নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবাধে চলছে পলিথিনের ব্যবহার
ষ্টাফ রিপোর্টার\ সারাদেশে গত ১লা নভেম্বর থেকে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে সরকার নিষেধাজ্ঞা দিলেও ক্রেতা বিক্রেতা কেউ তা মানছে না। তারা বলছেন, পলিথিনের বিকল্প সামগ্রী সহজলভ্য না হওয়ায় হঠাৎ করেই এ নিয়ম মানা যাচ্ছে না। এ ছাড়া অনেক দোকানে পলিথিনের বিকল্প পাটের বা কাপড়ের ব্যাগও পাওয়া যাচ্ছে না। এখনো নিষিদ্ধ পলিথিন ও পলিথিন জাতীয় ব্যাগ অবাধে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এমন অবস্থায় ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সরকার বার্তা দিতে চাইছে যে এবার পলিথিন বন্ধে আর ছাড় দেয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে যদি দ্রæত পলিথিনের বিকল্প তৈরি করা যায় তাহলে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ বন্ধ করা সহজ হবে। আর বাজারে পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।
অন্তর্র্বতী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গত ৯ই সেপ্টেম্বর জানিয়েছিলেন, ১লা অক্টোবর থেকে সুপারশপে কোনো পলিথিন বা পলিপ্রপাইলিনের ব্যাগ ব্যবহার করা যাবে না। বিকল্প হিসেবে কাগজ, পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ক্রেতাদের দিতে হবে। সুপারশপগুলো সরকারের ওই নির্দেশনা মেনে চলছে। একই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ১লা নভেম্বর থেকে খুচরা বাজারেও এসব ব্যাগ ব্যবহার নিষেধ। সেই ঘোষণা অনুযায়ী খুচরা বাজারে পলিথিন ব্যাগ বন্ধের চেষ্টা করছে সরকার। তবে এই নির্দেশনা সুপারশপে কার্যকর হলেও ঘোষণার প্রথম দিন স্বাভাবিক সময়ের মতোই বিক্রি হচ্ছে পলিথিন। অনেকে দোকানে লুকিয়ে রেখেছেন, কেউবা আবার প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন। ছোট, বড় বা মাঝারি দোকানের অনেকেই পলিথিন নিষিদ্ধের বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না।
বেশির ভাগ দোকানের সামনেই আগের মতো বিভিন্ন ‘স্যাম্পল’ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলো দেখে গোডাউন থেকে বেশি পরিমাণ পলিথিন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দোকানিরা। এক বিক্রেতা বলেন, এটাই তো আমাদের ব্যবসা, আমরা কী করব? যেসব মাল স্টকে আছে সেগুলো তো আগে শেষ করতে হবে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।
পাইকারি ও খুচরা বাজারে দেখা যায়, সবাই পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিনের (টিস্যু ব্যাগ হিসেবে পরিচিত) ব্যাগ বিক্রি করছেন। এই বাজারের ফল বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, সরকার যদি পলিথিন বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমরাও কাগজের ঠোঙা দিয়ে বিক্রি করতে পারব। এখনো পাইকারি পলিথিন বিক্রি হচ্ছে। মেইন কথা হচ্ছে, কারখানায় পলিথিন তৈরি বন্ধ না করতে পারলে এটা বাজারে এসে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা যাবে না। একজন পাইকারি বিক্রেতা জানান, প্রতিদিন তাঁর এখান থেকেই ৭০-৮০ কেজি পলিথিন বিক্রি হয়। এসব নেন হোটেল মালিক, হাসপাতাল ও খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা। ছোট হাসপাতাল থেকে শুরু করে বড় হাসপাতালের ক্যান্টিন থেকেও পলিথিন প্যাক দিয়ে রোগীদের সুপ ও হালকা খাবার সরবরাহ করে।
কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা একজন বলেন, ‘সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এটা কতটুকু কার্যকর হবে সেই প্রশ্ন এসে যায়। এর আগে অনেক সরকার পলিথিন বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু আবারও পলিথিন বাজারে এসে গেছে। কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ না করলে আবারও পলিথিন ফিরে আসবে। এ ক্ষেত্রে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।
পলিথিনের শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের গঠিত কমিটি গত শুক্রবার বাজার মনিটরিং করেছে। এদিন বিভিন্ন সুপারশপে তারা মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। মনিটরিং কমিটির সদস্যরা বাজার করতে আসা মানুষকে পলিথিন ব্যবহার না করে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে দোকানিদের পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা দেয়া হয়। পরবর্তী অভিযানে পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়।
এ বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয় গঠিত মনিটরিং টিমের আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণ) তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, পরিবেশ রক্ষায় ৩রা নভেম্বর থেকে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।