কুমিল্লার কালিকাপুরে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৭ জন যাত্রী নিহত
ষ্টাফ রিপোর্টার॥ কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কালিকাপুর রেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ৭ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার বাকশিমুল ইউনিয়নের কালিকাপুর রেল ক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ। এঁদের মধ্যে একজন নারী ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। ঘটনাস্থলের প্রায় ৩০০ মিটারের মধ্যে নিহত ব্যক্তিদের লাশ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রেলপথে পড়ে ছিল। এ ঘটনায় অপর একজনও গুরুতর আহত হয়েছেন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজনই বুড়িচং উপজেলার বাকশিমূল গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন- তৈয়ব আলীর ছেলে অটোচালক সাজু মিয়া (৩৮), মৃত: মুনসুর আলীর ছেলে আলী আহমেদ (৮০), মৃত: আবদুল খালেকের স্ত্রী লুৎফা বেগম (৫৫), মনির হোসেনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শাহিনুর আক্তার ওরফে শানু (৩৫) ও আলী আশ্রাফের স্ত্রী সফরজান বেগম (৬৫)। নিহত অপর দুজন হলেন পাশের খোদাইধুলি গ্রামের মৃত আছমত আলীর ছেলে রফিস মিয়া (৬০) ও মৃত ফজলু মিয়ার স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম (৬৫)।
এ দুর্ঘটনার ব্যাপারে লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরান হোসেন জানিয়েছেন যে, ‘ওই এলাকায় রেলওয়ের কোনো বৈধ লেভেল ক্রসিং নেই। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই লেভেল ক্রসিংটাও অবৈধ। অটোরিকশাচালকের অসাবধানতার কারণে এতগুলো প্রাণ গেছে। এ ঘটনায় রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে যে, মঙ্গলবারে বাকশিমূল গ্রাম থেকে সাজু মিয়ার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে ওই যাত্রীরা সবাই পাশের গাজিপুর বাজারে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কালিকাপুর এলাকায় রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় যাত্রীবাহী অটোরিকশাটি হঠাৎ রেলপথে উঠে যায়। এতে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৫ জন এবং পরে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার সময় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত অপর একজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
এ দুর্ঘটনা সম্পর্কে জনৈক প্রত্যক্ষদর্শী আশিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমি ঘটনাস্থলের পাশেই ছিলাম। ট্রেনটি হুইসেল দিয়েই আসছিল। এরপরও সাজু মিয়া অটোরিকশা নিয়ে রেললাইনে উঠে পড়েন। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, ট্রেন আসার আগেই পার হতে পারবেন। কিন্তু এর আগেই তো সব শেষ হয়ে গেল। দুর্ঘটনার পর আশপাশের মানুষ চিৎকার দিয়ে ছুটে আসেন। ১০ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা ঘটনাস্থলে চলে আসেন। কিন্ত ঘটনাস্থলের প্রায় ৩০০ মিটার এলাকাজুড়ে নিহত ব্যক্তিদের লাশ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রেলপথে পড়ে ছিল।’
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইসমাইল বলেন, ‘রেল ক্রসিংটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করেন। দীর্ঘদিন ধরে এখানে রেলগেট নির্মাণ ও গেটম্যান নিয়োগের দাবি জানানো হচ্ছে। কিন্ত তা করা হচ্ছে না। এর আগেও এখানে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।’
এ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মোস্তফা কামাল।
এছাড়া, দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহিদা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনার পর থেকেই এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখছি।’
ওদিকে, এ ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মো. কামরুজ্জামান। রেলওয়ে কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রেলওয়ে কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী প্রকৌশলীকে। আর বাকি তিন সদস্য হলেন, পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা, সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা এবং সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী। তাঁরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্তের কাজ শেষ করে দুর্ঘটনার পেছনের কারণ বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপককে জানাবেন। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে শীঘ্রই। ফটো: সংগৃহীত