বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা মুমিনের দায়িত্ব

১৩ Views

            মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী॥ ইসলাম পবিত্র ধর্ম। পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ। পবিত্র আল কোরআনের সামগ্রিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আল্লাহতায়ালা যেসব উদাহরণ দেখিয়ে মানুষকে ইমান আনার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন, উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং আল্লাহর আয়াত বা নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হলো প্রকৃতি ও পরিবেশের উপাদান। সুরা মুলকে একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা  বলেছেন, ‘খুঁটিহীন আকাশ আমি ঝুলিয়ে রেখেছি, পাখিকে বাতাসে ভাসিয়ে রেখেছি। এসব নিদর্শন দেখার পরও কি অবিশ্বাসীরা ইমান আনবে না?’ সুরা তারিকে আল্লাহতায়ালা কাফেরদের একটি জটিল প্রশ্নের খুব সহজ উত্তর দিতে গিয়ে পরিবেশের উদাহরণ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জমিন যেমন চৌচির হয়ে ফেটে যাওয়ার পর আবার বৃষ্টির ছোঁয়ায় সজীব হয়ে ওঠে, তেমনি মানুষও মরে যাওয়ার পর তাকে আবার জীবিত করে তোলা হবে।’

            পরিবেশ প্রকৃতির ভারাসাম্য রক্ষার বিষয় উল্লেখ করে সুরা কাফে আল্লাহ বলেন, ‘আমি জমিনকে  বিস্তীর্ণ করেছি এবং তার ওপর পাহাড় গেড়ে দিয়েছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি নয়নাভিরাম সব উদ্ভিদরাজি।’ সুরা নাহলে মহান আল্লাহতায়ালা  বলেছেন, ‘আমি পৃথিবীর ওপর পাহাড়কে পেরেকের মতো গেড়ে দিয়েছি, যাতে এটা তোমাদের নিয়ে নড়ে না ওঠে।’                আল কোরআনের পাতায় প্রকৃতি-পরিবেশের এমন উদাহরণ অনেক আলোচনা রয়েছে। ইসলাম পরিবেশ-সংরক্ষণ এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশের প্রতি সবিশেষ জোর দিয়েছে। সুনান গ্রন্থগুলো পরিবেশ সুন্দর রাখা, প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে অসংখ্য হাদিস এসেছে। এক হাদিস শরিফে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বসতঘর থেকে দূরে টয়লেট বানাও। এতে করে রোগজীবাণু ছড়াতে পারবে না।’ আরেক হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ছায়াদার-ফলদার গাছের নিচে প্রস্রাব-পায়খানা করো না। এতে করে পথচারীদের কষ্ট হবে, মানুষ এসে বিশ্রাম করতে পারবে না।’

            পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ব্যাপারে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন দেখুন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  সাহাবিদের কোনো যুদ্ধে পাঠানোর আগে নসিহত করে বলতেন, ‘বিজিত অঞ্চলের কোনো গাছপালা ধ্বংস করে পরিবেশ নষ্ট করবে না।’ বিনা কারণে গাছের পাতা ছেঁড়ার জন্য একজন সাহাবিকে ক্ষতিরস্কার করেছিলেন প্রিয় নবীজি।

            পরিবেশে যেন রোগজীবাণু না ছড়ায় তাই রসুল উম্মতকে হাঁচি দেওয়ার আগে মুখ ঢাকা শিখিয়েছেন। প্রস্র্রাব-পায়খানা করার পদ্ধতি শিক্ষাদান করেছেন।

            পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। যিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং পবিত্রতা অবলম্বন করে জীবন পরিচালনা করেন আল্লাহতায়ালা তাকে ভালোবাসেন। যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা লাভে সচেষ্টদেরও ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২২)।

            মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতেন তেমনি সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকারও নসিহত করতেন। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আত্তুহুরু শাতরুল ইমান’, অর্থাৎ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্রতা অবলম্বন করা ইমানের অঙ্গ। (মুসলিম, কিতাবুত তাহারাত, বাব ফাজলু ওয়াজু)। অপর আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- হজরত আবু মালিক আশআরি (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘পবিত্রতা ইমানের অর্ধেকস্বরূপ।’ (আল মুজিমুল কাবির, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৮৩)।

            উল্লেখিত হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, একজন মুমিনের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি দৃষ্টি দেয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নিজেকে পরিষ্কার রাখলেই চলবে না বরং চারপাশের পরিবেশকেও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অনেকেই আমরা এমন আছি, যারা নিজের ঘরকে ঠিকই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সচেতন; কিন্তু বাইরের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি দৃষ্টি রাখি না। এটা মোটেও ঠিক নয়। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখাও ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যতটা নিজেদের ঘরকে পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিই। কেননা বাইরের পরিবেশ ময়লা-আবর্জনার কারণে নোংরা হলে পুরো পরিবেশেই এর প্রভাব পড়ে। আর এর ফলে রোগবালাই দেখা দেয়। আজকে ডেঙ্গু যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তার শেষ কোথায় কেবল আল্লাহতায়ালা ভালো জানেন।

            আল কোরআন-সুন্নাহে নির্দেশিত পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়গুলো আমরা জানব এবং আমাদের জীবনে পুরোপুরি মেনে চলব, ইনশা আল্লাহ। তাহলে আমরা সুস্থ ও সুন্দর  জীবনযাপন লাভ করব। মশা-মাছি, ডেঙ্গু, চুলকানি, মহামারি, পানিবাহিত তথা সব অসুখবিসুখ থেকে আমরা সচেতন  থাকব, প্রতিরোধ করার চেষ্টা করব। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে আমল করার তৌফিক দিন। আমিন।

লেখক ঃ মুফাসসিরে কোরআন, আরবি প্রভাষক, আউশপাড়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, লাকসাম, কুমিল্লা

Share This

COMMENTS