শনিবার, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চরমোনাই পীরের তরফ থেকে  সংলাপে ৭ সংস্কার প্রস্তাবনা

চরমোনাই পীরের তরফ থেকে সংলাপে ৭ সংস্কার প্রস্তাবনা

২৭ Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাইর নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। গত শনিবার (৫ই অক্টোবর) বিকেল পাঁচটার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় প্রবেশ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা।

            প্রতিনিধিদলে ছিলেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম ও সহকারী মহাসচিব অধ্য হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ।

            সংলাপ শেষে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার জনমতের প্রতিফলনের সরকার। তাদের সঙ্গে দেশের জনগণ রয়েছে। তারা সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার। কিন্তু খুনি, অর্থ পাচারকারী, দাগী, অপরাধীরা কীভাবে দেশ থেকে পালাল? কেন তাদের দেশত্যাগের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

            তিনি বলেন, সংস্কার করতে যতটুকু সময় লাগে সংস্কারকাজ শেষ করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বৈরাচারীরা যেন কোনোভাবেই রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে না পারে, সে ব্যবস্থা করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। এতে করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে সংস্কার কমিশনের প্রতি ৭ দফা লিখিত প্রস্তাবনা দেয়া হয়:

ক) নির্বাচন সংস্কার- সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন-ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। খ) আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনী বাদ দিয়ে আরপিও পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। গ) ইসি নিয়োগে সাবেক বিচারপতি, আমলা ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে উলামায়ে কেরামকে সম্পৃক্ত করা। ঘ) সর্বদলীয় কমিটির মাধ্যমে ইসি নিয়োগ দেয়া। ইসির কার্যক্রম জবাবদিহির আওতায় আনা। ঙ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতায় মোতায়েন রাখা। চ) দুর্গম না হলে ব্যালট পেপার সকালে পাঠানো। ছ) ব্যালটে নির্বাচন হওয়া। আপাতত ইভিএমে নয়। জ) সম্পদ পাচারকারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে যেকোনো নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।

পুলিশ সংস্কার: ক) পুলিশ-সংক্রান্ত উপনিবেশন আমলের সকল আইন বাতিল করা এবং পুলিশের ব্রিটিশ লিগ্যাসি বাদ দেওয়া। কারণ তা ছিল নিপীড়ক ধরনের বাহিনী। খ) দেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস, চরিত্র বিবেচনা করে সেবা জনসহায়ক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা। গ) অজ্ঞাত সংখ্যায় আসামি দিয়ে মামলা করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। ঘ) রাত্রিকালীন টহল পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং টহলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিশেষ করে, ঢাকাসহ সারা দেশে প্রবেশদ্বারগুলোতে যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ।

বিচার বিভাগ: ক) ঔপনিবেশিক লিগ্যাসি ও আইন বাদ দেয়া। খ) আইনের উৎস হিসেবে শরিয়াহকে গ্রহণ করা গ) উচ্চ আদালতে আলাদা শরিয়া বেঞ্চ গঠন করা। ঘ) বিচারপ্রার্থীর শরিয়া আইনে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ রাখতে হবে।

দুর্নীতি দমন: ক) দুদককে স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে কাজ করার লক্ষ্যে প্রস্তুত করা। খ) দুদক কমিশনার হিসেবে উলামা, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নিয়োগ করা। গ) দুর্নীতির মামলা দ্রæত নিষ্পত্তির জন্য আলাদা আদালত স্থাপন করা। ঘ) বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনার সক্ষমতা তৈরি করা।

প্রশাসন সংস্কার: ক) ঔপনিবেশিক ধারাবাহিকতার আমলাতন্ত্র আমূল বদলে দেওয়া। পদবিন্যাস, পদবির নাম ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা। খ) বর্তমান প্রশাসন নির্দেশনা ও পদ্ধতিনির্ভর, সেখান থেকে সরে এসে কর্ম ও প্রকল্পকেন্দ্রিক প্রশাসন তৈরি করা। গ) ইসলামের ধারণা এবং সংবিধানের মর্ম মতে জনপ্রশাসন জনতার সেবক। কিন্তু নাম হলো প্রশাসন, এখান থেকে সরে আসতে হবে। ঘ) প্রশাসনের সর্বস্তরকে দুর্নীতিমুক্ত করা এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করা। ঙ) চিহ্নিত দলবাজ, বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজ সচিবদের অব্যাহতি প্রদান করা।

সংবিধান সংস্কার: ক) আওয়ামী আমলের সংশোধনীগুলো বাতিল করা। খ) আইনের উৎস হিসেবে শরিয়াহর প্রাধান্য নিশ্চিত করা। গ) রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা। ঘ) দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, একই ব্যক্তি দলীয় ও সরকারের প্রধান না হওয়া। ঙ) বর্তমান সংবিধানে ধারা ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা। চ) ন্যায়পাল কার্যকর করা এবং তাতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিধানকে ভিত্তি হিসেবে রাখা। ছ) সংবিধান সংস্কার কমিটিতে উলামাদের থেকে একাধিক সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা। জ) সংস্কার অবশ্যই গণভোটে অনুমোদিত হতে হবে। ঝ) সংবিধানে ইসলামের মৌলিকত্ব লঙ্ঘন হয় এমন কোনো ধারা থাকতে পারবে না। ঞ) দেশের যুব চরিত্র নষ্ট করে এমন কোনো উপাদান বা আচরণের বৈধতা সংবলিত কোনো ধারা থাকতে পারবে না। ট) নারী ও শিশু পাচার বন্ধে এবং অসহায় নারীদের সুস্থ ধারায় পুনর্বাসনের সুস্পষ্ট ধারা-বিধান থাকতে হবে।

শিক্ষা কমিশন সংস্কার: ক) নীতি-নৈতিকতা, সুঅভ্যাস-সুআচরণ ও দেশপ্রেম গড়ে উঠে এমন শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি করতে হবে। খ) দেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে বিগত সোয়া দুই শ বছরের ধারাবাহিক সংগ্রামকে হেয়প্রতিপন্ন করে এমন কোনো সাহিত্য, প্রবন্ধ শিক্ষার কোনো পর্যায়েই থাকতে পারবে না। গ) এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় অধিকার ক্ষুন্ন করে এমন কোনো সাহিত্য, প্রবন্ধ শিক্ষার কোনো পর্যায়েই থাকতে পারবে না। ঘ) সকল সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ঙ) অনৈতিক আচরণে দোষী ব্যক্তিদের শিক্ষাঙ্গনে অনুপযুক্ত ঘোষণা করতে হবে। চ) গতানুগতিক ব্রিটিশ প্রবর্তিত লেজুরবৃত্তিক চাকরিজীবী তৈরির শিক্ষাব্যবস্থা হতে বের হয়ে উদ্যোক্তা সৃষ্টির শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনে দেশের প্রবীণ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ আলেম ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। ছ) প্রতিবন্ধী, হিজড়া ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকর ও নৈতিকতা-সমৃদ্ধ শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

Share This