলিক শত্রæ বলে পরিচিত ইরানের পার্লামেন্ট অধিবেশন গত শনিবার শুরু হয়েছে সদস্যদের দুয়োধ্বনির মধ্য দিয়ে। তারা ¯েøাগান দিতে থাকেন- “ইসরাইল নিপাত যাক। ইসরাইল ধ্বংস হবে। বিজয়ী হবে ফিলিস্তিন।”

            ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, হামাসের অভিযানে প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযানের এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছে। লেবাননে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরগুলোতে শত শত মানুষ হামাসের অপারেশনকে সমর্থন করে রাস্তায় মিছিল করেছেন। বিপুল সংখ্যক মানুষ হামাসের পতাকা হাতে নিয়ে রাজধানী বৈরুতে চক্কর দেন মোটরসাইকেলে। দ্য ইলেকট্রনিক ইনতিফাদা ওয়েবসাইটের সহপ্রতিষ্ঠাতা আলি আবুনিমাহ বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের নিষ্পেষণ ও গণহত্যার কারণে ৮০ বছরের মধ্যে গত শনিবার সহিংস আক্রমণ করা হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা শুধু তাদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছেন।

            টাইমস অব ইসরাইল বলছে, হামাসের সমর্থনে ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে শনিবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ করেছেন ফিলিস্তিনিরা। এতে অংশ নেন শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীরা। তাদের হাতে ছিল ফিলিস্তিনি ও হামাসের পাতাকা। রাস্তায় নেচে-গেয়ে হামাসের প্রতি সমর্থন জানান তারা। একই রকম সমর্থনসূচক র‌্যালি হয়েছে রামাল্লাহ, হেবরন, নাবলুস ও জেনিনে। ইরানের রাজধানী তেহরানে ফিলিস্তিন স্কয়ারে সমবেত হন অনেক মানুষ। সেখানে আতশবাজিতে রাতের আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে। ইরানের রাজধানীর আজাদি স্কয়ারে একটি স্মৃতিস্তম্ভকে ফিলিস্তিনি পতাকার রঙে আলোকিত করা হয়। তার ওপর লেখা ওঠে- ক্রিমিনালদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিশোধ নিই।

এছাড়া, বাগদাদ মল নামে একটি শপিং মলেও আলোকিত করা হয় ফিলিস্তিনি পতাকার রঙে। লেখা হয়- আল আকসা ডিল্যুজ। হামাসের অপারেশনের প্রতি সমর্থন দিয়ে এ কথা লেখা হয়। ইরাকের বসরা নগরীতেও হামাসের সমর্থনে র‌্যালি হয়েছে। সেখানে জনতা তাদের গাড়ি চালিয়ে এবং হামাসের, ফিলিস্তিনের পতাকা দুলিয়ে র‌্যালিতে অংশ নেন। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ফাতিহ মসজিদের সামনে সমবেত হন হাজারো জনতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে দ্রæততার সঙ্গে বলেন, এতে যোগদানকারীরা আরব শরণার্থী। স্থানীয় কেউ নন। ইয়েমেনের তাইজ শহরেও র‌্যালি হয়েছে। এই শহরটি হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর হুতিদের সমর্থন দেয় ইরান।

            ওদিকে, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের চলমান হামলায় ইসরায়েলে বেশ কয়েকজন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। গত ৮ই অক্টোবর রোববার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

            পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বেশ কয়েকজন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছে বলে আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে। আমরা এটি যাচাই করার জন্য ওভারটাইম কাজ করছি। অবশ্য এক দিন আগেই মার্কিন দূতাবাস মৃত বা নিখোঁজ নাগরিকদের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেছিল। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।

            শনিবার সকালে ইসরায়েলে ‘আল আকসা ফাড’ অপারেশন শুরু করে হামাস। এখন পর্যন্ত দেশটিতে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৬০০ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় ৩৭০ জন ফিলিস্তিনি নাগরিকও নিহত হয়েছে। হতাহতের এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

            ওদিকে, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সামরিক সংগঠন হামাসের হাতে ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ বেসামরিক ইসরায়েলি নাগরিক জিম্মি রয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। খবর বিবিসির।

            ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র লে. কর্নেল জোনাথন কনরিকাস জানান, জিম্মিদের মধ্যে কেউ কেউ বেঁচে আছেন, আবার কেউ মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জিম্মিদের মধ্যে শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও পঙ্গু লোকও রয়েছেন।

            জোনাথন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যত লোককে ধরে নিয়ে গেছে, তা কল্পনাতীত। এ বিষয়টিই যুদ্ধ কোন্ দিকে যাবে, তা নির্ধারণ করে দেবে।’

            হামাস বলেছে, তাদের হাতে আটক লোকের সংখ্যা যেকোনো সময়ের চাইতে অনেক বেশি। আটকদেরকে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়েছে।

            ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘জিম্মি করা লোকজনের পরিণতির জন্য হামাস দায়ী থাকবে। আর তাদের কোনো ক্ষতি হলে জড়িতদের সঙ্গে হিসাব মিটিয়ে ফেলা হবে।’

            এদিকে, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বেশকিছু ভিডিওতে হামাস যোদ্ধাদের হাতে বন্দি ইসরায়েলি নাগরিকদের দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বন্দিদের নিয়ে একটি ট্রাক জনতার ভিড়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আরেকটি ভিডিওতে গাজায় একজন নারীকে টেনে হিঁচড়ে ট্রাকের পেছন থেকে নামাতে দেখা যায়। এ সময় তার রক্তাক্ত দুই হাত পেছনে বাঁধা ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে এসে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন।

            অন্যদিকে, গাজা উপত্যকার বাইরে দক্ষিণাঞ্চলের দু’টি অবস্থান থেকে বেশ কয়েকজন অপহৃত ইসরায়েলিকে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা মুক্ত করেছেন। কিব্বুজ বিইরি এলাকার একটি বাড়ির ডাইনিং রুম থেকে কয়েকজন জিম্মিকে ১৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার করেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেখানে প্রায় ৫০ জনকে আটকে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম।

            এছাড়া, ইসরায়েল-এর তেল আভিভ থেকে সংবাদ সংস্থা এপি’র খবরে বলা হয়েছে যে, ইসরায়েলি সরকার গত রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং হামাসের বিরুদ্ধে তার আকস্মিক আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ‘উল্লে­খযোগ্য সামরিক পদক্ষেপের’ জন্য সবুজ আলো দিয়েছে। কারণ সামরিক বাহিনী এখনও দক্ষিণ শহরগুলোতে  যোদ্ধাদের দমন করার চেষ্টা করেছে এবং তারা বোমাবর্ষণ তীব্র করেছে গাজা স্ট্রিপের। এতে উভয় পক্ষের ১১ শতাধিক মানুষজন নিহত এবং হাজার হাজার আহত হয়েছেন।

            হামাস গাজা থেকে অভূতপূর্ব আক্রমণ শুরু করার ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় পরে, ইসরায়েলি বাহিনী এখনও বেশ কয়েকটি শহরে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের শেষ দলগুলোকে পরাস্ত করার চেষ্টা করছে। ইসরায়েলে কমপক্ষে ৭ শ’ জন নিহত হয়েছে বলেও জানা গেছে। দেশটি কয়েক দশকের মধ্যে এমন একটি স্কেলে বিস্ময়কর আক্রমণ অনুভব করেনি। আর ইসরায়েলি বিমান হামলার কারণে গাজায় ৪ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে।

            তবে যুদ্ধের এহেন ঘোষণা সামনে আরও বৃহত্তর যুদ্ধের ইঙ্গিত দেয় এবং একটি প্রধান প্রশ্ন ছিল ইসরায়েল গাজায়স্থল হামলা চালাবে কিনা, এমন একটি পদক্ষেপ যা অতীতে তীব্র হতাহতের ঘটনা নিয়ে এসেছে। এদিকে, উত্তর ইসরায়েলে, লেবাননের হিজবুল্লাহ জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে একটি সংক্ষিপ্ত হামলার বিনিময়ে এই আশংকা জাগিয়েছিল যে, যুদ্ধটি একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধে প্রসারিত হতে পারে।

            এই যুদ্ধ সম্পর্কে সিএনএন খবর দিয়েছেন যে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, ইসরায়েলে মৃতের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে যাবে এবং ২ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।

            ইসরায়েল গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে এবং রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, ব্যাপক সামরিক প্রতিক্রিয়ার মঞ্চ তৈরি করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৪ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিও মারা গেছে।

            তবে, ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়ার সম্পূর্ণ মাত্রা অস্পষ্ট রয়ে গেছে, তবে একজন সামরিক মুখপাত্র ইঙ্গিত দিয়েছেন যে দেশটি ২০০৫ সালের পর প্রথমবারের মতো গাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

            ওদিকে, গত ৮ই অক্টোবর গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছেন যে, শনিবার থেকে এখন পর্যন্ত ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ২,৩০০ জন আহত হয়েছে। আর এমতাবস্থায় এই অঞ্চলে বিদ্যুত লাইন কাটা ‘চিকিৎসা খাতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে চিকিৎসার প্রয়োজন এমন আরও শত শত লোকের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

            সর্বশেষ দ্যি টাইমস্ অফ ইসরাঈল পত্রিকার সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত শনিবারের যুদ্ধ ইসরায়েল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তাক্ত একটি দিন ছিল। সেদিন ইসরায়েল গাজায় হামাসের হামলায় মৃতের সংখ্যা ৭ শ’ ছাড়িয়েছে, অন্তত: একশত জনকে অপহরণও করা হয়েছে। আহত হয়েছে দুই সহস্রাধিক মানুষ। সীমান্ত এলাকা থেকে অনেক ইসরায়েলিকে ইতিমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

            গত ৮ই অক্টোবর হামাস সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রমণের পর দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সেডেরটের কাছে অতিরিক্ত আইডিএফ সৈন্য মোতায়েন করায় ইসরায়েলি বাহিনী একটি সাঁজোয়া কর্মী বাহক (এপিসি) এ একটি প্রধান সড়ক অতিক্রম করছে বলে জানিয়েছে এএফপি।

            আর ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে গত রবিবার একটি যুদ্ধের রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে- কারণ এক দিন আগে হামাসের একটি নজিরবিহীন হামলায় মৃতের সংখ্যা ৭ শতের উপরে উঠেছিল এবং আরও বাড়তে পারে বলেও আশংকা করা হয়েছিল।

            তদুপরি, ইসরায়েলি জেটগুলি রবিবার বিকেলেও গাজায় ল্যবস্তুতে ‘তীব্র’ বিমান হামলা চালায়। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় ঘোষণা করার পরপরই যে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গত শনিবার সন্ধ্যায় দেশটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে রাখার জন্য ভোট দিয়েছে, যার অর্থ এটি ‘আরো উল্লেখযোগ্য সামরিক কার্যক্রম চালাতে পারে।’      ওদিকে, ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালাতে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এতেই ােভে ফুঁসে ওঠে আমেরিকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা। প্রতিবাদ জানাতে প্রিয় মাতৃভূমির পতাকা বুকে জড়িয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে শত শত ফিলিস্তিনি। এ সম্পর্কে নিঊইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ঠিকানা’র খবরে বলা হয়েছে যে, আমেরিকার বিরুদ্ধে শুধু ¯েøাগানই নয়, তারা জানিয়েছে অভিনব প্রতিবাদ। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সড়কে উড়িয়ে দিয়েছে ফিলিস্তিনের পতাকা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায়, বিক্ষোভ মিছিলের একপর্যায়ে মার্কিন পতাকার পাশে টাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে ফিলিস্তিনের পতাকা। হোয়াইট হাউস, নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারসহ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিল বের করে শত শত ফিলিস্তিনি। প্ল্যাকার্ড আর ¯েøাগানে মুখরিত ছিল এসব সড়ক।

            ইসরায়েলকে জঙ্গিবিমান আর যুদ্ধজাহাজ দেওয়ায় ধিক্কার জানান বিক্ষোভকারীরা। বলেন, প্রতিরোধ গড়া কোনোভাবেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম নয়। তাই যুক্তরাষ্ট্র নিরীহ ফিলিস্তিনিদের মারতে যেভাবে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। এ সময় নেতানিয়াহু সরকারকে তহবিল পাঠানোর বন্ধের আহŸান তারা।

            ইসরায়েলের প্রতি হামাসের হামলার সমর্থনে ৮ অক্টোবর রোববার হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হন ফিলিস্তিনিরা। তারা বলেন, নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে দিনের পর দিন লড়াই করে যাচ্ছে গাজাবাসী। এদিন ইসরায়েলকে সমর্থন জানাতে পাল্টা মিছিল বের করেন আমেরিকায় বসবাসকারী ইসরায়েলিরা। বিশেষ করে তাদের সরকারের পাশে থাকার জন্য বাইডেন প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। একই জায়গায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ ডাকায় চির বৈরী দুই দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে।

            গত শনিবার হঠাৎই ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তাদের দাবি, দশকের পর দশক ধরে তাদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে এমন হামলা চালানো হচ্ছে।

            আমেরিকার ধারণা, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যকার চলমান শান্তি আলোচনা বিঘিœত করতে এই হামলা চালাতে পারে হামাস। আমেরিকার এমন ঘোষণাকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বলে আখ্যা দেয় হামাস। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, আমেরিকার এই ঘোষণা প্রমাণ করে, তারা দখলদারদের সমর্থনে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে অবস্থান নিয়েছেন ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষেই।

            ওদিকে, রাশিয়া আহŸান জানিয়েছেন যে, ফিলিস্তিনের গাজায় সশস্ত্র শাসকগোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বিধায় এই সংঘাত সমাধানের জন্য ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার করা হোক। গত ৯ই অক্টোবর সোমবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই আহŸান জানিয়েছেন।

মস্কোতে আরব লিগের প্রধান আহমেদ আবুল আহমেদ আবুল ঘেইতের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের আলোচনাই এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়। কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধান করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে, সেদিকেই বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার।

            এর আগে একই দিনে রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের বর্তমান সংঘাতের পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক বিস্তৃত হতে পারে। এই বিষয়টা নিয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। যার কারণে এটি আজ আমাদের বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

            প্রসঙ্গত, শনিবার ভোরের দিকে গাজার ক্ষমতাসীন সশস্ত্র শাসকগোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে আচমকা হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় অনবরত বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। হামাসের কাছ থেকে গাজা সীমান্তের বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে অভিযান পরিচালনা করছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফিলিস্তিনি হামলায় এক দিনে এত মানুষ আর কখনো মরেনি।

Share This