বৃহস্পতিবার, ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লায় মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার ছেলে ও তার স্ত্রী আটক

কুমিল্লায় মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার  ছেলে ও তার স্ত্রী আটক
১০ Views

            নিজস্ব প্রতিনিধি\ কুমিল্লা নগরে এক বৃদ্ধা ও তার মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই নারীর আরেক মেয়েসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই বৃদ্ধার ছেলে ও তার স্ত্রী তাদের শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন। পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশের ভাষ্য, নিহত ব্যক্তিদের মরদেহে আঘাতের তেমন কোনো চিহ্ন নেই। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে। এ ঘটনায় বৃদ্ধার ছেলে ও তার স্ত্রীকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

            গত রোববার সন্ধ্যায় নগরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের রামনগর এলাকা থেকে মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশ। মৃতরা হলেন- রামনগর এলাকার মৃত আবু তাহেরের স্ত্রী লুৎফা বেগম (৭০) ও তার মেয়ে আয়েশা আক্তার ওরফে শিল্পী (৪০)। লুৎফা বেগম এক ছেলে ও দুই মেয়ের জননী। আয়েশা আক্তার তার মায়ের সঙ্গে থাকতেন। এ ঘটনায় লুৎফা বেগমের ছেলে শাহিন হোসেন (৩৭) ও তার স্ত্রী লাকি আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

            ওইদিন দুপুরে আশপাশের মানুষজন খাটে মা-মেয়ের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা ওই নারীর ছেলে ও তার স্ত্রীকে আটক করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে মরদেহ দু’টি উদ্ধার করে এবং স্বামী-স্ত্রী দু’জনকে হেফাজতে নেয়।

            কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘ওই বৃদ্ধার ছেলে ও তার স্ত্রীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় এনেছি। ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত চলছে। পরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

            নিহত লুৎফা বেগমের মেয়ে হাসিনা আক্তার ওরফে শিউলী বলেন, ‘আমার ভাই ও তার স্ত্রী লাকি আমার মাকে অনেক নির্যাতন করত। ওইদিন সকালেও ঝগড়া করেছিল মায়ের সঙ্গে। দুপুরে খবর পাই, আমার মা ও বোনকে হত্যা করা হয়েছে। তারপর এসে দেখি, বাড়িতে হইচই। আমি আমার ভাই ও তার স্ত্রী লাকির ফাঁসিসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।’

            হাসিনা আক্তার আরও বলেন, ‘আমার মা পাঁচ বছর আগে স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভালোভাবে হাঁটাচলা করতে পারতেন না। এ নিয়ে শাহিনের স্ত্রী লাকি মাকে ঠিকমতো খাবার দিতেন না, সব সময় অত্যাচার করতেন, মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। অবশেষে তারা মেরেই ফেলল। আশপাশের মানুষজন থেকে শুনেছি, আমার বোন শিল্পী (আয়েশা আক্তার) মাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাকেও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পারিবারিক কলহ ছাড়াও মূলত সম্পত্তির লোভেই আমার মা ও বোনকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা চাই, পুলিশ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু বের করুক।’

            স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পরিবারটিতে দীর্ঘদিন ধরে কলহ লেগেই ছিল। প্রায়ই ছেলে শাহিন ও তার স্ত্রী লুৎফা বেগমকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতেন। বোন আশেয়া আক্তারকেও নির্যাতন করতেন শাহিন ও তার স্ত্রী। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঘটনার আগের দিন গত শনিবার রাতেও পরিবারটিতে ঝগড়া চলছিল। অনেক ঝগড়াঝাঁটির একপর্যায়ে শাহিন বলেছিলেন, ‘তোরা পারলে পুলিশ আন, সবডিরে মাইরালামু।’ তবে আজ দুপুরে কী হয়েছে, সেটা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।

            সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ইপিজেড ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম জানান, দু’টি মরদেহের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। এ কারণে কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে, সেটা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর হয়েছে।

Share This

COMMENTS