দেশে অশান্তির চিত্র বদলে সর্বত্রই স্বস্তি! “ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ৩০শে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে”


শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া\ প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৃটেনের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ পাচ্ছেন। সে জন্য ব্রিটেনের রাজা চার্লসের আমন্ত্রণে আগামী ১০ই জুন লন্ডন সফরে যাচ্ছেন তিনি। ১২ই জুন ব্রিটেনের রাজপরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসকে এই অ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে। রাজা চার্লস থ্রি নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদের হাতে অ্যাওয়ার্ডটি তুলে দিবেন। সফর শেষে তিনি ১৩ই জুন ঢাকায় ফিরবেন।
এর আগে ২০২৪-এ প্রবর্তিত প্রথম কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ছিলেন জাতিসংঘের অষ্টম মহাসচিব বান কি মুন।
প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদেশসফরে বৃটেন হবে ড. ইউনূসের ১১তম গন্তব্য। ১০ মাসে তিনি ১০টি দেশ সফর করেছেন। যার সূচনা ছিল গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের মধ্য দিয়ে। আর শেষ অর্থাৎ দশম সফর হয়েছে বিদায়ী মে মাসের সমাপনীতে জাপানে।
এছাড়া, সোমবার বিকেলে এই নিউজ লেখা পর্যন্ত অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পৌঁছেছেন বিএনপির প্রতিনিধি দল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বৈঠকে অংশগ্রহণ করছেন। এর আগে গত ২৪শে মে রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, আমাদের আলোচনার মধ্যে মূল বিষয় আসছে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন।
এর আগে জাপানে চার দিনের সরকারি সফর শেষে গত শনিবার রাতে দেশে ফিরে এসেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, ‘এই সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা টোকিওতে প্রায় ২০টি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে একটি ছিল জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবার সঙ্গে বৈঠক। সফরের তৃতীয় দিনে গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে, দুই নেতা চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যেকার অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষরের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন, যার মাধ্যমে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর হবে।’ জাপানি প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা ও রেলপথ উন্নয়নের জন্য ১.০৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণের প্রতিশ্রæতি দেন। একই দিনে আরও তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এগুলো হলো: অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু পরিবর্তনের সহনশীলতা শক্তিশালীকরণে ডেভেলপমেন্ট পলিসি ঋণ (৪১৮ মিলিয়ন ডলার), জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েল-গেজ ডাবল লেন রেলপথ প্রকল্পের জন্য ঋণ (৬৪১ মিলিয়ন ডলার) এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন বৃত্তির জন্য অনুদান (৪.২ মিলিয়ন ডলার)। একই দিন, প্রধান উপদেষ্টা ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’-এ বক্তৃতা দেন, যেখানে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও জাপান দু’টি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে, যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশের মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং জাপানে তাদের কর্মসংস্থান সহজতর করা, কারণ জাপানে শ্রমিক সংকট বিদ্যমান। এই চুক্তিগুলো টোকিওর হিরাকাওচো চিয়োদা সিটিতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত মানবসম্পদ সেমিনারে স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন- প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে জাপানি কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১ লাখ কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান, যা দেশটির ক্রমবর্ধমান শ্রম সংকট মোকাবেলায় সহায়ক হবে। একই দিন প্রধান উপদেষ্টা ৩০তম নিক্কেই ফোরাম: ‘ফিউচার অব এশিয়া’-তে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। নিক্কেই ফোরামের পাশাপাশি অধ্যাপক ইউনূস মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে সমর্থনের আহ্বান জানান। তাছাড়া, শুক্রবার সোকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ইউনূসকে সামাজিক উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।
ওদিকে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে দেশের ভেতরে ও বাইরে আরেকটি যুদ্ধাবস্থা তৈরি হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “এখান থেকে রক্ষা পেতে হবে। এটা তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। বিভাজন থেকে আমাদেরকে মুক্তি পেতেই হবে।”
এছাড়া, দেশে হঠাৎ তৈরি হওয়া অশান্ত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে গত ২৫শে মে রোববার দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার ‘পদত্যাগ ভাবনার’ বিষয়টিও সামনে আসার পর গত ২৪শে মে শনিবার রাতে ড. ইউনূস বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। বৈঠকে নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার নিয়ে তিন দলই নিজেদের আগের অবস্থান তুলে ধরেন।
আবার রোববার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আরও ২০ দলের নেতাদের সঙ্গে দুই দফায় বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা- যা রাত নাগাদ শেষ হয়। বৈঠক শেষে যমুনার সামনে প্রেস সচিব বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তুলে ধরতে সাংবাদিকদের সামনে আসেন।
এতে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করা নিয়ে বিএনপির দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, “উনি (প্রধান উপদেষ্টা) এক কথার মানুষ। আমি কালও (শনিবার) বলেছি, আজও বলছি উনি এক কথার মানুষ। তিনি বারবার বলেছেন, ‘ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। জুলাইয়ের এক তারিখ পার হবে না’।”
তাছাড়া, রোডম্যাপের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, “যখন সময় আসবে, তিনি (মুহাম্মদ ইউনূস) রোডম্যাপ বা সিডিউল ঘোষণা করবেন।” সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারলে প্রধান উপদেষ্টা অপরাধবোধে ভুগবেন বলেও বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের বলেছেন বলে তুলে ধরেন শফিকুল।
প্রেস সচিব বলেন, স্যার (ইউনূস) তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, আমরা বড় যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আছি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পরে অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য যতভাবে সম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে। এখান থেকে আমাদের রক্ষা পেতে হবে। তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। বিভাজন থেকে আমাদের মুক্তি পেতেই হবে। ঐকমত্য থাকতে হবে। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে আমরা যতটুকু দাঁড়াতে পেরেছি, সেটা যেন সামনে এগোয়। সবাই একসঙ্গে আছেন আমি সাহস পাচ্ছি। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারলে আমি অপরাধবোধ করব।
প্রেস সচিব বলেন, অভ্যুত্থানের কারণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশকে টেনে তোলার এ মহাসুযোগ কাজে লাগানোর কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। দলগুলোর নেতারা তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। সংস্কার, শুরু হওয়া বিচার কার্যক্রম এবং নির্বাচনের জন্য যে কাজ চলছে, সেটির প্রতি তারা পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্তর্র্বতী সরকারের পাশে থাকবেন। এটাই ছিল মূল বার্তা।
আবার রাজনৈতিক দলসমূহের সাপোর্টের পর দেশজুড়ে যে একটা শঙ্কা বিরাজ করছিল- প্রফেসর ইউনূস থাকছেন কি থাকছেন না! তাহলে কী আওয়ামী লীগ আবারও ফিরবে? দেশে কী আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়াদের সঙ্গে রক্তয়ী সংঘর্ষ শুরু হবে? এমন শঙ্কায় বহু মানুষ নিশি জেগেছেন। দুশ্চিন্তায় অনেকেই মুষড়ে যান। শেষ পর্যন্ত ওই অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করেন তারা- প্রফেসর ইউনূস পদত্যাগ করছেন না এ খবর প্রাপ্তির পর। একই সঙ্গে কেটে গেছে অনেক কালোমেঘও। সেনা সদর থেকে ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, সরকার ও সেনাবাহিনী একে অপরের বিপরীতে দাঁড়ায়নি বরং একসঙ্গে কাজ করছে। ২৬শে মে সোমবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়েছে সেনা সদর। ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে অনুষ্ঠিত এই ব্রিফিংয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা এবং সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়, এমন কোনো কাজে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।’ করিডর নিয়ে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ‘এটা আমাদের দেশ। এ দেশের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ও ভালো মন্দের সঙ্গে আমরা সবাই জড়িত। এ দেশকে ভালো রাখতে হলে আমাদেরকেই রাখতে হবে।’
ব্রিগেডিয়ার নাজিম বলেন, ‘সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে, ওতপ্রোতভাবে একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে। আমরা প্রতিনিয়তই সরকারের সঙ্গে কাজ করছি, সরকারের নির্দেশনা মেনেই কাজ করছি। দেশ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা কথা বলতেই পারে। এটা নিয়ে আমরা যেভাবে চিন্তা করছি যে সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিশাল মতপার্থক্য হয়েছে, বিভেদ রয়েছে, মিডিয়াতে বিষয়টি যেভাবে আসছে- এ রকম আসলেই কিছু হয়নি। সরকার ও সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে একে অপরের সহযোগিতায় কাজ করছে। এটা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই।’
এরপর সচিবালয়ে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের মধ্যে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি নিয়ে আরেক দফা জটিলতার ক্ষেত্রে সেটাও কদিন অশান্তভাবে চলার পর এখন কন্ট্রোলে নিয়ে নিয়েছেন অন্তর্র্বতী সরকার। আন্দোলন স্থগিত করে আলোচনার টেবিলে চলে এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিরা। যার অর্থ সেখানেও ফিরেছে শান্ত পরিবেশ। এরবাইরেও ছোটখাট যে সকল সমস্যা যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্য হত্যাকান্ড, মেয়র হিসেবে ইশরাকের শপথ নেয়ার বিষয়, বিভিন্ন সেক্টরে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন সেটা সরকারের পক্ষে শক্ত হাতে দমন ও সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব। তাছাড়া বন্দর, মানবিক কোরিডোর নিয়েও যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল সরকার সেগুলোও দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হয় এমন কিছুতে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। ফলে এ সমস্যারও আপাতত সমাধান। সব মিলিয়ে গত কয়েকদিন বাংলাদেশ জুড়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও নানা বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশিত হয়। সেসবের অবসান। সেগুলোও বর্তমান পরিস্থিতিতে হালে পানি পাচ্ছে না।
অতঃপর, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সব মিলিয়ে জুলাই সনদ করব এটাই আমাদের লক্ষ্য। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্ব শেষে গত ২রা জুন (সোমবার) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিতে বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে যায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদল। বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি সারা দিনে যত মিটিং করি, যত মিটিং করে এসেছি, তখন সবচাইতে আনন্দ পাই যখন এরকম বসার সুযোগ পাই। এখানে সবাই মিলে বাংলাদেশের প্রকৃত ভবিষ্যৎ রচনা করা হচ্ছে। এটা আমাকে শিহরণ জাগায় যে, সেই রকম কাজে আমি যুক্ত হতে পেরেছি।
তিনি বলেন, সংস্কার করার জন্য আমার ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কোথায় থেকে শুরু করব। প্রথমে নানা আলাপের মাধ্যমে ঠিক হলো যে, আমরা কয়েকটি কমিশন করে দেব। তারা ভেতরে গিয়ে প্রকৃত জিনিসটা তৈরি করবে। আমরা কমিশন গঠন করলাম। দ্রæত গতিতে কাজ করার জন্য তাদেরকে ৯০ দিন আমরা সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। আমরা খুব আনন্দিত তারা করতে পেরেছে। কয়েকটা কমিশন বেশি সময় হয়েছে তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
‘কমিশন থেকে রিপোর্ট আসলো, তারপর আমরা ঐকমত্য গঠন করতে চাচ্ছি- এটা কীভাবে হবে, সেখান থেকে একটা আইডিয়া আসলো যে আলাদা একটা ঐকমত্য কমিশনের কথা। সেটা ফলপ্রসূ হয়েছে। আলী রীয়াজ সাহেব যখনই আমার সঙ্গে বৈঠক করেন তখন খুব আনন্দিত হই।’
দ্বিতীয় পর্বে কী হবে তা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অনেকগুলো বিষয় কাছাকাছি এসে গেছে। আরেকটু হলে আমাদের তালিকায় আরেকটি সুপারিশ যুক্ত হবে, সেটা হচ্ছে ঐকমত্যের সুপারিশ। সেই সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। আমাদের জুলাই সনদের যতগুলো বিষয় আছে- তাতে যদি আরও কিছু যুক্ত করতে পারি, দেখতে সুন্দর লাগবে। জাতীয় একটা সনদ হলো। অনেকগুলো বিষয়ে আমরা এক হতে পেরেছি। জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত হতে পারি। আমরা বিভক্তিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে রাজনীতি সৃষ্টি করেনি। আমরা চেষ্টা করেছি দেশের উন্নতির জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য এবং সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্যই।