নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রশাসনের ১২ কর্মকর্তার পদ শূন্যঃ ভোগান্তিতে সেবা প্রার্থীরা


নিজস্ব প্রতিনিধি\ নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিভাগের ১২ জন কর্মকর্তার পদ শূণ্য থাকায় বিভিন্ন বিভাগের সেবাপ্রার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তার পদ শূণ্য থাকায় পাশ্ববর্তী উপজেলার বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা সপ্তাহে দু’দিন এসে নাঙ্গলকোটে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। যার ফলে বিভিন্ন বিভাগের সেবা প্রার্থীদের তাদের সেবার জন্য সপ্তাহে দু’দিন অপেক্ষা করতে হয়।
বিশেষ করে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর পদ বছরের পর বছর শূণ্য থাকায় সেবা প্রার্থীদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে নিয়মিত কর্মকর্তা না থাকায় উপজেলা প্রশাসনের ২৩টি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন বিল-ভাউচার পাস করতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের অফিস সহকারিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তার পদ শূণ্য থাকায় ওই বিভাগগুলোর কর্মচারীরা নিজেদের খেয়ালখুশিমত কাজ করেন। এতে করে বিভিন্ন বিভাগের কাজকর্মেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার নিয়মিত পদটি ২০২১ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর থেকে শূণ্য রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ২/৩মাসের জন্য নিয়মিত কর্মকর্তা প্রদায়ন করলেও অধিকাংশ সময়ে পাশ্ববর্তী উপজেলার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তারা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সপ্তাহে দু’দিন নাঙ্গলকোটে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে সদর দক্ষিণ উপজেলার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শিমুল কান্তি সরকার সপ্তাহে দু’দিন এসে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৬ সালের ১২ই এপ্রিল থেকে উপজেলা প্রকৌশলী পদে অতিরিক্ত দায়িত্বে পালন করছেন বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। মাঝে ২০১৯ সালের ১৪ই অক্টোবর থেকে একই বছরের ৩০শে অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ১৭ দিন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে উজ্জ্বল চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন। আবার ২০১৯ সালের ৩১শে অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ১০ই জুলাই পর্যন্ত আবদুল্লাহ আল মামুন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালে ১১ই জুলাই থেকে এখনো পর্যন্ত অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অহিদুল ইসলাম সিকদার উপজেলা প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, গত ৭ই মার্চ থেকে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার পদ শূণ্য রয়েছে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহিদুর রহমান সপ্তাহে দু’দিন নাঙ্গলকোটে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৪ সালের ১৭ই অক্টোবর থেকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পদ শূণ্য রয়েছে। সদর দক্ষিণ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ এরশাদুল আলম সপ্তাহে দু’দিন নাঙ্গলকোটে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
সর্বশেষ গত ২৪শে এপ্রিল থেকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার পদটি শূণ্য হয় । লাকসাম উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শওকত আলী সপ্তাহে দু’দিন নাঙ্গলকোটে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর থেকে উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার পদটি শূণ্য রয়েছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেনারী সার্জনের পদটি দীর্ঘদিনে থেকে শূণ্য রয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারি মৎস্য কর্মকর্তার পদটিও শূণ্য রয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ কর্তকর্তার ১টি পদ, সহকারি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তার পদ শূণ্যসহ উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের ১৭টি পদ শূণ্য রয়েছে। উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের বায়রা গ্রামের আলী আশ্রাফ তার বয়স্ক ভাতার সমস্যা নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আসলেও নিয়মিত কর্মকর্তা না থাকায় তার সমস্যা সমাধানে তাকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একটি বিভাগের একজন প্রধান সহকারি বলেন, গত ৬/৭ বছর থেকে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার পদ শূণ্য থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভাতাসহ বিভিন্ন বিল পাস করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-আমিন সরকার এ বিষয়ে বলেন, কর্মকর্তাদের শূণ্য পদ পূরণে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। বিভিন্ন বিভাগ থেকে নিয়মিত কর্মকর্তা দিবে বলে আশাবাদ করছে। শূণ্যপদগুলো পুরন হলে জনগনের ভোগান্তি কমে যাবে।