কীট সংকটে হচ্ছেনা শনাক্ত; উপসর্গ নিয়ে ঘুরছে মানুষ কুমিল্লায় বাড়ছে করোনার প্রকোপ


ষ্টাফ রিপোর্টার\ কুমিল্লায় এক নারীসহ ৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এরমধ্যে ২ জন ঢাকার ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও ২ জন কুমিল্লায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
করোনা সংক্রমণের খবরে কুমিল্লা জেলায় আতঙ্ক ছড়ালেও তেমন কোন প্রস্তুতি নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। কীট সংকটে ব্যাহত হচ্ছে উপসর্গ নিয়ে আসাদের নমুনা পরীক্ষা। পাশাপাশি আক্রান্তদের চিকিৎসায়ও রয়েছে উদাসীনতার অভিযোগ।
এদিকে দীর্ঘদিন রক্ষাণাবেক্ষণের অভাবে আরটিপিসিআর ল্যাব ও আইসোলেশন ইউনিটগুলোও প্রায় অকেজো। জনবল সংকটে বন্ধ করোনা রোগীদের জন্য স্থাপিত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও জেনারেল হাসপাতালের আই সি ইউ সেবা। তবে দ্রæত সময়ের মধ্যে করোনা সনাক্তের কিট পৌঁছাবে বলে জানান জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। দেয়া হচ্ছে চিকিৎসার প্রস্তুতিসহ বন্ধ আইসিইউ সেবা চালুর আশ্বাস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা সনাক্তের কীট নেই কুমিল্লায়। কীট সংকটে লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে ঘুরছেন মানুষ। ইতিমধ্যে কীট আসার কথা থাকলেও সেটিও অনিশ্চিত। করোনা পরীক্ষার অধিকাংশ আরটিপিসিআর ল্যাবে অচল। অকেজো হয়ে পড়েছে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত আইসোলেশন ইউনিটগুলো। করোনা রোগীদের জন্য স্থাপিত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও জেনারেল হাসপাতালের আই সি ইউ সেবা বন্ধ রয়েছে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে। তাই করোনা চিকিৎসা ও শনাক্তে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন মানুষ।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জুন মাসে ইমারজেন্সি রেসপন্স এন্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে চালু করা হয় দু’টি বিশেষ আইসিইউ ইউনিট। এই প্রকল্পের আওতায় সরঞ্জাম কেনা ও জনবল নিয়োগ করা হলেও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সব কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বর্তমানে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের ৩০টি আইসিইউ বেডের মধ্যে মাত্র দু’টিতে চিকিৎসা সেবা চালু রয়েছে। বাকি ২৮টি বেড ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে আছে। একই অবস্থা কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। সেখানকার ৩০টি বেডের মধ্যে মাত্র ১০টি সচল রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কয়েক মাস ধরে কোনো বেতনভাতা পাচ্ছেন না। ফলে অনেকেই চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। যারা এখনো আছেন, তারা সীমিত জনবল নিয়ে কোনো রকমে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে কোটি কোটি টাকার জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ডেডিকেটেড আইসিইউ ইউনিটের ইনচার্জ ডা. আবদুল মুকতাদির বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় জনবল সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র একজন চিকিৎসক ও চারজন নার্স দিয়ে চলছে একটি ইউনিটের কার্যক্রম। এতে রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাইন উদ্দিন মিয়াজী বলেন, আমরা যারা এখনো কাজ করছি, তারা শুধুমাত্র দায়িত্ববোধ থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারি সিদ্ধান্ত না এলে এই সেবা চালু রাখা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, আমরা চাই নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে আবারও জনবল ফিরিয়ে আনা হোক।
করোনা উপসর্গ নিয়ে কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আসা মনির হোসেন বলেন, করোনার লক্ষণ রয়েছে শরীরে। পরীক্ষা করতে পারলে নিশ্চিত হতে পারতাম। কিন্তু পরীক্ষার কীট না থাকায় এখন একটি দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে।
এদিকে কুমিল্লায় করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়লেও কীট সংকটে নতুন কোন ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারেনি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এর আগে ১৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় এক নারীসহ ৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়।
কীট সংকটের বিষয়ে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন আলী নুর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ জানান, পুরনো কীটগুলো নষ্ট হয়েছে। নতুন কীটের জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রকোপ ভাড়ছে। তবে চিকিৎসার জন্য পুরনো আইসোলেশন ইউনিটগুলো প্রস্তুত করা হবে। একই সঙ্গে বন্ধ আইসিইউ পুণরায় চালুরও পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ঝুকি এড়াতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য পরামর্শ উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দিলেই তা যাতে করে আইসোলেশন থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নেয়। একই সঙ্গে মাস্ক, হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করেন। যাতে করে অন্য ব্যক্তি আক্রান্ত না হতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন। জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট পুরোদমে চালু করতে অন্তত ১৫ জন জনবল প্রয়োজন। বর্তমানে জেলায় ৭২ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন রয়েছে। ষাটোর্ধ্ব ও অন্তসত্তাদের দেয়া হবে এই ভ্যাকসিন।