রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কৃষি জমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন দ্রæত পাস করতে হাইকোর্টের রায়

কৃষি জমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন দ্রæত পাস করতে হাইকোর্টের রায়

Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ কৃষি জমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন, ২০১৬ এর খসড়া অতি দ্রæত আইন আকারে পাস করার জন্য জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। নওগাঁর মিজানুর রহমানকে পুকুর খনন বন্ধ করতে ভূমি অফিসের নোটিশ অবৈধ ঘোষণার রায়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পরামর্শ দেন। ১৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় গত বুধবার (১৭ই এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

            রায়ে আদালত বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খননের বিধিনিষেধ আরোপ করে ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন, ২০১৬’ এর খসড়া আইন প্রণয়ন করা হলেও কোনো এক অজানা কারণে এটি এখনো আলোর মুখ দেখছে না। বাংলাদেশের কৃষি জমি, বনভূমি, টিলা, পাহাড় ইত্যাদি সুরক্ষার জন্য আইনটি দ্রæত জাতীয় সংসদ কর্তৃক পাস হওয়া অতি আবশ্যক।

            আদালত বলেছেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪২ (১) মোতাবেক সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তন প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কেবল সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন দ্বারা নাগরিকের উপরোল্লিখিত সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তন-এ বিধি নিষেধ আরোপ করা তথা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪২(১) এর মর্মার্থ। সুতরাং এটি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তন সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। কোনোভাবেই উক্ত মৌলিক অধিকার তথা সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তনে বাধা প্রদান করা যাবে না। নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তন এর অধিকারে পরিবর্তন, বিধি-নিষেধ এবং যেকোনো প্রকারের নিয়ন্ত্রণ কেবল সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের মাধ্যমে করতে হবে।

            ১৫ পৃষ্ঠার রায়ে আদালত কৃষি জমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন, ২০১৬ অতি দ্রæত আইন আকারে পাস করার জন্য মহান জাতীয় সংসদকে পরামর্শ প্রদান করেছেন। পাশাপাশি  জাপান ও ফিনল্যান্ডের প্রণীত আইন যতটুকু সম্ভব অনুসরণ ও সমন্বয় করে আমাদের দেশের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি ‘দ্বীপ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের নিমিত্তে দ্বীপ উন্নয়ন আইন দ্রæত প্রণয়নের জন্য জাতীয় সংসদকে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। অত্র রায় ও আদেশের অনুলিপি জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যদের ই-মেইলে পাঠানোর জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া অত্র রায় ও আদেশের অনুলিপি বাংলাদেশের সব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে ই-মেইলে প্রেরণের জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন।

            ২০১৯ সালের ৩১শে জানুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলার কুশুম্বা ইউনিয়নের ভূমি অফিস নোটিশ দিয়ে মো. মিজানুর রহমানকে পুকুর খনন বন্ধ করতে বলে এবং ‘বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০’ অনুযায়ী কেন দরখাস্তকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা নোটিশ প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেয়। এই নোটিশের বিরুদ্ধে মিজানুর রহমান পুকুর খননের অনুমতি চেয়ে একই বছরের ১৪ই ফেব্রæয়ারি নওগাঁর জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্ত করেন।

            তবে জেলা প্রশাসক আবেদনটি নিষ্পত্তি না করায় মিজানুর রহমান হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত ২০১৯ সালের ৩০শে এপ্রিল পুকুর খনন বন্ধে নোটিশ কেন অবৈধ ও বেআইনি হবে না, এই মর্মে রুল জারি করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০২২ সালের ২রা জুন পুকুর খনন বন্ধে নোটিশ বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এরই ধারাবাহিকতায় রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করলেন হাইকোর্ট।

Share This

COMMENTS