শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০  মাসে ৬৯৫ নারী ও কন্যাশিশু হত্যা

জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৬৯৫ নারী ও কন্যাশিশু হত্যা

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৬৯৫ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে নারী ৫০২ জন এবং ১৯৩ জন কন্যাশিশু। গত ৫ই ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজন যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি এ তথ্য উল্লেখ করেন।

            মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, নারী অগ্রগমন এবং অর্জন্যে বাংলাদেশ অনেক ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারপরও, স্বাধীনতার ৫২ বছরে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নে কাঙ্খিত অর্জন নিশ্চিত হয়নি। আমাদের নারী এবং কন্যাশিশুদের এখনও বঞ্চনা-বৈষম্য এবং নিপীড়নের থেকে মুক্তি ঘটেনি, বরং তাদের প্রতি সহিংসতা যেন ক্রমাগত বাড়ছে।

            ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এই ১০ মাসে ৬৯৫ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে, এদের মধ্যে নারী ৫০২ জন এবং ১৯৩ জন কন্যাশিশু। আত্মহত্যা করেছে ৫৯০ জন (৩৪৭ জন নারী এবং ২৪৩ জন কন্যাশিশু), গৃহের অভ্যন্তরে সহিংসতার শিকার হয়েছে ১৭৯ জন নারী এবং ২০ জন কন্যাশিশু। পাচার এবং অপহরণের শিকার ৩২ জন নারী এবং ১৩৬ জন কন্যাশিশু, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১,০২২ জন, এদের মধ্যে ৩৬২ জন নারী এবং ৬৬০ জন কন্যাশিশু এবং ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল আরও ৫৩ জন নারী এবং ১৩৬ জন কন্যাশিশুকে। ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ১৩ জন নারী এবং ৩৪ জন কন্যাশিশু। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন মোট ৩৫২ জন, যার মধ্যে ৯৬ জন নারী এবং ২৫৬ জন কন্যাশিশু।

            পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সারা দেশের থানায় বিগত পাঁচ বছরে (২০১৮-২২) ২৭ হাজার ৪৭৯টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৬০টি।

            সহিংসতা, যৌন হয়রানির ঘটনার এই ভয়াবহ বাস্তবতার পেছনে যথাযথ বিচার না হওয়ার বিষয়টি বড় ভূমিকা রাখে। যৌন হয়রানির ঘটনার বিচারের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন না থাকা ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে একটি বড় প্রতিবন্ধক। এই সমস্যার কার্যকর সমাধানের জন্য প্রয়োজন একটি যথাযথ আইন। এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আমরা দেশের সব রাজনৈতিক দলের কাছে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।

            অনুষ্ঠানে শাহীনা আক্তার ডলি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের প্রতি আমরা ফোরামের পক্ষ দু’টো দাবি তুলে ধরেছি। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আলাদা একটি আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে উপরোক্ত আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছি, আইনটি পাসের জন্য সরকারের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি করেছি। শিশুদের জন্য আলাদা একটি অধিদপ্তর গড়ে তোলাও আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি।

            ওয়াহিদা বানু বলেন, নারী উন্নয়নে বাংলাদেশে যত আইন ও নীতিমালা আছে, পৃথিবীর অন্য দেশে আরও কম আছে। কিন্তু আইনগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন হয় না। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে আমরা দেখছি যে নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে দেশে ৪৩ লাখ মামলা চলমান রয়েছে, তার মধ্যে ১১ লাখ মামলা শিশুসংক্রান্ত। আমরা মনে করি, জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সুস্পষ্টভাবে অঙ্গীকার করতে হবে যে তারা নারী ও কন্যাশিশুদের কল্যাণে কী কী পদক্ষেপ নেবে। ফারজানা খান বলেন, আজকে আমাদের কন্যাশিশুরা আগের মতো নিরাপদ নয়। এর বড় কারণ হলো আমাদের মানসিকতা। তাই আমাদের মানসিকতারও উন্নতি ঘটাতে হবে। আজকে নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি যেহেতু নির্যাতনের পরিমাণ বেড়ে গেছে, তাই ঘরে-বাইরে, নারী-পুরুষ নানানভাবে ব্যাখ্যা করে বলতে হচ্ছে তাদের প্রতি কতভাবে নির্যাতন করা হয়। আমরা মনে করি, নারীর প্রতি নির্যাতন রোধে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ দরকার।

            রাজিয়া সুলতানা বলেন, রাজনৈতিক দলের মাধ্যমেই দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। তাই আমরা আশা করি, নারী ও শিশুদের কল্যাণে রাজনৈতিক দলগুলো সদিচ্ছা প্রদর্শন করবে। যৌন হয়রানি রোধে নির্বাচিত সরকার যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও পাস করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Share This