উচ্চকক্ষে ১০০ সদস্য, বাছাই হবে পিআর পদ্ধতিতে


জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে থাকবে ১০০টি আসন, যা নির্ধারিত হবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর)। অর্থাৎ, জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যে পরিমাণ ভোট পাবে, সেই অনুপাতে তাদের মধ্যে এই আসনগুলো বণ্টন করা হবে।
এই সিদ্ধান্ত এসেছে দীর্ঘ আলোচনার পর, তবে তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। বিএনপি এবং তাদের মিত্র রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। তাদের দাবি—উচ্চকক্ষের সদস্য মনোনয়ন হওয়া উচিত জাতীয় নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে, শুধুমাত্র ভোটের ভিত্তিতে নয়।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান দ্বিতীয় দফার আলোচনার ২৩তম দিনের বৈঠকে এই মতপার্থক্য সামনে আসে। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, আজকের মধ্যেই আলোচনা পর্ব শেষ করতে চান তারা। তিনি বলেন, “আমরা দ্রুত চূড়ান্ত সনদ প্রস্তুত করে আপনাদের হাতে তুলে দেব এবং পরবর্তীতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হবে।”
আজকের আলোচনায়ও উচ্চকক্ষের সদস্য মনোনয়নের পদ্ধতি ঘিরে দীর্ঘ বিতর্ক চলে। কমিশন সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর মোট ভোটের ভিত্তিতে আসন বণ্টনের প্রস্তাব করলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা কিছু দল তাতে সমর্থন জানায়। অন্যদিকে বিএনপি ও তার মিত্র জোটগুলো প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে মনোনয়নের দাবি জানায়।
দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত না হওয়ায় বিষয়টি কমিশনের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। কমিশন শেষ পর্যন্ত সংখ্যানুপাতিক ভোট পদ্ধতির পক্ষেই অবস্থান নেয়।
কমিশনের খসড়া অনুযায়ী, উচ্চকক্ষে আইন প্রণয়নের নিজস্ব ক্ষমতা থাকবে না। তবে অর্থবিল বাদে অন্যান্য সব বিল উভয় কক্ষে উপস্থাপন করতে হবে। উচ্চকক্ষ কোনো বিল এক মাসের বেশি আটকে রাখতে পারবে না—তা হলে ধরে নেওয়া হবে, বিলটি অনুমোদিত। উচ্চকক্ষের দায়িত্ব হবে নিম্নকক্ষের বিলগুলো পর্যালোচনা করা এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তা অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করা। প্রত্যাখ্যান হলে, সংশোধনের সুপারিশসহ বিলটি ফেরত যাবে নিম্নকক্ষে, যেখানে তা আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে গৃহীত কিংবা বাতিল হতে পারে।
এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বিএনপি, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এনডিএম ও এলডিপি। তারা উচ্চকক্ষে আসন বণ্টনের ভিত্তি হিসেবে আসনসংখ্যাকে প্রাধান্য দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, দেশের বর্তমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় উচ্চকক্ষের প্রয়োজন নেই।
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। বৈঠকটি পরিচালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং আইয়ুব মিয়া।