বৃহস্পতিবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লায় আলুর বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম নেই; তদুপরি সংরক্ষনের অভাবে বিপাকে কৃষকরা

১৭ Views

            নিজস্ব প্রতিনিধি\ কুমিল্লায় আলুর বাম্পার ফলন হলেও সংরক্ষণ ও ন্যায্য দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। নিজেদের উৎপাদিত আলু এখন গলার কাটা। স্থানীয় কোল্ডস্টোরেজগুলোতেও জায়গা না পাওয়ায় খোলা আকাশের নীচে এবং গাছতলায় কোন রকম ত্রিপল টানিয়ে সংরক্ষণ করছেন। অনেকের আলুতে পচন ধরেছে। দাম বাড়ার আশায় দীর্ঘ দেড় মাসেরও বেশি সময় অপেক্ষার পরও সেই আলু নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেক কৃষক।

            সরেজমিনে বুড়িচং উপজেলার মিথলমা, আবিদপুর, মনঘাটা, শিকারপুর, পাঁচকিত্তা, হালাগাও, লোয়ার চর, কাকিয়ার চর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে খোলা জায়গায়, গাছতলায়, বাড়ির উঠোন ও ঘরের ভেতর আলুর স্তুপ দেয়া হয়েছে। অনেকেই আবার জমিতেই স্তুপ করে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রেখেছেন আলু। কেউ আবার ত্রিপল খুলে বেছে বেছে পচা ও পোকায় খাওয়া আলু ফেলে দিচ্ছেন।

            একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি মণ আলু উৎপাদন করতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৭৫০-৮০০ টাকা। অথচ বাজারে এক মণ আলু পাইকারী বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। যার কারণে বাধ্য হয়ে দেশীয় কায়দায় তারা আলু সংরক্ষণ করছেন। তবে বৃষ্টি হলে অপরিকল্পীত সংরক্ষণের কারণে কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে। তারা বাধ্য হয়ে অনেকেই কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন আলু।

            কৃষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বীজ, হাল চাষ, সার, ওষুধ ও কামলা খরচসহ সব মিলিয়ে প্রতি মণ আলু উৎপাদন করতে প্রায় ৭৫০ টাকা খরচ হয়েছে। অথচ এখন বাজারে আলু বিক্রি করতে চাইলে পাইকাররা বলছে এক মণের দাম ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। যার কারণে আলু বিক্রি করতে পারছিনা আমরা। আমার বাড়ির উঠানে ৫০০ মণ আলু ত্রিপল দিয়ে ডেকে রেখেছি।

            মোস্তফা মিয়া নামে আরেক কৃষক বলেন, প্রতি কেজি আলু ১৩ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করছি। অথচ বাজারে খুচরা আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা। আমরা আলু উৎপাদন করে কি দোষ করে ফেলেছি? মৌসুম শেষে মজুদ কমে আসলে ১৩ টাকার আলুই বিক্রি হবে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। আমরা যদি নিজেরা এই আলু সংরক্ষণ করতে পারতাম তাহলে মজুতদারদের পরিবর্তে লাভবান আমরাই হতাম।  আলু চাষি সুমন মিয়া বলেন, শখের বসে এ বছর ৪২ শতক জমিতে আলু লাগিয়েছি। ফলনও ভালো হয়েছে। বর্তমানে আমার কাছে প্রায় ৬০ মণ আলু রয়েছে। অন্যান্য বছর দেখি পাইকাররা বাড়িতে এসে আলু নিয়ে যায় কিন্তু এবার কেউই আসছে না। শুনেছি নিমসার বাজারে উত্তরবঙ্গ থেকে আনা আলু বেশি বিক্রি হচ্ছে। গ্রাম থেকে আলু সংগ্রহ করতে হলে শ্রমিক খরচ এবং পরিবহন করো দু’টোই লাগে তাই তারা এদিকে আগ্রহ দেখায় না।

            কৃষকদের অভিযোগ, উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা আলু পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খরচ দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা যায়। যারা ট্রাকে করে আলু পাঠান সে আলু সংরক্ষণের দায়িত্ব তাদেরই থাকে। বিক্রি না হলে পচে যাওয়ার ক্ষতির দায় না থাকায় আড়তদাররা বাইরে থেকে আসা আলু ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দিয়ে থাকেন বেশি। অন্যদিকে যারা আলু বেসরকারিভাবে মজুদ করেন তাদের আলু দিয়ে ভর্তি হয়ে গেছে স্থানীয় কল্ডেস্টোরেজগুলো। একদিকে আড়ৎদারদের কাছে চাহিদা নেই স্থানীয় আলুর অপরদিকে কোল্ড স্টোরেজে নেই জায়গা- মাঝখানে বিপুল পরিমাণ আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। নিমসার বাজারের আলুর আড়তদার মো. আজিম বলেন, সারা বাংলাদেশের কোল্ড স্টোরেজদের সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে। জানা মতে কোথাও জায়গা নেই। তারপরও সরকার যদি খোঁজ নিয়ে কোল্ড স্টোরেজগুলোতে জায়গা করতে পারে তাহলে আমাদের স্থানীয় আলুগুলো রাখার ব্যবস্থা করলে কৃষক বেঁচে যাবে। এই বিপুল পরিমাণ আলু পচনের হাত থেকে বাঁচানো গেলে আলুর দাম মানুষের নাগালের মধ্যে সারা বছরই থাকবে।

            কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, এবছর জেলায় আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১০ হাজার ২৫৪ হেক্টর জমি। উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ৬১ একর জমিতে। ফলন উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ ৯০ হাজার ৭৮ টন, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। আমরা ২০২৪ সালের বন্যার পর চেষ্টা করেছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে আলু চাষ করতে হয়। যেসব জমিতে আলু চাষ হয়েছে ফলন খুবই ভালো হয়েছে। কিন্তু যে পরিমাণ আলু এখনো অবিক্রিত রয়ে গেছ এসব বিষয় নিয়ে কাজ করবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

Share This

COMMENTS