কোরবানীর পশুর হাটে চাঁদাবাজি ও হয়রানি বরদাশত করা হবে নাঃ কুমিল্লার পুলিশ সুপার


ষ্টাফ রিপোর্টার\ ইজারাকৃত নির্ধারিত স্থানের বাইরে বা সড়কে পশুর হাট না বসানোর আহবান জানিয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান। এ সময় তিনি পশুর হাটে যে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুশিয়ারি দেন। এছাড়া পশুর হাটে এসে ক্রেতারা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন সেদিকে সংশ্লিষ্ট হাটগুলোতে দায়িত্বরত পুলিশকে খেয়াল রাখার নির্দেশনা দেন।
গত শনিবার (৩১শে মে) সকালে কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সে শহীদ আরআই এ.বি.এম আবদুল হালিম মিলনায়তনে পশুর হাটের ইজারাদারদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।
জেলা পুলিশের উদ্যোগে পশুর হাটের ইজারাদারদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, ঈদুল আজহার (কোরবানি) বেশি দিন বাকি নেই। কোরবানির পশুর হাটে ছিনতাই, চাঁদাবাজি প্রতিরোধে কুমিল্লার ১৮টি থানা এলাকায় জেলা পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যরা তৎপর থাকবেন। এ সময় পশুর হাটে কেউ যেন জাল নোট ছড়াতে না পারে, সে বিষয়ে পুলিশের কঠোর নজরদারি থাকবে। হাটের ক্রেতা, বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও তাঁদের সেবা দিতে সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করবে কুমিল্লা জেলা পুলিশ। পশুর হাটগুলোতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু রাখতে পুলিশের পাশাপাশি ইজারাদারদেরও সহযোগিতার আহŸান জানান পুলিশ সুপার।
মতবিনিময় সভায় কুমিল্লা জেলার ১৮টি থানার আওতাধীন পশুর হাটের ইজারাদারগণ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় ইজারাদারগণ হাট পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) রাশেদুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শামীম কুদ্দুস ভূঁইয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইফুল মালিক এবং জেলার সকল সার্কেল অফিসার ও থানার অফিসার ইনচার্জগণ।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা জেলার ১৮টি থানার আওতাধীন এলাকায় এবছর স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে সর্বমোট ৪০৯টি পশুর হাট বসবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
নাঙ্গলকোটে মা ও ভাবীকে হত্যায় ছেলের মৃত্যুদন্ড
ষ্টাফ রিপোর্টার\ মা ও ভাবীকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কুমিল্লায় সাইদুর রহমান সিকি (৩৭) নামে এক ব্যক্তিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত ২৭শে মে দুপুরে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। দন্ডপ্রাপ্ত সাইদুর কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার পুজকরা পূর্ব পাড়ার আবদুল হাইয়ের পুত্র।
২০২১ সালে সংঘটিত হওয়া চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের ৪ বছরের দীর্ঘ শুনানির পর ১১ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং একমাত্র আসামি সাইদুর রহমান সিকির জবানবন্দী থেকে জোড়া খুনের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এই কঠোর শাস্তির আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন মামলার রাষ্ট্রক্ষের আইনজীবী মো: ইউসুফ আলী।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৮ই ফেব্রæয়ারি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের পুঁজকরা গ্রামের পূর্ব পাড়ায় পারিবারিক কলহের জের ধরে ছায়েদুল হক সিকি তার মা নুরজাহান বেগম (৭০) এবং ভাবি নুরন নাহার বেগম পুষ্পাকে (৪৫) এলো পাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় আহত হন তার ভাতিজি আরজু আক্তার (২৮)।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দন্ডপ্রাপ্ত সাইদুরের বোনের বাড়ি থেকে নাস্তা এনে খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে তার মায়ের সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে সে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে ছায়েদুল হক সিকি বটি দিয়ে প্রথমে তার মাকে ও পরে তার ভাবিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। তাদের বাঁচাতে আরজু আক্তার এগিয়ে এলে তাকেও আঘাত করা হয়। এ সময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নুরজাহান ও পুষ্পাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় সাইদুরের বড় ভাই আজিজুল হক বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার চারবছর পর আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মামলার বাদী আজিজুল হক বলেন, আজকের এই রায়ে আমি সন্তুষ্ট। আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি। আমার মা ও স্ত্রীর হত্যার ঘটনায় ন্যায় বিচার পেয়ে আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তিনি বিজ্ঞ আদালতের ফাঁসির আদেশের রায় দ্রæত কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কুমিল্লার জননিরাপত্তা বিঘœকারী দমন ট্রাইব্যুনালের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো: ইউসুফ আলী জানান, এই রায় নৃশংসতার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে বিবেচিত হবে। যা সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে এটা একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।