বৃহস্পতিবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লা সদর দক্ষিন উপজেলার সুয়াগাজীতে কারখানার  বিষাক্ত বর্জ্যে ২০ গ্রামের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত

কুমিল্লা সদর দক্ষিন উপজেলার সুয়াগাজীতে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে ২০ গ্রামের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত

১১০ Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজীতে ‘কিষোয়ান স্ন্যাক্স লিমিটেড ও বনফুল অ্যান্ড কোং’ নামে দু’টি কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে প্রায় ২০টি গ্রামের ২৫ হাজার মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

            ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী এলাকায় কিষোয়ান গ্রæপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কিষোয়ান স্ন্যাক্স লিমিটেড নামে শিল্প কারখানাটি ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন স্ন্যাক্স আইটেম উৎপাদন চালিয়ে আসছে। পাশে রয়েছে ‘বনফুল অ্যান্ড কোং’ নামে রয়েছে আরেকটি কারখানা। এ শিল্প কারখানাগুলো তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) যথাযথ ব্যবহার করে না। এই ২ কোম্পানির পাইপ থেকে নির্গত হচ্ছে বিষাক্ত তরল পদার্থ, যা সরাসরি গিয়ে পড়ছে পার্শ্ববর্তী লালবাগ খালে। যার কারণে সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই লালবাগ খালের পাশে রয়েছে কয়েকশ’ একর কৃষিজমি যা এখন অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে।

            ওই কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য খোলা স্থানে ও পার্শ্ববর্তী লালবাগ খালে ফেলায় পরিবেশের ক্ষতিসহ এলাকার কয়েকশ’ হেক্টর আবাদী জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি, চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ার প্রভাবে বিষাক্ত হয়ে পড়েছে এই এলাকার পরিবেশ। এছাড়া সরকারি খাল ভরাট করে দখল নিয়ে সেখানে বর্জ্য ফেলছে এই দুই কোম্পানি। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ একাধিক দপ্তরে বিভিন্ন লিখিত অভিযোগ দিয়েও সুফল পায়নি এলাকাবাসী। বিষাক্ত বর্জ্যের পলিথিন ও ময়লা আবর্জনা ফেলায় সরকারি ৪০ ফুটের খাল কমে হয়ে গেছে ৫ ফুট।

            এ বিষয়ে স্থানীয় একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কারখানার দূষিত বর্জ্য খালে-বিলে ফেলার কারণে এ উপজেলার ২০ গ্রামের মানুষ পুকুর ও নদীর পানি কোনও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করতে পারছে না। এই পানি ব্যবহারের কারণে চর্ম রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শত শত মানুষ। এছাড়া দু’টি কারখানার পিছনের অংশে জমিগুলোতে বর্জ্য ফেলে সাবেক ইউপি সদস্য মো. সোহেলের মাধ্যমে কৃষকদের চাপ প্রয়োগ করে জমিগুলো ক্রয় করতে চায়। জমি বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানালে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে মামলা দেয়ার হুমকি দেয়।

            এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য সোহেল মিয়ার কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি আর কিছু বলতে পারবো না।

পূর্ব জোড় কানন ইউনিয়নের কৃষক ইদ্রিস মিয়া বলেন, এই কলকারখানাগুলোর বিষাক্ত পানি মাটি ও পানিতে মেশায় জমিতে কিছু ফলানো যায় না। যে বীজই দিই, কোনো লাভ হয় না। এগুলো তো এক প্রকার আমাদের পেটে লাথি দেয়া। এগুলো দেখার কেউ নাই। কয়েকদিন পর পর আমাদেরকে জমি বিক্রি করতে বলে, অনেকে ভয়ে বিক্রি করছে, আমি করিনি।

            লালবাগ এলাকার আরেক কৃষক আলী হোসেন বলেন, এই বিষাক্ত পানির কারণে পুরো এলাকার জমিগুলোয় ফলন হয় না। আর এগুলোতে ফলন না হওয়ায় কোম্পানির লোকেরাই জমিগুলো কিনে নেয়। এভাবে এই পুরো এলাকা অনাবাদী হয়ে পড়ছে। আমরা যারা কৃষি কাজ করি তাদের কি হবে বলেন। আমরা কি করে খাবো।

            কিষোয়ান স্ন্যাক্স লিমিটেড এর ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এবিএম বোরহান উদ্দিন বলেন, আমরা ইটিপি’র মাধ্যমে বর্জ্য পরিশোধিত করছি। বৃষ্টি নাই, তাই খালে কিছু ময়লা জমা হচ্ছে। আমরা মূলত ড্রাই আইটেম তৈরি করি, এগুলোতে আমরা কোনো ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশাই না। আর আমরা বাইরেও কোনো বর্জ্য ফেলছি না। আমরা আইন মেনেই সব পরিচালনা করছি।

            বনফুল অ্যান্ড কোং এ’ এজিএম শেখ ফরিদ বলেন, বর্ষা মৌসুমে খালে পানির চলাচল থাকায় ময়লাগুলো চলে যায়। কিন্তু এই শুষ্ক মৌসুমে খালে পানি চলাচল না থাকায় কিছু সমস্যা হচ্ছে। আর আমরা ইটিপি ব্যবহার করছি। এই খাল তো এমনিতেই মরা খাল। ইটিপি পরিশোধন ছাড়া কোনো পানি বাইরে যায় না। তাছাড়া, খাল ময়লা হলেও আমরা নিজেরাই কিছুদিন পর পর খাল পরিষ্কার করে দিই।

            কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। সেখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোক পাঠানো হবে। এ ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

            সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া খানম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। আমি সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

            কুমিল্লার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, সরকারি খালগুলো উদ্ধারের আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ আমরা সরেজমিনে গিয়ে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

Share This