প্রধানমন্ত্রী আরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন
ষ্টাফ রিপোর্টার॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন। গত সোমবার সকালে আয়োজিত এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মদিনার পবিত্র মসজিদ-ই-নববীর ইমাম শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-বুয়াইজান উপস্থিত ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে ‘৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন এবং জাতীয় ইমাম সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণ-২০২৩’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানস্থলে প্রধান একটিসহ তিনটি প্যান্ডেল তৈরি করে সারা দেশ থেকে আসা ইমামগণের সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী প্রথমে মদিনার পবিত্র মসজিদ-ই-নববীর ইমামের সঙ্গে অন্য দু’টি প্যান্ডেল পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী এবং পবিত্র মসজিদ-ই-নববীর ইমাম উভয়ই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনুষ্ঠানস্থলে সমবেত ইমামদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ইমাম কাউন্সিলে যোগ দেয়ার জন্য ইমামদের ধন্যবাদ জানান এবং দেশ ও জনগণের মঙ্গল কামনা করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন যে সরকারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে। প্রধানমন্ত্রী দুই পবিত্র মসজিদের হেফাজতকারী সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদকেও ধন্যবাদ জানান।
পরে মূল অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ ইমাম এবং আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানে পীরে তরিক্বত আলহাজ্ব হযরতুল আল্লামা আবদুল বারী জিহাদী নকসবন্দী আল মুজাদ্দেদী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহির উত্তরসূরী লাকসামের কৃতি সন্তান মুফতি এহছানুল হক মুজাদ্দেদী বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ইমাম হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন।
উল্লেখ থাকে যে, নতুন এই ৫০টি মসজিদ উদ্বোধনের পর এ পর্যন্ত সারা দেশে ৫৬৪টির মধ্যে ৩০০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র চালু হচ্ছে। ২০২১ সালের ৭ই ডিসেম্বর প্রথম পর্যায়, চলতি বছরের ১৬ই জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্যায়, ১৬ই মার্চ তৃতীয় পর্যায়, ১৭ই এপ্রিল চতুর্থ পর্যায় এবং ৩০শে জুলাই পঞ্চম পর্যায়ে ৫০টি করে মোট ২৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে।
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর ২০১৪ সালে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির পর সরকার ২০১৭ সালে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পটি গ্রহণ করেছিল।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো ৪৩ শতাংশ জমির ওপর ৩ ক্যাটাগরিতে নির্মিত হচ্ছে। এরমধ্যে জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে চারতলা, উপজেলা পর্যায়ে তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রতিটি মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ওজুর জন্য আলাদা জায়গা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় নামাজ আদায়ের সুবিধা রয়েছে।
এছাড়াও হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র এবং ইসলামি গ্রন্থাগার, অটিজম কর্নার, দাফন কার্যক্রমের ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য সম্মেলন কক্ষ এবং ইসলামিক দাওয়া, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র এবং দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধা রাখা হয়েছে।
মসজিদ-ই-নববীর ইমাম শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-বুয়াইজান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, তরিকত ফাউন্ডেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, মাওলানা ড. মোহাম্মদ কফিলউদ্দিন সরকার সালেহী ও মাওলানা এহসানুল হক আল মোজাদ্দেদী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ধর্ম বিষয়ক সচিব মো. এ হামিদ জমাদ্দার।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে এই ‘৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন’ এবং ‘জাতীয় ইমাম সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণ-২০২৩’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠানে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষ ও ইসলামের জন্য আশীর্বাদ’ মন্তব্য করে বিশিষ্ট ইসলামী বক্তা ছারছিনা দরবারের অন্যতম প্রধান আলেম মাওলানা ড. মুফতি মুহাম্মদ কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন জান্নাতি মানুষ।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর ও আমিনবাগ জামে মসজিদের খতিব মুফতি কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী বলেন, ‘নবী-রাসূল, গাউস-কুতুব, অলি-আউলিয়াদের পথ ধরে আপনি এ বাংলার জমিনে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৫৬৪ মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম একজন স্মরণীয় শাসক হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) এ দেশের মানুষের জন্য এবং ইসলামের জন্য আশীর্বাদ।’ সূত্র: বাসস ও অন্যান্য