বুধবার, ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পবিত্র ঈদুল ফিতর সম্পাদকীয়

৩২ Views

            পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলিম উম্মাহর দু’টি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদুল ফিতর একটি। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক ঘোষিত পুরস্কারের প্রত্যাশায় এই ঈদ অনেক বেশি মহিমান্বিত ও আনন্দঘন। সিয়াম সাধনার পাশাপাশি জাকাত ও ফিতরা আদায় শেষে পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত হয়ে অনাবিল আনন্দ লাভ এই ঈদের বিশেষ সওগাত। পবিত্র কোরআন নাজিলের এই মাসে রোজা পালন, তারাবি নামাজসহ অতিরিক্ত ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের প্রয়াস, প্রতিটি ফরজ ও নফল ইবাদতের অতিরিক্ত ফজিলত এবং হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ লাইলাতুল কদরে গোনাহ মাফের অনন্য সুযোগ ইত্যাদি অভিব্যঞ্জনায় রোজা এবং ঈদুল ফিতর ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ও আধ্যাত্মিক সুষমামন্ডিত।

            ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেছে এবং এখনো ফিরছে। প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করা আমাদের দেশে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। সারাবছর দেখা না হলেও অন্তত ঈদ উপলক্ষে অনেকের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সময় কাটানো যায়। এক পারিবারিক ও সামাজিক মেলবন্ধনের সৃষ্টি হয়। এ এক অপূর্ব সম্মিলনের সময়। অন্য যে কোনো আনন্দ-উৎসব ও ঈদের আনন্দ-উৎসবের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কেবল আনন্দ-উল্লাস নয়; ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ, ক্ষমা ও সন্তুষ্টিলাভ এবং মানব কল্যাণের সুযোগ রয়েছে এর মধ্যে। কঠোর সিয়াম সাধনা, সংযম, দান-খয়রাত, পরার্থপরতা, ত্যাগ ও সার্বজনীন কল্যাণে আত্মনিবেদনের সমন্বয়ে ঈদ-উৎসব অনেক বেশি বাস্তবিক শুভময়তা এবং পারলৌকিক মুক্তির প্রত্যাশায় ঋদ্ধ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন: ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন, আসমানী তাকিদ। আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন হাত মিলাও হাতে। দে যাকাত মুর্দা-মুসলিমের আজ ভাঙ্গাইতে নিদ।’ ঈদের এই সার্বজনীন ও পারলৌকিক কল্যাণ, সাম্য-সৌহাদ্র্যের বার্তা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়ে ও কর্মে যথার্থভাবে প্রতিফলিত হলেই ঈদের অন্তর্নিহিত আহবান সফল ও সার্থক হবে। মুসলমানদের মধ্যে ধনী-দরিদ্র, অবস্থানগত পার্থক্য ও উঁচু-নিচু ভেদাভেদের কোনো সুযোগ নেই। ঈদের নামাজে সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে শামিল হয় মুসলমানেরা। ঈদ আমাদের দেশে বরাবরই ব্যাপক আয়োজন, উদ্দীপনা ও উৎসবমুখরতার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। আর্থ-সামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে সকল মানুষই তাদের সাধ্যানুযায়ী ঈদ-উৎসবে অংশগ্রহণ করে। প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে বিপুল সংখ্যক মানুষ শহর ও কর্মস্থল থেকে গ্রামে আপন ঠিকানায় ফেরে। এ সময় সড়ক-মহাসড়কে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। মাইলের পর মাইল যানজটে পড়ে মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, বিপুল সংখ্যক মানুষকে ঘরে পৌঁছে দেয়া এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। সহজ কোনো কাজ নয়। এর মধ্যে সড়ক-মহাসড়কের নানা সমস্যা থাকে। তবে এবার পরিস্থিতি অনেকটাই স্বস্তিকর বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আগের মতো সড়ক-মহাসড়কে যানজট খুব একটা নেই। এবার ঈদ-যাত্রায় দেশে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা করা হলেও এখনো তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। যানবাহন অনেকটা স্বাভাবিক গতিতেই চলছে। এটা স্বস্তিদায়ক বিষয়। ঘরে ফেরার পথটি যেমন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে, ঈদ শেষে কর্মস্থলমুখী হওয়ার পথটিও মসৃণ হওয়া সকলের কাম্য। ঈদের এ সময়টাতে ছিনতাইকারীসহ অন্যান্য অপরাধী বেপরোয়া হয়ে উঠে। অনেক মানুষ বাসাবাড়ি ছেড়ে গ্রামে ঈদ করতে যায়। ফলে এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অধিক সতর্ক থাকা আবশ্যক। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ঈদের ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অভাব, দারিদ্র্য ও উচ্চমূল্যস্ফীতি ইত্যাদি কারণে এবার ঈদ-উৎসব পালন সাধারণ, নিম্ন আয়ের, এমনকি মধ্যবিত্তের পক্ষেও কঠিন হয়ে পড়েছে। অভাব ও বেকারত্বজনিত আত্মহত্যায় প্রমাণ করে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদে পাশে দাঁড়ানো ইসলামের শিক্ষা। মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরের শিক্ষাও তাই। মানুষের মধ্যে ইসলামের অহিংসা, ক্ষমা, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা জাগরিত হোক। সকল দুর্বিপাক, কষ্ট ও যাতনার অবসান হোক, সবার মধ্যে প্রকৃত ধর্মবোধ ও মূল্যবোধ, প্রীতি, সহানুভূতি সংহত হোক, পবিত্র ঈদ উপলক্ষে এটাই আমাদের আন্তরিক কামনা। ঈদ আনন্দময় হোক, এই প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গে আমরা লাকসামবার্তার সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, হকার, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

Share This