শুক্রবার, ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে মা-মেয়ে হত্যা: পুলিশ সুপার কুমিল্লায় নিজ বাসায় মাসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হত্যার রহস্য উদঘাটন!

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে মা-মেয়ে হত্যা: পুলিশ সুপার  কুমিল্লায় নিজ বাসায় মাসহ বিশ্ববিদ্যালয়  শিক্ষার্থী হত্যার রহস্য উদঘাটন!
২০ Views

নিজস্ব প্রতিনিধি\ নিজ বাসা থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী সুমাইয়া ও তার মা হত্যার মূল আসামি মো. মোবারক হোসেনকে (২৯) গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত সোমবার (৮ই সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকায় পালিয়ে যাবার সময় কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরদিন মঙ্গলবার (৯ই সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তার মোবারক হোসেন জেলার দেবিদ্বার উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের মৃত. আবদুল জলিলের ছেলে।

পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, ঝাড়-ফুঁক করার সুবাদে মোবারক হোসেন তাদের বাসায় যাতায়াত করতেন। গত রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী সুমাইয়ার বাসায় প্রবেশ করেন মোবারক। এক পর্যায়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে তার মা বাধা দেন। এতে মোবারক ক্ষুব্ধ হয়ে মা তাহমিনা বেগমকে অন্য একটি রুমে নিয়ে বালিশ চাপায় হত্যা করা হয়।

এরপর সুমাইয়াকে তার রুমে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় সুমাইয়া প্রতিরোধ করলে তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। হত্যার পর মোবারক সুমাইয়াদের ঘর থেকে ৪টি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে দ্রæত পালিয়ে যায়।

ধর্ষণ হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধর্ষধ হয়েছে কিনা বিষয়টি ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এর আগে গত রোববার (৭ই সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে ৩নং ওয়ার্ডের কালিয়াজুড়ি পিটিআই মাঠ সংলগ্ন নেলী কর্টেজ ভবনের দ্বিতীয়তলা থেকে মরদেহ দু’টি উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহতরা হলেন- কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকার বাসিন্দা ও কুমিল্লা আদালতের সাবেক হিসাবরক্ষক মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী তাহমিনা বেগম (৪৫) এবং তার মেয়ে সুমাইয়া আরফিন (২৩)।

সুমাইয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তারা গত ৫ বছর ধরে কালিয়াজুড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন।

এদিকে এ ঘটনার বিচার দাবি করে দুপুর ১২টা থেকে নগরীতে এবং পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন কুবি শিক্ষার্থীরা। ২ ঘণ্টা পর পুলিশ সুপারের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি শেষ করেন।

বাড়ির মালিক আনিসুল ইসলাম রানা জানান, প্রায় চার বছর আগে কুমিল্লা আদালতের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বাড়িটি ভাড়া নেন। গত বছর তার মৃত্যুর পর স্ত্রী তাহমিনা আক্তার, মেয়ে সুমাইয়া এবং ২ ছেলে নিয়ে বাড়িটিতে অবস্থান করছেন। তারা কারও সঙ্গে তেমন কথা বলতেন না।                গত রোববার রাত ১১টার দিকে তার ২ ছেলে ফয়সাল ও আল-আমীন ঢাকা থেকে বাসায় ফিরে ঘরের দরজা খোলা দেখতে পায়। ঘরে প্রবেশ করে দেখেন মা ও বোন ঘুমিয়ে আছেন। দীর্ঘ সময় পরও সাড়াশব্দ না পেয়ে জাগাতে গিয়ে দেখেন তারা নড়ছেন না। পরে ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ এসে মরদেহ দু’টি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম জানান, মরদেহ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে তাদের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি হত্যাকান্ড। শ্বাসরোধে তাদের হত্যা করা হতে পারে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বিষয়টি নিশ্চিতভাবে বলা যাবে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

Share This