চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ
ষ্টাফ রিপোর্টার\ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পণ্য সরবরাহের বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সচিবদের কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় এই নির্দেশ দেন তিনি। নতুন সরকারের প্রথম এই সচিব সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি প্রতিরোধ, সরকারি অর্থের সাশ্রয় ও রপ্তানি বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পায়।
সভার পর সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে সুনির্দিষ্ট আলোচ্য বিষয় থাকে না। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এদিনের বৈঠকে ১৫ থেকে ১৬ জন সচিব বক্তব্য রাখেন। তাঁদের মধ্যে ১১ জন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন। এর ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি, কৃষি উৎপাদন, সার ব্যবস্থাপনা, কর্মমুখী শিক্ষা ও কর্মসংস্থান, নতুন পাঠ্যক্রম, বিদ্যুৎ সরবরাহ, জ্বালানি নিরাপত্তা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি দমনে ব্যবস্থা নেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী সচিবদের প্রতিবেদন ও বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে নজরদারি করতে বলেছেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে খুবই শক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের নিজ নিজ জায়গা থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অনেকে ধারণা করেন, দুর্নীতি দমন শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজ। এভাবে ভাবলে হবে না। মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ‘জিরো টলারেন্সের’ কথা বলেছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দেয়া ইশতেহারকে ভিত্তি ধরে আগামী পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনা সাজাতে সচিব সভায় নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে একটা ধারাবাহিকতা আছে। যেহেতু জনগণ রায় দিয়েছে, তাই এই নির্বাচনী ইশতেহারটাই হবে আগামী পাঁচ বছরের সরকার পরিচালনার মূলনীতি।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, নতুন যে শিক্ষাক্রম নেয়া হয়েছে, তা প্রচলিত শিক্ষাক্রম নয়। এটি ভিন্ন ধরনের। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যদি কোনো ভুলভ্রান্তি থাকে, কোনো তথ্যগত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, তাহলে যেন দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা ও বাছাইয়ের কথা বলেছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, যে প্রকল্পগুলো থেকে জনগণ উপকৃত হবে সেদিকে মনোযোগ দিতে বলা হয়েছে। চলমান প্রকল্পগুলো দ্রæত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় যাতে অহেতুক না বাড়ে, সে জন্য আগে থেকেই পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা করতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতি যেন জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের নিচে থাকে। এখনো আওতার বাইরে থাকা বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিকে আয়করের আওতায় আনার জোরদার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অহেতুক যেন হয়রানির শিকার না হন সেদিকে নজর রাখতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদসচিব। তিনি বলেন, গার্মেন্টস খাতে যে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়, কৃষিজাত পণ্য, চামড়া ও পাটজাত পণ্যেও সে রকম সুবিধা দেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে ছিনতাই, কিশোর গ্যাং বা এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করে নজর দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বলেছেন। কোনোভাবে যেন সেচ বিদ্যুতের অভাবে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন।
মন্ত্রিপরিষদসচিব আরো বলেন, বইমেলা উপজেলা পর্যায়ে নেয়া, শূন্যপদ পূরণে উদ্যোগ নেয়া, সময়মতো পদোন্নতি, খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত করা, কোনো অবস্থাতেই নদীর প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত না করা, পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নেয়া ও ব্লু ইকোনমির জন্য সামুদ্রিক বøকে গ্যাস অনুসন্ধানসহ নানা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।