
অতিরিক্ত ওজন আমাদের শরীরের জন্য শুধু একটি শারীরিক সমস্যা নয়, এটি ধীরে ধীরে নানা ধরনের জটিল রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হাঁটুর ব্যথা কিংবা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাগুলো ঘিরে ধরতে পারে। শুধু সৌন্দর্য নয়, সুস্থতার জন্যও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
ওজন কমানোর জন্য প্রথমেই পরিবর্তন আনতে হয় খাদ্যাভ্যাসে। প্রতিদিনের খাবারে সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। বেশি করে খেতে হবে শাকসবজি, ফলমূল, ডাল ও লো-ফ্যাট প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। অতিরিক্ত চিনি, তেল ও প্রসেসড ফাস্টফুড এড়িয়ে চলতে হবে। সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার নিয়ম মেনে খাওয়া দরকার এবং একসাথে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে কয়েকবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে তা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি শরীরের বিপাকক্রিয়া সচল রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে।
শুধু খাবার পরিবর্তন করলেই হবে না, ওজন কমাতে হলে দৈনন্দিন জীবনে শরীরচর্চা বা ব্যায়ামকে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো বা হালকা ব্যায়াম করলে তা শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ করতে সাহায্য করে। যারা বাড়িতে সময় দিতে পারেন না, তারা বাসায় বসেই ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, যোগব্যায়াম বা হোম ওয়ার্কআউট করে সুফল পেতে পারেন। অনেক সময় মানসিক চাপ বা পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবেও শরীর ওজন ধরে রাখতে পারে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য ধ্যান, বই পড়া বা ভালো কোনো শখে সময় দেওয়া যেতে পারে।
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধৈর্য। দ্রুত ফল পাওয়ার আশায় কঠোর ডায়েট বা অস্বাস্থ্যকর চর্চা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। বরং ধীরে ধীরে ছোট ছোট পরিবর্তন এনে দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া সম্ভব। প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ কেজি ওজন কমানোই যথেষ্ট এবং সেটিই স্বাস্থ্যকর।
সত্যি বলতে, ওজন কমানো কোনো ম্যাজিক নয়। এটি একটি জীবনধারা, যা সময়ের সঙ্গে গড়ে তুলতে হয়। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার মাধ্যমে আপনি নিজেকে রাখতে পারেন ফিট ও রোগমুক্ত। আজ থেকেই শুরু করুন—একটি ভালো সিদ্ধান্ত আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারে।