রবিবার, ২৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দেবীদ্বারে সোয়া ২ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রামীন সড়কের নির্মান কাজে অনিয়মের অভিযোগ

দেবীদ্বারে সোয়া ২ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রামীন  সড়কের নির্মান কাজে অনিয়মের অভিযোগ
১১ Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলায় একটি গ্রামীণ সড়কে নিম্নমাণের কার্পেটিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে সরেজমিনে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। অভিযোগের সত্যতা মেলায় ওই সড়কের কাজ বন্ধ করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তাকে বলেন তিনি।

            দেবীদ্বারের রসুলপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর থেকে সুবিল ইউনিয়নের বুড়িরপাড় বাজার পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। ২০১৮ সালে ১২ ফুট প্রস্থের সড়কটি নতুন করে পাকাকরণ শুরু হয়। কিন্তু পুরো কাজ শেষ না হতেই ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে কাজ ফেলে উধাও হয়ে যায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এরপর প্রায় পাঁচ বছর সড়কটি এভাবেই ফেলে রাখা হয়। এতে দুর্ভোগের শেষ ছিল না অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষের। সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন সড়কটিতে পিচঢালাই শুরু করে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী।

            এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ দেবীদ্বারের সন্তান। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা জানান, গত সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁর নিজ এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সড়কটি পরিদর্শনে যান। গিয়ে দেখেন, হাত লাগাতেই উঠে আসছে পিচঢালাইয়ের কার্পেটিং। সড়কটি এলজিইডির আওতাধীন। বিষয়টি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে সঙ্গে সঙ্গেই হাসনাত আবদুল্লাহ মুঠোফোনে কল করে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীকে এমন কার্পেটিংয়ে সড়কের কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। পরে কাজটি ভালোভাবে শেষ করার আশ্বাস দেন প্রকৌশলী।

            ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা অন্তত ৩ জন জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ গিয়ে দেখেন সদ্য কার্পেটিং করা সড়কের পিচ হাতের আঙুল লাগাতেই উঠে যাচ্ছে। এ অবস্থা দেখে তিনি প্রথমে মুঠোফোনে কাজ বন্ধ করতে উপজেলা প্রকৌশলীকে বলেন। হাসনাতের কল পেয়ে উপজেলা প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে এসে ঘটনা দেখতে পান। পরে উপজেলা প্রকৌশলী ভালোভাবে কাজটি তদারকি করে শেষ করা হবে বলে হাসনাতকে আশ্বাস দেন।

            সড়কটি উপজেলা সদরের সঙ্গে সুবিল, ফতেহাবাদ ও রসুলপর ইউনিয়নের অন্তত ২০ গ্রামের মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যমে। দীর্ঘদিন ধরে কাজটি সম্পন্ন না হওয়ায় জনদুর্ভোগ ছিল সীমাহীন। স্থানীয় বাসিন্দা আল-আমিন বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকেই আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। করোনার সময় ইটের সুরকি ও বালু ফেলে ঢালাই না করেই ঠিকাদার উধাও হয়ে যায়। এরপর পুরো সড়কটিতে অসংখ্য গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। এমন দুর্ভোগের মধ্যে প্রায় ৫ বছর কেটেছে। সম্প্রতি ঢালাইয়ের কাজ শুরু হলেও ঠিকভাবে কাজটি হচ্ছে না। ঢালাইয়ের পুরুত্ব ৪০ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও সেটি ঠিকভাবে হচ্ছে না। এ ছাড়া নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঢালাইয়ের কাজ করা হচ্ছে। এমন ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। হাসনাত আবদুল্লাহকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি ঘটনাস্থলে এসে বাস্তবতা দেখতে পেয়েছেন।’

            উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, সড়কটির কাজ শুরু করে ‘মেসার্স আরতার অ্যান্ড ইয়েস্টেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ কাজের তৎকালীন প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজটি করেন উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহের সরকার (সুবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি)। ২০২০ সালে করোনাকালে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন কাজটি বন্ধ থাকার পর গত মে মাসে আবু তাহের সরকারের পক্ষের লোকজন কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করেন।

            গত সোমবার সন্ধ্যায় এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘সড়কটির ১১০০ মিটারের মতো পিচঢালাই করা হয়েছে। সাব-ঠিকাদার কাজ করছেন। এর মধ্যে আজ বিকেলে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে কার্পেটিং নিয়ে আপত্তি করেন এবং তিনি আমাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে আমি নিজেও ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং সেখানে হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি হাসনাত আবদুল্লাহসহ স্থানীয়দের বলেছি কাজটি ভালোভাবেই শেষ করা হবে। যেসব স্থানে কার্পেটিংয়ের কাজ খারাপ হয়েছে, সেখানে নতুন করে কার্পেটিং করার ব্যবস্থা করা হবে। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম হলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

Share This