সোমবার, ৩১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, জনবল সংকট ও যন্ত্রপাতির অভাবে  সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে

প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, জনবল সংকট ও যন্ত্রপাতির অভাবে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে

৪১ Views

            নিজস্ব প্রতিনিধি\ চিকিৎসক, মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ও জনবল সংকটে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার গ্রামীন জনপদের ৪ লাখ মানুষকে।

            ৬৫ বছর পূর্বে ১৯৬০ সালে কুমিল্লা -নোয়াখালী মহাসড়কের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট বজরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পরে সোনাইমুড়ী উপজেলা গঠিত হলে হাসপাতালটি সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হিসেবে নামকরণ করা হয়। ২০০৬ সালে হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। তবে জনবল সংকট, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ও বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অভাবে উপজেলাবাসীকে চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারছেনা জনগুরুত্বপুর্ন এ সরকারী প্রতিষ্ঠানটি। হাসপাতালটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও বাড়েনি সেবার মান।

            স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য মতে, হাসপাতালে ১১ জন কনসালটেন্টের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৪ জন। ১৭ জন মেডিকেল অফিসার পদের বিপরীতে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ৪ জন। ২১ জন নার্সের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে ৮ জনকে। ৪ জন মিডওয়াইফের স্থলে কাজ করছেন মাত্র ১ জন। ৩টি নৈশপ্রহরী পদের মধ্যে রয়েছেন একজন। আট জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর স্থলে রয়েছেন ৪ জন মাত্র। এভাবেই সব সেক্ষেত্রে জনবল সংকটসহ নানা সমস্যার আবর্তে জোড়াতালি দিয়ে চলছে এ সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সেবা।

            সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুব্রত জোতদার, শিশু বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম, এনেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ আক্তার হোসেন অভি, সার্জারী বিশেষজ্ঞ সুমনা আফরোজ রয়েছেন। গাইনী বিশেষজ্ঞ সোহানা শিকদার গত ৬ মাস পূর্বে অন্যত্র বলদি হওয়ার পর পদটি শূন্য রয়েছে। এই পদে বিশেষজ্ঞ না থাকায় প্রসূতি সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ১৭ পদের স্থলে ডাঃ রিয়াজুর রহমান রিয়াদ, ডাঃ তাহমিনা আলম, ডাঃ ইফতেখারুল ইসলাম ও ডাঃ সোহরাব হোসেন মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এরমধ্যে ডাঃ সোহরাব হোসেন জেলা সিভিল সার্জন অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মাঝে মাঝে এই হাসপাতালে রোগী দেখেন। উপজেলার ৪ লাখ বাসিন্দার বিপরীতে সার্বক্ষণিক সেবায় রয়েছেন মাত্র ৩ জন মেডিকেল অফিসার।

            হাসপাতালে সীমানা প্রাচীর নেই। ৩ জন নৈশপ্রহরীর স্থলে রয়েছেন একজন। বিভিন্ন সময় চুরি হয়ে যাচ্ছে রোগীদের মূল্যবান জিনিসপত্র। মূল ভবন ও আবাসিক কোয়ার্টারের দরজা, জানালা, গ্রিল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া সন্ধ্যার পরে মাদকসেবী ও বখাটেদের সীমাহীন উৎপাতে অনিরাপদ হয়ে ওঠে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচপিও) ডাঃ ইসরাত জাহান বিষয়টি একাধিকবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপন করলেও পুলিশ প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটে দিনের পর দিন ভয়াবহতার দিকেই এগুচ্ছে।

            সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের উপচে পড়া ভীড় রয়েছে বহির্বিভাগে। রোগীর চাপে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীরা। চিকিৎসক ও নার্স সংকট থাকায় যথাযথ সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন ভর্তি থাকা রোগীরা। পরিচ্ছন্নতা কর্মী সংকট থাকায় হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতেও বেগ পেতে হচ্ছে কর্মীদের। ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বেষ্টিত এ উপজেলার চার লাখ মানুষের সেবা দিতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় মেডিকেল মেশিনারিজ ও বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় স্বাস্থ্য সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

            স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ৮ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে এক্স-রে সেবা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বারে বারে মেরামত করে চালানো হলেও পুরাতন মডেলের এক্স-রে মেশিনটি মেরামত অযোগ্য হয়ে পড়ে রয়েছে। বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ডায়াগনস্টিক ল্যাবের কার্যক্রম বিভিন্ন সময় বন্ধ থাকছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রার্থী রোগীরা। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে বিভিন্ন রোগের পরিক্ষা-নিরিক্ষার কাজ সুষ্ঠভাবে করতে পারছেন না ল্যাব টেকনিশিয়ানরা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই হাসপাতালে নেই জেনারেটর ব্যবস্থা। রাতের বেলায় বিদ্যুৎ চলে গেলে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জুড়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) ডাঃ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, পদের বিপরীতে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী না থাকায় জরুরি ও বহির্বিভাগে সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালটি নোয়াখালী-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন হওয়ায় বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনাজনিত রোগীর চাপ থাকে। সেসময় প্রাথমিক চিকিৎসা দিতেও বেগ পেতে হয়। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েকবার চিঠি চালাচালি করেও এক্ষেত্রে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটেনি।

            উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডাঃ ইসরাত জাহান জানান, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, মেডিকেল অফিসার ও কর্মচারী নেই। গাইনী বিশেষজ্ঞ না থাকায় সিজার বিভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। একজন মিডওয়াইফ দিয়ে ডেলিভারি সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে রোগীদের বাইরের হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। নিরাপত্তার অভাবে আবাসিক কোয়ার্টারে বসবাসকারীরা বাসার বরাদ্দ বাতিল করেছেন। প্রায় সময় রোগীদের মোবাইলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। জেনারেটর না থাকায় লোডশেডিং হলে অনেক সময় বাধ্য হয়ে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখতে হয়।

Share This