বৃহস্পতিবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঝুঁকিতে সরকারি রাস্তা ও রিটেইনিং ওয়াল চান্দিনায় রাস্তার পাশবর্তী পুকুর থেকে বালু উত্তোলন!

<span class="entry-title-primary">ঝুঁকিতে সরকারি রাস্তা ও রিটেইনিং ওয়াল</span> <span class="entry-subtitle">চান্দিনায় রাস্তার পাশবর্তী পুকুর থেকে বালু উত্তোলন!</span>
২০ Views

            নিজস্ব প্রতিনিধি\ কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার শুহিলপুর ইউনিয়নের শালীখা গ্রামে অবৈধভাবে পুকুরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে সরকারি সড়কের রিটেইনিং ওয়াল ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে সড়ক; দুর্ভোগে পড়বে হাজারো মানুষ।

            স্থানীয়রা অভিযোগে বলেন, শালীখা গ্রামের জাহাঙ্গীর কাজীর ছেলে মোস্তফা কাজী সম্প্রতি নিজের পুকুরে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেন। তিনি স্থানীয় খোরশেদ কাজীর ছেলে জাকিরের কাছ থেকে ড্রেজার মেশিন ভাড়া নিয়ে এই বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন।

            ওই পুকুরের পাশ দিয়েই শালীখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক রয়েছে। যে সড়কটি ইলিয়টগঞ্জ থেকে বড়াইয়াকৃষ্ণপুর সড়কের উজিরপুর থেকে যুক্ত হয়ে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার রাগদৈল বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে অসংখ্য সিএনজি, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ছোট-বড় যানবাহন এবং স্কুল, কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ চলাচল করে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি মোস্তফা কাজীর পুকুরে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন শুরু হওয়ায় ওয়ালের নিচের মাটি ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, অল্পদিনের মধ্যেই রিটেইনিং ওয়ালটি ধসে পড়বে এবং সড়কটি পুরোপুরি ভেঙে যেতে পারে।

            উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অল্প কিছুদিন আগেই জনগণের ভোগান্তি দূর করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি পাকাকরণের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে সড়কটিতে ইট, কংক্রিট ও বালু ফেলে উন্নয়ন কাজ চলমান। এর আগে সড়কটি রক্ষায় একটি প্যালাসাইডিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়, যাতে বৃষ্টির পানি ও পুকুরের চাপ থেকে সড়কটি নিরাপদ থাকে।

            শালীখা গ্রামের একাধিক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ড্রেজার দিয়ে যেভাবে বালু তোলা হচ্ছে, এতে রাস্তার নিচের মাটি ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। সরকার কোটি টাকা ব্যয় করে রাস্তা বানাচ্ছে, আর কয়েকজন লোক নিজেদের স্বার্থে সেটা ধ্বংস করছে। আমাদের বাচ্চারা এই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যায়। রিটার্নিং ওয়াল ভেঙে গেলে রাস্তাটিও ভেঙে যাবে- তখন যানবাহন চলাচলই বন্ধ হয়ে যাবে। প্রশাসন দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে রাস্তা ভেঙে গেলে পুরো এলাকার মানুষ বিপদে পড়বে। অবিলম্বে ড্রেজার মেশিন অপসারণ ও বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

            স্থানীয় সিএনজি চালক মো. ইউসুফ ভূঁইয়া বলেন, রাস্তা ভেঙে গেলে আমাদের মতো চালকদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। কারণ প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে বশিকপুর, রাগদৈল, সাচার ও জয়নগরসহ প্রায় ১০-১২টি গ্রামের সাধারণ মানুষ ও বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা, স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করি। কিছু লোক নিজের লাভের জন্য সেটাকে নষ্ট করছে। প্রশাসন দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তখন আমাদের আর চলাচলের কোনো রাস্তা থাকবে না।

            তবে এ বিষয়ে মোস্তফা কাজী বলেন, আমি কোনো অবৈধ বালু উত্তোলন করছি না। আমার নিজস্ব পুকুরে ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য কিছু বালু তোলা হয়েছে মাত্র। এতে রাস্তার কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। আপনারা যে সরকারি রাস্তার পাশ থেকে বালু উত্তোলন করছেন এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন জানেন কি না প্রশ্ন করলে মোস্তফা কাজীর পিতা জাহাঙ্গীর কাজী বলেন, এতে প্রশাসনকে জানানোর কি আছে? আমার পুকুরের মাটি আমি নিচ্ছি!

            এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, উক্ত সড়কটি আমাদের দপ্তরের আওতাধীন এবং এখানে উন্নয়ন কাজ বর্তমানে চলমান। স্থানীয়ভাবে কেউ যদি অনুমোদনবিহীন রাস্তার পাশের পুকুরে বালু উত্তোলন করে থাকেন, তা অবশ্যই সড়কের স্থায়িত্বের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ প্যালাসাইডিং ওয়ালের নিচে বা আশপাশে মাটি সরে গেলে ওয়াল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সময়ের সঙ্গে ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি, আমরা মাঠ পর্যায়ে প্রতিনিধি পাঠিয়ে পরিস্থিতি যাচাই করে দেখবো। প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসনকে জানাবো জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে যাতে সড়কটি নিরাপদ থাকে।

            চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক বলেন, অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। সড়কের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। এলজিইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রæত মাঠে তদন্ত টিম পাঠানো হবে। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share This