বুধবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লার নিমসার সবজির বাজার  ট্রাকে উঠলেই দাম বেড়ে যায় ৩ গুণ

কুমিল্লার নিমসার সবজির বাজার ট্রাকে উঠলেই দাম বেড়ে যায় ৩ গুণ

১৭০ Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত অত্রাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ সবজির মোকাম কুমিল্লার নিমসার বাজার। রাতে শুরু হয়ে জমজমাট এ বাজার। শেষ হয় সূর্য ওঠার কিছুক্ষণ আগে। বর্তমানে এই বাজারে সবজির বেচাকেনা নেমে এসেছে অর্ধেকেরও কমে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা শুয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছেন।

            শীতের শুরুতে এই বাজারে সবজির দাম বেশি ছিল, কিন্তু এখন তা একেবারেই কমে গেছে। ক্রেতার অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে পাইকারদের।

            তবে ভিন্ন চিত্রও দেখা গেছে। নিমসার বাজার থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা শহরের খুচরা বাজারে সবজির দাম কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেশি। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে আসার পর প্রায় ৩-৪ গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। এমনকি নিমসার বাজার থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরের কংশনগর বাজারেও সবজি দ্বিগুণ দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গ্রামের হাটগুলোর অবস্থাও একই রকম। পাইকারি বাজার থেকে গাড়িতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই সবজির দাম তিনগুণ বেড়ে যায়। পরিবহন খরচের অজুহাতে খুচরা ব্যবসায়ীরা এই দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন।

            গতকাল মঙ্গলবার (৭ই জানুয়ারি) দেশের অন্যতম বৃহৎ এ সবজির পাইকারি বাজার বুড়িচংয়ের নিমসার এবং কুমিল্লা শহর ও আশপাশের উপজেলাগুলোর বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

            সরেজমিনে কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা, রাজগঞ্জ, চকবাজার ও টমছমব্রিজ বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আলু প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, বড় ফুলকপি ২০-২৫ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, গাজর ৭০-৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৩৫-৪০ টাকা, করলা ৫৫-৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০-৫৫ টাকা এবং টমেটো ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

            অন্যদিকে, নিমসার পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলু (ডায়মন্ড) ২৮-৩৫ টাকা, বড় ফুলকপি ৬-৮ টাকা, বাঁধাকপি ১২-১৫ টাকা, গাজর ৩০-৩২ টাকা, লম্বা বেগুন ১২-১৫ টাকা, করলা ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৫-২৮ টাকা, পেঁপে ২৮-৩০ টাকা, এবং টমেটো ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

             পাইকারি ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ বলেন, রাত ৩টা বাজে, এখনও কোনো ক্রেতা আসেনি। বসে বসে সময় কাটাচ্ছি। পাইকারি ব্যবসায় লোকসানের মুখে আছি।

            নিমসার বাজারের আড়তদার মো. জসিম উদ্দিন ও মোখলেছুর রহমান জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজি এই বাজারে আসে। আগে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা নিয়মিত সবজি কিনতে আসতেন। কিন্তু এখন ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। ফলে বেচাকেনা প্রায় বন্ধের পথে। পাইকারি বাজারে সবজির দাম কমলেও খুচরা বাজারে ব্যবসায়ীরা চড়া দাম নিচ্ছেন।

            টমছমব্রিজ বাজারের খুচরা ক্রেতা মো. কামাল উদ্দিন এবং শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম কম হলেও খুচরা বাজারে তেমন কমেনি। বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে খুচরা বাজারে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। এমনকি কিছু কিছু সবজি আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।

            এ বিষয়ে কুমিল্লা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. কাউছার মিয়া বলেন, দামে এত পার্থক্য হওয়ার কথা নয়। কারণ খুঁজে বের করব। ২-১ দিনের মধ্যেই অভিযানে নামব। আশা করছি, ভালো ফলাফল আসবে।

            কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, আমরা সবজি উৎপাদনের বিষয়টি তদারকি করার চেষ্টা করি। চলতি বছরে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ পর্যন্ত ১১ হাজারেরও বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। বাজারের দামের বিষয়টি আমাদের আওতায় নেই, এটি কৃষি বিপণন দপ্তর দেখাশোনা করে।

            কৃষি বিপণন দপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তা রেজা শাহবাজ হাদী বলেন, কৃষি বিপণন আইনে নির্ধারিত লাভের হার উল্লেখ আছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা ৪-৫ শতাংশ এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা ১০-১২ শতাংশ লাভ করতে পারেন। এর বেশি নেয়া আইনসিদ্ধ নয়।

Share This