প্রবাসী আয় ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে টাকার মান শক্তিশালী, ডলারের দাম কমছে


মাত্র ১১ মাসের অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক প্রবাহ এবং প্রত্যাশিত রপ্তানি আয়ের ফলে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মান উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ দিনে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে। বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যাংকে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২০.৩০ থেকে ১২১.২০ টাকায়, যেখানে গত সপ্তাহের শুরুতে এ হার ছিল ১২২.৮০ থেকে ১২২.৯০ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ৩০.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। আগের অর্থবছরে (২০২৩–২৪) এই পরিমাণ ছিল ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলার—বৃদ্ধির হার প্রায় ২৬.৮০ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের (২০২৫–২৬) জুলাই মাসের প্রথম ১২ দিনেই প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন প্রায় ১,০৭১ মিলিয়ন ডলার, যেখানে দৈনিক গড় রেমিট্যান্স এসেছে ৮৯.২৫ মিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ৯৪৮ মিলিয়ন ডলার।
এছাড়া, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ৮.৫৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮.২৮ বিলিয়ন ডলারে, যা দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও টাকার মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর পরও ডলারের দরপতন অব্যাহত রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে টাকার মান শক্তিশালী হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রায় এক বছর আগে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে এবং অর্থনীতি, প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনে সংস্কারমূলক নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে জনগণের আস্থা পুনর্গঠন করা হচ্ছে।”
ডলারের দামের পতনের মূল কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, “বর্তমানে দেশে ডলারের সরবরাহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে, যা বিনিময় হার হ্রাসে প্রধান ভূমিকা রাখছে।”
তিনি আরও জানান, হঠাৎ রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির পেছনে একাধিক ইতিবাচক কারণ রয়েছে। একই সঙ্গে সরকার মূলধনী বাজারে মূল্য কারসাজি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। রপ্তানি আয় ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়াও এ প্রবৃদ্ধিকে বেগ দিয়েছে।
প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি’র ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, যা বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে রাখায় অন্তর্বর্তী সরকারকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপে থাকা দেশের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্বস্তির বার্তা।”