ফখরুল-তারেকের যেসব বক্তব্যে ‘একমত’ হাছান মাহমুদ
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশের ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ প্রয়োজন হলে বিএনপির সঙ্গে একযোগে কাজ করার বিষয়ে তার দলের প্রস্তুত। রোববার লন্ডনভিত্তিক ‘চ্যানেল এস’ টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিএনপির সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে একমত।’
অথচ ক্ষমতায় থাকার সময় বিএনপি ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে সংবাদমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই জায়গা করে নেওয়া সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী ওই নেতাদের সাম্প্রতিক বিভিন্ন বক্তব্যের সঙ্গে ‘একমত’ হওয়ার কথা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং সংস্কারের বিষয়ে তারেক রহমান ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্য নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
রোববার লন্ডনভিত্তিক ‘চ্যানেল এস’ টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে অংশ নেন হাছান মাহমুদ।
এক প্রশ্নে হাছান বলেন, ‘বিএনপির অনেক বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত। আমরা এক-এগারোর সরকারের সঙ্গে একযোগেই কিন্তু গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনার জন্য, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলন করেছিলাম এবং গণতন্ত্র ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেব কিংবা বিএনপির মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যে বক্তব্যগুলো দিচ্ছেন, সেগুলোর অনেকগুলোর সঙ্গে আমরা একমত।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিশেষ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার আমরা কারা?’- এই যে প্রশ্ন তুলেছেন, আমি এটির সঙ্গে একমত। এমনকি ছাত্রলীগকে কাগজে নিষিদ্ধ করার পর সেটির বিরুদ্ধেও তারা বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তাদের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত। এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবসহ তাদের শীর্ষ নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা- এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ প্রশ্ন থেকে শুরু করে দেশে যাতে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না হয়, এ ব্যাপারে বিএনপির অবস্থানকেও ‘সাধুবাদ’ জানানোর কথা বলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
হাছান মাহমুদ বলেন, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ হওয়ার পর বিএনপি যে বক্তব্য, সেই বক্তব্যের সঙ্গেও আমরা একমত। একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আমি ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে আমি হামলা করলাম, সেই রাজনৈতিক দলের অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হল-এ নিয়ে সরকারের কোনো বক্তব্য খুঁজে পাচ্ছি না।
দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে হতাশ হওয়ার কথা তুলে ধরে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, কোনো সরকারই কিন্তু শেষ সরকার নয়, মনে রাখতে হবে; আমাদের ক্ষেত্রে আমরাও শেষ সরকার ছিলাম না।
এই সময় উপস্থাপক বলেন, ‘সেটা তো আপনারা মনে রাখেননি ড. হাছান মাহমুদ
তখন সাবেক মন্ত্রী বলেন, অনেকে মনে করেনি। আমি সবসময় মনে রেখেছি। আমি নিজে সবসময় মনে রেখেছি। কিন্তু অনেকে মনে রাখেনি, যেটা সঠিক। কাজে এই সরকারই শেষ সরকার নয়। এটি সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। তারা যে আগের সরকারের মন্ত্রীদের হাতকড়া পড়ালেন, ডিম ছুড়লেন, ভবিষ্যতের যে একটা ভয়ংকর উদাহরণ তৈরি করে গেলেন, ভবিষ্যতে কী ঘটে সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের কোনো নেতা প্রথমবারের মতো সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হলেন। হাছান মাহমুদ সরকারে থাকার সময় বেশ কিছু ভুলের কথাও স্বীকার করেছেন।
সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের কোনো নেতা প্রথমবারের মতো সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হলেন। হাছান মাহমুদ সরকারে থাকার সময় বেশ কিছু ভুলের কথাও স্বীকার করেছেন।
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে হলেও আন্দোলনের মধ্যে শেষ মুহূর্তে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এই প্রসঙ্গে আজকে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে আমি মনে করি, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করলেই নিষিদ্ধ হয়ে যায় না।
সংসদের উচ্চ কক্ষে তারেকের প্রস্তাবে সমর্থন
রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ করার বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটার সঙ্গে ‘ব্যক্তিগতভাবে একমত’ হওয়ার কথা বলেন হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি উচ্চ কক্ষ দরকার। যেভাবে ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে আছে। তার মাধ্যমে বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজকে রাষ্ট্রীয় কাজে যুক্ত করা যাবে। আমাদের দেশে বিরাট একটা বুদ্ধিজীবী সমাজ আছে, বিরাট একটা নাগরিক সমাজ আছে, রাষ্ট্র পরিচালনায় তারা অবদান রাখতে চায়, অবদান রাখতে পারে, কিন্তু তারা ব্যাপকভাবে মনে করে, তাদেরকে সুযোগটা দেওয়া হচ্ছে না এবং আমাদের দেশে যে নির্বাচনি ব্যবস্থা, সেই নির্বাচনি ব্যবস্থায় একজন সাধারণ বুদ্ধিজীবীর পক্ষে নির্বাচিত হয়ে আসা কঠিন। কারণ, রাজনীতিতে যে পরিমাণ সময় দিতে হয় এবং রাজনীতি যে রকম খরুচে হয়ে গেছে, সেখানে তাদের পক্ষে নির্বাচিত হয়ে আসাটা কঠিন।
তিনি বলেন, ইলেকটরাল কলেজের মাধ্যমে যদি এই রকম একটা উচ্চ কক্ষ হয়, তাহলে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণিকে, আমাদের দেশের নাগরিক সমাজকে আমরা সেখানে সম্পৃক্ত করতে পারব।
সেক্ষেত্রে অনেক গুণী লোক রাষ্ট্রীয় কাজে অবদান রাখতে পারবেন। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও বক্তব্য রেখেছেন। তিনিও আপার হাউজের পক্ষে কথা বলেছেন।