কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দালালচক্রের ফাঁদে রোগী
আবদুর রহমান\ দালালচক্রের উৎপাতে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। বছরের পর বছর ধরে দালালচক্র নিয়ে চরম ভোগান্তিতে থাকলেও দালাল নির্মূলে কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি রোগীদের। বর্তমানে অবস্থা এমন হয়েছে যে হাসপাতালের সর্বত্রই ফাঁদ পেতে রেখেছে দালালচক্র।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে দালালদের প্রভাব বেশি। কম খরচে উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সেবা দেয়ার কথা বলে কৌশলে রোগীদের বাগিয়ে নেয়া হয় বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক-প্যাথলজিতে। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের বেশি রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগেও ১০ টাকার টিকিটে সেবা নিতে আসে অন্তত এক হাজার মানুষ।
গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, দুই শতাধিক সেবাপ্রত্যাশী লাইনে দাঁড়িয়ে আছে টিকিট কাটার জন্য। চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হতেই দালালচক্র রোগীদের ঘিরে ধরছে। এ সময় ব্যবস্থাপত্র দেখে চক্রটি নিশ্চিত হয় রোগীকে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়া হয়েছে কি না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা থাকলেই রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিক-প্যাথলজিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন দালালরা। হাসপাতালটির বহির্বিভাগের সামনে দায়িত্ব পালন করছেন বেশ কয়েকজন আনসার সদস্য। তাদের চোখের সামনেই এসব কাজ করছে দালালরা। আনসারদেরও চক্রটির কাছে অসহায় দেখা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক আনসার সদস্য বলেন, ‘এই হাসপাতালে সক্রিয় দালালচক্রের সংখ্যা দুই শতাধিক। এদের বেশির ভাগই স্থানীয়। যার কারণে এদের কিছু বলা যায় না। কিছু বললেই হাসপাতালের গেটের বাইরে নাশতা করতে গেলেও দালালরা আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়াসহ হয়রানি করে। অনেক সময় বেøড নিয়ে আসে পোঁচ দেয়ার জন্য।’
বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মুন্সিরহাট এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীদের ফাঁকে দালালরা এমনভাবে থাকে যে সহজে তাদের চেনা যায় না। দালালচক্র অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে বেশি সক্রিয়।’
মনির হোসেন নামে অপর এক সেবাপ্রত্যাশী বলেন, ‘বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ আর ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডই নয়; পুরো হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগেই দালালচক্র সক্রিয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুধু ‘দালাল হতে সাবধান’ সাইবোর্ড টানিয়ে দায় সেরেছে।’
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘দালালচক্রের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। প্রায়ই অভিযানে দালালরা ধরা পড়ছেন। তবে দালাল পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়, আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।’